পররাষ্ট্রমন্ত্রী পরের রাষ্ট্রের মন্ত্রী, এ দেশের নন: পঙ্কজ ভট্টাচার্য

মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে পঙ্কজ ভট্টাচার্য পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সমালোচনা করেন
ছবি: প্রথম আলো

দুর্গাপূজার মধ্যে দেশে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক সহিংসতা নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন প্রবীণ রাজনীতিক পঙ্কজ ভট্টাচার্য। তিনি বলেছেন, ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী যে ভাষায় কথা বলেছেন তাতে মনে হয়েছে, তিনি পরের রাষ্ট্রের মন্ত্রী। এ দেশের নন।’

বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় গত ২৮ অক্টোবর একটি বিবৃতি দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। বিবৃতিতে তিনি দাবি করেন, দেশে সম্প্রতি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সময় কেউ ধর্ষিত হননি এবং একটি মন্দিরেও অগ্নিসংযোগ কিংবা ধ্বংস করা হয়নি। ধর্মীয় সহিংসতায় এখন পর্যন্ত মাত্র ছয়জন মারা গেছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে চারজন মুসলমান, আর তাঁরা হিন্দুদের বাড়িতে আগুন দেওয়ার চেষ্টার সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন। দুজন হিন্দু মারা যান, তাঁদের মধ্যে একজনের সাধারণ মৃত্যু হয়েছে। অন্যজন ডুবে মারা গেছেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর দেশজুড়ে সংখ্যালঘুদের বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে এবং নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রতিবাদ শুরু হয়। আজ বুধবার বিকেলে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) প্রতিষ্ঠাতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে শামিল হয়ে পঙ্কজ ভট্টাচার্য পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সমালোচনা করেন।

ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একদল লোক ভুল পথে নিয়ে যাচ্ছে। তাঁকে সাম্প্রদায়িকতার পথে নিয়ে যাচ্ছে।

পঙ্কজ ভট্টাচার্য দুর্গাপূজার সময় সাম্প্রদায়িক হামলা প্রসঙ্গে বলেন, প্রধান উৎসবের সময় এমন হামলা ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি আমলে হয়নি। ১৮টি জেলায় ৭২টি মণ্ডপ ধ্বংস করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) ভবন মিলনায়তনে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন জাতীয় কমিটি এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদের সদস্য এম এন লারমা ১৯৮৩ সালের ১০ নভেম্বর দুষ্কৃতকারীদের হাতে নিহত হন।

আজ এম এন লারমার স্মরণসভায় বক্তব্য দেন বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আমিরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে অনলাইনে যুক্ত হয়ে তিনি বলেন, এম এন লারমা গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। তিনি অসম্প্রদায়িক ও বহুত্ববাদী বাংলাদেশ চেয়েছিলেন। সংবিধানে মানুষের ক্ষমতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তাঁর নানা পরামর্শ আমাদের সহযোগিতা করেছে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন। এম এন লারমার জীবনী পাঠ করেন অধ্যাপক খাইরুল ইসলাম চৌধুরী। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস।

অনুষ্ঠানে জেএসএসের সহসভাপতি উষাতন তালুকদার বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি এখন ডিপ ফ্রিজে চলে গেছে। সরকার মনে করছে, পাহাড়িরা বিভক্ত হয়ে গেছে, তাই তাদের কথার কোনো গুরুত্ব নেই। কিন্তু এই চুক্তি বাস্তবায়ন না করলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে যাবে।

মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার স্মরণে দুই মিনিট নিরবতা পালন করা হয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেজবাহ কামাল বলেন, এম এন লারমা একজন রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন। তাঁর সব কর্মকাণ্ড ছিল কর্তৃত্ববাদের বিপক্ষে।

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে বাংলাদেশ হবে সবার—এম এন লারমার এটাই ছিল মূল কামনা।
স্মরণসভায় বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজল দেবনাথ বলেন, ধর্মীয় উন্মাদনা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এই বাংলাদেশে কেউ প্রত্যাশা করেনি।

আজকের অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এম এন লারমার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গঠিত জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক নারীনেত্রী খুশী কবির। বক্তব্য দেন বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর, বেসরকারি সংগঠন এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা প্রমুখ।

আলোচনা সভার আগে বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি এম এন লারমার প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করেন। আলোচনা সভার পর প্রতিবাদী গান ও কবিতা পাঠের আয়োজন করা হয়। গান পরিবেশন করে মাদল, এফ মাইনর শিল্পী গোষ্ঠী।