বিএনপির ছাত্রসংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হয়েছেন যশোরের ছেলে কাজী রওনাকুল ইসলাম (শ্রাবণ)। দেড় যুগ আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ছাত্রদলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন তিনি। তবে তাঁর পরিবারের সদস্যরা রাজনীতিতে বিএনপির প্রধান প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত। রওনাকুল ইসলামের বাবা ও এক ভাই বর্তমানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিও।
রওনাকুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি যশোরের কেশবপুর উপজেলার চিংড়া গ্রামে। ২০০৩ সালে কেশবপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন তিনি। থাকতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে। কিছুদিনের মধ্যেই ছাত্রদল কর্মী হিসেবে হল ও বিভাগের সহপাঠীদের মধ্যে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন তিনি।
রওনাকুল ইসলামের বাবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মুক্তিযোদ্ধা কাজী রফিকুল ইসলাম। তিনি কেশবপুর উপজেলা চেয়ারম্যান। সর্বশেষ নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সে সময় সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হলেও পরে দল তাঁকে আবার ফিরিয়ে নেয়।
রওনাকুলের বড় ভাই মুস্তাফিজুল ইসলাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ছিলেন। পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সাগরদাঁড়ি ইউনিয়ন থেকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি। বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় তিনি এখন দল থেকে বহিষ্কৃত। আরেক ভাই মোজাহিদুল ইসলাম উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক। আর ছোট ভাই আযাহারুল ইসলাম উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক।
আজ রোববার রওনাকুল ইসলাম ছাত্রদলের সভাপতি হওয়ার খবর প্রকাশ হলে তা কেশবপুরের রাজনৈতিক মহলে প্রধান আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে। এই ঘটনাকে এক পরিবারের মধ্যে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সহাবস্থান হিসেবে দেখছেন অনেকে।
তবে ছেলের এই রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে উচ্ছ্বাস দেখাননি রওনাকুল ইসলামের বাবা কাজী রফিকুল ইসলাম। উপজেলা আওয়ামী লীগের এই সহসভাপতি প্রথম আলোকে বলেন, ছেলেকে তো আর অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। ভিন্ন রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় ছেলের সঙ্গে তাঁদের কোনো সম্পর্ক নেই। ১৩ বছর ধরে সে বাড়িতে আসে না।
ছেলের ছাত্রদল সভাপতি হওয়া নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই বলে জানান রফিকুল ইসলাম। এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য রওনাকুল ইসলামের মুঠোফোনে কল করে তাঁকে পাওয়া যায়নি।
তবে এক পরিবারে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্তদের অবস্থানকে স্বাভাবিক হিসেবে দেখছেন কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী গোলাম মোস্তফা। তিনি প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘এক পরিবারের মধ্যে ভিন্ন মতাদর্শের মানুষ থাকতেই পারে। এটা অস্বাভাবিক নয়।’