প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আদালতে দণ্ডিত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রতি যে মহানুভবতা দেখিয়েছেন, তিনি (খালেদা জিয়া) তা পারতেন কি না, এমন প্রশ্ন রেখেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদ্যাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি (খালেদা জিয়া) আদালতে খালাস পাননি, জামিন পাননি। এরপরও বেগম জিয়াকে কারাগারের বাইরে রাখা হয়েছে। তিনি যখন কারাগারে ছিলেন, তাঁর সঙ্গে তাঁর পছন্দের গৃহপরিচারিকাকে থাকতে দেওয়া হয়েছিল, যেটি উপমহাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। তাঁর প্রতি যে মহানুভবতা প্রধানমন্ত্রী দেখিয়েছেন, আমি ব্যক্তি হিসেবে কখনো সেটি দেখাতে পারতাম না, অন্য কেউ পারত না। খালেদা জিয়া পারতেন কি না, সেই প্রশ্নটা করেন।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সেই ব্যক্তি, যাঁর আমলে তাঁর পুত্রের পরিচালনায় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা হয়েছে এবং এরপর তিনি সংসদে দাঁড়িয়ে হাস্যরস করে বলেছিলেন যে আমাদের নেত্রী নাকি ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে গিয়েছিলেন।’
এ সময় ‘সরকার লুটপাট-নৈরাজ্য চালাচ্ছে’ বলে বিএনপির মহাসচিবের মন্তব্য সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘ফখরুল সাহেবরা দেশে যে কী পরিমাণ নৈরাজ্য বিভিন্ন সময় চালিয়েছেন, সেটি তো দেশের মানুষ ভুলে যায়নি। মানুষের ওপর পেট্রলবোমা নিক্ষেপের রাজনীতি, মানুষকে দিনের পর দিন অবরুদ্ধ করে রাখার রাজনীতি, স্কুলছাত্র, বিশ্ব ইজতেমাফেরত মুসল্লি, মসজিদের মধ্যে মুয়াজ্জিনের ওপর বোমা নিক্ষেপ, ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর হামলা—এগুলো সবই মির্জা ফখরুল সাহেবরাই করেছেন। আমাদের দল সেই রাজনীতির চর্চা করে না।’
এর আগে বক্তৃতায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী হাছান মাহমুদ বলেন, আয়তনের দিক দিয়ে বাংলাদেশের বৃহত্তম এবং অনন্য এ বিশ্ববিদ্যালয় গত ৫৫ বছরের পথচলায় দেশ ও সমাজ গঠন এবং মানবসম্পদ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, সংস্কৃতি ও মুক্তবুদ্ধির চর্চা ও গবেষণায় আরও ভূমিকা রেখে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতি বিশ্বসভায় ছড়িয়ে যাবে।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় শুধু পাঠদান ও সনদ প্রদানের জন্য নয়, সেখানে পাঠদান হবে, ডিগ্রি প্রদান করা হবে, একই সঙ্গে সেখানে জ্ঞানের চর্চা হবে, সংস্কৃতি, মুক্তবুদ্ধি ও মুক্তমতের চর্চা হবে। আমরা একটা জ্ঞান ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আমরা একটি বহুমাত্রিক সমাজে বসবাস করি। জ্ঞানভিত্তিক, ন্যায়ভিত্তিক বহুমাত্রিক সমাজব্যবস্থা ব্যতিরেকে গণতন্ত্র সুসংহত হয় না। যেখানে জ্ঞান ও বিজ্ঞানের চর্চা হয় না, যেখানে নিয়ম ও নীতির ব্যত্যয় ঘটে, যেখানে মুক্তবুদ্ধির চর্চা হয় না, যেখানে মুক্তমতের অবদমন করা হয়, সেখানে সমাজ এগোয় না।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ঘিরে অনেক অম্লমধুর স্মৃতি রয়েছে উল্লেখ করে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘আজ এই জায়গায় এসে কথা বলার ক্ষেত্রে, আমার জীবনকে এই পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু অবদান আছে। প্রগতিশীল ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়ার সময় এই বিশ্ববিদ্যালয় যে সাহস এবং শক্তি আমাকে জুগিয়েছে, পরবর্তী সময়ে রাজনীতির বন্ধুর পথপরিক্রমার ক্ষেত্রে জীবনকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিরীণ আখতারের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য বেনু কুমার দে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবদুল করিম, সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম উপস্থিত ছিলেন। প্রক্টর রবিউল হাসান ভূঁইয়ার পরিচালনায় কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন মোহাম্মদ মহীবুল আজিজ অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।