ডাকসু নির্বাচন

প্রার্থিতা প্রত্যাহারে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ছাত্রলীগের 'চাপ'

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের বিভিন্ন পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য ‘চাপ’ দিচ্ছে ছাত্রলীগ। শুক্রবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও ডাকসুর ভিপি প্রার্থী রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য প্রার্থীদের চাপ দেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল সংসদে বিভিন্ন পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন এমন তিনজন প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, গতকাল রাতে তাঁদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও হলের নেতারা চাপ সৃষ্টি করেছেন৷ প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে হলে থাকতে তাঁদের সমস্যা হবে, এমন কথা বলে ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তাঁরা৷ আজ শনিবার বেলা একটা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সুযোগ ছিল৷

জানা গেছে, শুক্রবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে নিজের কক্ষে (৩৩২ নম্বর) হল সংসদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া শিক্ষার্থীদের ডেকে পাঠান। দুপুর ১২টার মধ্যে তাঁদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন শোভন৷ এ সময় শোভনের সঙ্গে ওই কক্ষে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রলীগের মুহসীন হল শাখার সভাপতি সরকার জহির রায়হান ও সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সানী, ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে মুহসীন হলে সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী তৌহিদুল হক শিশির ও সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী মেহেদী হাসান মিজান প্রমুখ।

এ বিষয়ে জানতে ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি৷ মুহসীন হল সংসদে ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে ভিপি প্রার্থী তৌহিদুল হক শিশির সাংবাদিকদের বলেন, ‘ছাত্রলীগের যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছে, সংগঠনের স্বার্থে তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য বলা হয়েছে, বাইরের কাউকে বলা হয়নি৷’

গত বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল সংসদের একটি সম্পাদক পদের একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীকে হলের অতিথিকক্ষে ডেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য চাপ দিয়েছেন হল শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা৷ একপর্যায়ে তাঁর কলার চেপে ধরা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন ওই প্রার্থী৷ একই দিন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল সংসদের এক স্বতন্ত্র প্রার্থীকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের জন্য চাপ দেওয়া হয়েছে৷ গতকাল রাতে সলিমুল্লাহ মুসলিম হল সংসদে সংস্কৃতি সম্পাদক পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহবুবুর রহমানকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ একই হলে জিএস পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদ হাসানকেও হল শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হয়রানি করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল সংসদে বামপন্থী দুই জোটের জিএস প্রার্থী শাহাবউদ্দিনকে জোরপূর্বক মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করিয়েছেন হল শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা৷

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী প্রথম আলোকে বলেন, ‘মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় যেহেতু শেষ, সেহেতু এটি আর প্রাসঙ্গিক নয়৷ হল প্রশাসনকে সহায়তা করা হচ্ছে৷ কারও কোনো অভিযোগ থাকলে হল প্রশাসনকে জানাতে হবে৷ সব প্রার্থী প্রচার-প্রচারণার ক্ষেত্রে সমান সুযোগ পাবেন৷’

কোনো প্রার্থী বা ভোটারকে ভয় দেখানোর বিষয়ে ডাকসু নির্বাচনের আচরণবিধির ৯(গ) ধারায় বলা হয়েছে,‘কোনো প্রার্থী বা তাঁর পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা ভোটারকে ভয়ভীতি প্রদর্শন, বলপ্রয়োগ ও ভোটদানে বাধাগ্রস্ত করতে পারবেন না।’ আর আচরণবিধি লঙ্ঘনের শাস্তি হিসেবে আচরণবিধির ১৫(খ) ধারায় সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানা, প্রার্থিতা বাতিল অথবা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার কিংবা রাষ্ট্র বা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী অন্য কোনো দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার কথা বলা হয়েছে৷