>• দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে চলচ্চিত্র ও টিভি পর্দার ১৫ জন নায়িকা
• আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৫১০ টি
• একটি আসনের জন্য ফরম কিনেছেন ৩৫ জন
একাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৫১০টি। সে হিসাবে গড়ে একটি আসনের জন্য মনোনয়ন ফরম কিনেছেন ৩৫ জন। ১৫ জানুয়ারি মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু হওয়ার পর থেকে প্রতিদিনই রাজধানীর ধানমন্ডিতে দলের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ভিড় করছেন মনোনয়নপ্রত্যাশী নারীরা।
এবার দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন চলচ্চিত্র ও টিভি পর্দার ১৫ জন নায়িকা। তাঁদের কেউ কেউ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে বঞ্চিত হয়েছেন। তবে নৌকার প্রচারে তাঁরা সরব ছিলেন। নারী সাংসদ হয়ে রাজনীতিতে ভূমিকা রাখতে চান তাঁরা।
আওয়ামী লীগের দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, বিক্রি হওয়া ১ হাজার ৫১০টি ফরমের মধ্যে গতকাল পর্যন্ত জমা পড়েছে ১ হাজার ৪১৫টি।
বাংলাদেশের ৩৫০ আসনের জাতীয় সংসদে ৫০টি আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত। ৩০০ আসনে সরাসরি ভোট হলেও সংরক্ষিত আসন বণ্টন হয় ভোটে জয়ী দলগুলোর আসনসংখ্যার অনুপাতে। এ পদ্ধতিতে এবার আওয়ামী লীগ ৪৩ আসন পেতে পারে।
একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে ৩০০ আসনে সরাসরি নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন ৪ হাজার ২৩ জন। গড়ে প্রতিটি আসনের জন্য ফরম কিনেছিলেন ১৩ জন। সরাসরি আসনের সংখ্যার অনুপাতে সংরক্ষিত নারী আসনে দলটির ফরম বিক্রি হয়েছে বেশি।
জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির কারণেই সবাই ক্ষমতার কাছাকাছি থাকতে চান। সবকিছু পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা, ক্ষমতার সুযোগ-সুবিধা নিতেই আগ্রহ বাড়ছে। তবে যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এবং দেশ পরিচালনায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবেন, তাঁদের সংসদে যাওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
ছুটছেন পর্দার নায়িকারা
মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরুর পর থেকে আওয়ামী লীগের ধানমন্ডির কার্যালয়ে টেলিভিশন-সিনেমা জগতের তারকারা ভিড় জমাচ্ছেন। কর্মী-সমর্থকদের মধ্যেও তারকাদের নিয়ে আগ্রহ রয়েছে। পর্দায় দেখা নায়িকাদের সামনে পেয়ে ছবি তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন অনেকে।
আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, দলটির সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য হতে ষাটের দশকে রুপালি পর্দা কাঁপানো নায়িকাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় আছেন হালের কয়েকজনও। আছেন নব্বই দশকের জনপ্রিয় টিভি নায়িকারাও। ইতিমধ্যেই মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন সুজাতা, সারাহ বেগম কবরী, ফাল্গুনী হামিদ, অঞ্জনা, দিলারা, মৌসুমী, অরুণা বিশ্বাস, রোকেয়া প্রাচী, শমী কায়সার, শাহনূর, অপু বিশ্বাস, তারিন জাহান ও জ্যোতিকা জ্যোতি। অভিনয়ের পাশাপাশি জাতীয় সংসদে কার্যকর অবদান রাখতে চান তাঁরা।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, বিনোদন জগতের জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে তারকাদের মধ্য থেকে কয়েকজন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চেষ্টা-তদবির করেও নৌকায় ঠাঁই হয়নি তাঁদের। তবে দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে নির্বাচনী প্রচারে সক্রিয় ছিলেন তাঁরা। নৌকার প্রার্থীদের পক্ষে ভোট চেয়েছেন তারকারা। তাঁদের মধ্য থেকে এখন নারী সাংসদ হতে চেষ্টা করছেন কেউ কেউ।
সারাহ বেগম কবরী অভিনয় থেকে সরাসরি রাজনীতিতে নাম লেখান ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন থেকে তিনি সাংসদ নির্বাচিত হন। ‘চলচ্চিত্রের মিষ্টি মেয়ে’খ্যাত অভিনেত্রী ও রাজনীতিবিদ কবরী এবার ঢাকা-১৭ থেকে মনোনয়ন চেয়ে পাননি। এখন নারী সাংসদ হতে মনোনয়ন ফরম তুলেছেন কবরী।
দশম সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের জন্য মনোনয়ন চেয়েও পাননি রোকেয়া প্রাচী। এবার ফেনী-৩ আসনের মনোনয়ন চেয়েও হতাশ হতে হয়েছে তাঁকে। এখন নারী সাংসদ হতে ফরম নিয়েছেন বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের এই সাংস্কৃতিক সম্পাদক। তাঁর মতোই ফেনী-৩ আসনে আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন গত শতকের আশি ও নব্বইয়ের দশকের জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী শমী কায়সার। শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লা কায়সারের মেয়ে এবার নেমেছেন নারী সাংসদের দৌড়ে।
ঢাকা-১০ আসন থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন অভিনয়শিল্পী তারিন। মনোনয়ন না পেলেও নারী সাংসদ হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী তিনি। ময়মনসিংহ-৩ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন না পেলেও এবার নারী সাংসদ হতে ছুটছেন জ্যোতিকা জ্যোতি।
শমী কায়সার প্রথম আলোকে বলেন, পারিবারিকভাবেই আওয়ামী রাজনীতির চর্চা করছেন। সংসদে যেতে পারলে বড় পরিসরে কাজ করার সুযোগ পাওয়া যাবে। তাই সাংসদ হতে চান তিনি। বিভিন্ন খাতের মানুষের রাজনীতিতে আসাটাও ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন তিনি।
আরও পড়ুন:
আগাম অভিনন্দন, অগ্রিম সমবেদনা