শূন্য থাকা পাঁচ আসনে উপনির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। মাত্র একটিতে তফসিল হলেও সব কটিতেই দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেছে আওয়ামী লীগ। এতে নৌকা প্রতীক পেতে ফরম নিয়েছেন ১৪১ জন। চারটি আসনের মনোনয়ন–দৌড়ে লড়ছেন ১৩ নারী প্রার্থী। চারটিতেই আছে একাধিক নারী প্রতিদ্বন্দ্বী। ১৩ জনের মধ্যে ৩ জন সাবেক সাংসদের পরিবারের সদস্য।
মনোনয়নপ্রত্যাশী নারী প্রার্থীরা বলছেন, নারী নেতৃত্ব বেড়েছে এবং মাঠের রাজনীতিতে নারীরা অনেক সক্রিয়। তাই সংরক্ষিত আসনের চেয়ে তাঁরা সরাসরি লড়াইয়ে নামতে চান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীর ক্ষমতায়নে অনেক করেছেন। মেয়েরা এখন সব ক্ষেত্রে সমানভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। সাংসদ হওয়ার দৌড়ে সামনে নারীরা আরও আসবেন। এটা খুব ভালো দিক জাতির জন্য। মেয়েরা সততার সঙ্গে কাজ করেন।
ঢাকা-৫ ও ঢাকা-১৮, সিরাজগঞ্জ-১, পাবনা-৪, নওগাঁ-৬ এবং সিরাজগঞ্জ-১ আসন এখন শূন্য। পাবনা-৪ আসনের ভোট গ্রহণ হবে ২৬ সেপ্টেম্বর। ঢাকা-৫ ও নওগাঁ-৬ আসনে ভোট হবে ১৭ অক্টোবর নির্বাচন হবে। বাকি দুটি আসনের নির্বাচন আয়োজনের সময় ৯০ দিন পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ-১ আসন বাদে বাকি চারটিতে একাধিক নারী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। ঢাকা-১৮ আসনে প্রার্থিতার লড়াইয়ে নারী রয়েছেন যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার, মহিলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নাসিমা ফেরদৌসী, মহিলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক রোকেয়া বেগম ও আওয়ামী লীগ কর্মী নাজমা আকতার।
যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার ২০০৯ সালের সংরক্ষিত আসনের নারী সাংসদ ছিলেন। তিনি জানান, স্কুলজীবন থেকে রাজনীতি করছেন। ১৯৮৯ সালে রোকেয়া হল ছাত্রী সংসদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ২০০২ সালে যুব মহিলা লীগ গঠন করার পর থেকেই সংগঠনের দায়িত্বে আছেন। এক–এগারোর পরবর্তী সময়েও পলাতক ছিলেন রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায়।
সরাসরি নির্বাচন করা প্রসঙ্গে নাজমা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, সাহারা খাতুনের মৃত্যুর পর ঢাকায় সরাসরি ভোটে নির্বাচিত কোনো নারী সাংসদ নেই। এ প্রসঙ্গে নাজমা আক্তার বলেন, ‘ঢাকা জেলা ও মহানগরে ২০টি আসন। সাহারা আপা চলে যাওয়ায় একটি আসনেও সরাসরি নির্বাচনে নারী সাংসদ নেই। এই ক্ষেত্রেও আমি মনে করি, নারীর ক্ষমতায়নের এই সময়ে একজন নারীবান্ধব সরকারপ্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী হয়তো বিবেচনা করবেন যে ঢাকায় অন্তত একজন নারী সাংসদ হোক।’
মহিলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নাসিমা ফেরদৌসীও ঢাকা-১৮ আসনের মনোনয়ন চান। দশম জাতীয় নির্বাচনে সংরক্ষিত আসনের সাংসদ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি দক্ষিণখানে থাকি। প্রায় ৪০ বছর ধরে এখানে আমি বাস করি। এ এলাকার মানুষের জন্য কাজও করেছি। সাহারা আপার সঙ্গেও কাজ করেছি দীর্ঘদিন। গ্রেনেড হামলায় আহত হয়েছিলাম। সব মিলিয়েই আমি এখানে প্রার্থী হতে চাই।’
অবসরপ্রাপ্ত সাবেক জেলা জজ ও মহিলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক রোকেয়া বেগমও ঢাকা-১৮ আসনের ব্যাপারে আশাবাদী। শিক্ষার্থী থাকা অবস্থাতেই রাজনীতি করেছেন জানিয়ে রোকেয়া বেগম বলেন, বিচারক হিসেবে অবসর নেওয়ার পর তিনি এখন পুনরায় রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন। দল যাঁকে মনোনয়ন দেয়, তাঁর পক্ষেই কাজ করবেন।
পাবনা-৪ আসনেও তিনজন নারী প্রার্থী হতে চান। তাঁদের মধ্যে প্রয়াত সাংসদ শামসুর রহমান শরীফের স্ত্রী ঈশ্বরদী উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামরুন্নাহার শরীফ এবং বড় মেয়ে পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক মাহজেবিন শিরিন। এ ছাড়া এই পরিবারে আরও অনেক পুরুষ সদস্যও প্রার্থী হতে চান।
মাহজেবিন শিরিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এর আগে দুবার সংরক্ষিত আসনের জন্য প্রার্থী হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এবার সরাসরি নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক। অনেক দিন ধরে পাবনাতে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছি, ভাইস চেয়ারম্যানও ছিলাম। আওয়ামী লীগ অনেক বড় দল। অনেক নেতা–কর্মী তৈরি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী যাঁকে যোগ্য মনে করবেন, তাঁকেই বেছে নেবেন।’ ঈশ্বরদী কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক মহিলাবিষয়ক সম্পাদক মুসলিমা জাহানও এ আসনের সাংসদ হতে মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন।
নওগাঁ-৬ আসনের সাবেক সাংসদ ইসরাফিল আলমের স্ত্রী সুলতানা পারভীনসহ চারজন দলীয় ফরম কিনেছেন। নওগাঁ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক হামিদা বেগম, আত্রাই মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ বেগম ও নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শাহিন মনোয়ারা হক।
সংরক্ষিত আসনের দুবার সাংসদ হয়েছিলেন শাহিন মনোয়ারা হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরাসরি নির্বাচন করতে চেয়েছি এ আসনে অনেক আগেই। আশা করছি আমি পাব। এর আগে যে কাজ করেছি, তা মানুষ ভোলেনি। এখানে আমি পরিচিত মুখ।’ নারী প্রার্থী একাধিক থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনেক নারী এখন প্রতিযোগিতায় এগিয়ে আসছেন। এটা শেখ হাসিনার অবদান। তাঁর সরকার নারীবান্ধব।
ঢাকা-৫ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী হতে চান আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপকমিটির সাবেক সদস্য নেহরিন মোস্তফা ও যুব মহিলা লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাদিরা পারভীন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান মনে করেন, যে আসনে যে প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা বেশি তাঁকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগে অনেক যোগ্য নারী প্রার্থী আছেন। এই পাঁচটি উপনির্বাচনে যেসব নারী প্রার্থী রয়েছেন তাদের ব্যাপারে মনোনয়ন বোর্ড সিদ্ধান্ত হবে। ইতিমধ্যে প্রার্থীদের ব্যাপারে বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। কোনো আসনে যদি কোনো নারী প্রার্থী সবচেয়ে যোগ্য হন তবে তার মনোনয়ন পেতে বাধা থাকবে না।