ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে সাধারণ কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ১৩ জন নারী প্রার্থী। এর মধ্যে কয়েকজন প্রধান দুই দলের সমর্থন পেয়েছিলেন। তবে বিজয়ী হয়েছেন কেবল একজন স্বতন্ত্র নারী প্রার্থী।
এই বিজয়ী নারী প্রার্থী হলেন সাহানা আক্তার। তিনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) ৪৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তাঁর প্রতীক ছিল রেডিও। সাহানা আক্তার শিক্ষানবিশ আইনজীবী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘নারী প্রার্থী হিসেবে প্রচারণার সময় অনেক প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। কিন্তু তরুণ ও নারী ভোটারের কাছ থেকে বেশ সহযোগিতা পেয়েছি। কাজের মাধ্যমে এর প্রতিদান দেওয়ার চেষ্টা করব।’
নির্বাচনে সাহানা আক্তার পেয়েছেন ৩ হাজার ৯৮৬ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী পেয়েছেন ২ হাজার ২৫০ ভোট। সাহানা আক্তার বলেন, তিনি মাদক, চাঁদাবাজি ও জলাবদ্ধতা দূরীকরণে কাজ করবেন।
এই কাউন্সিলরের এক ছেলে ও এক মেয়ে। স্বামী ফ্যাশন টেকনোলজিস্ট। বাবা সাইদুর রহমান দীর্ঘদিন সিটি করপোরেশনের কমিশনার ছিলেন। নবনির্বাচিত এই কাউন্সিলর বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে নানা প্রতিকূলতা দেখে বড় হয়েছি। যেকোনো ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত আছি।’
নারী আন্দোলনকর্মীরা বলছেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, রাজনৈতিক দলগুলোকে ২০২০ সালের মধ্যে ৩৩ শতাংশ পদ নারীদের জন্য রাখার লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। ছোট-বড় কোনো দলই সে শর্ত পূরণ করেনি। রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের নামে নারীদের সংরক্ষিত আসনে রাখার মধ্যেই তাঁদের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখা হয়।
এর আগে ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সাধারণ ওয়ার্ডে নারী প্রার্থী ছিলেন ২৩ জন। কিন্তু তাঁদের কেউই জয়ী হতে পারেননি। ঢাকার দুই সিটিতে ওয়ার্ড বাড়লেও এবার নারী প্রার্থীর সংখ্যা কমেছে।
ঢাকা উত্তরে সাধারণ ওয়ার্ড ৫৪টি আর দক্ষিণে ৭৫টি। এবারের নির্বাচনে সাধারণ ওয়ার্ডে ১৩ জন নারী প্রার্থীর মধ্যে দুজন ছিলেন আওয়ামী লীগ–সমর্থিত। আর বিএনপির সমর্থন নিয়ে লড়েছেন চারজন। তবে দল–সমর্থিত প্রার্থীদের মধ্যে কেউ জয়ী হতে পারেননি।
নাম না প্রকাশের শর্তে দুজন নারী প্রার্থী বলেন, দলীয় মনোনয়ন পেলেও দলের নেতা–কর্মীদের কাছ থেকে তাঁরা সর্বাত্মক সমর্থন পাননি। নারী প্রার্থী হওয়ায় পদে পদে বাধা পেয়েছেন। নিজ দলের নেতা-কর্মীরাও অসহযোগিতা করেছেন। এমনকি ভোটের দিন লাঞ্ছিত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন ঢাকা উত্তর সিটির ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী আলেয়া সারোয়ার (ডেইজী)।
গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, বরাবরের মতো এবারের সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও অর্থবিত্ত ও পেশিশক্তির প্রদর্শন দেখা গেছে। ভোটাররাও খুব একটা কেন্দ্রমুখী হননি। দলীয় সমর্থন ও সহযোগিতার অভাবেই নারী প্রার্থীর অংশগ্রহণ এবং নির্বাচিত হওয়ার হার কম, যা নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য অশনিসংকেত।