আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নেত্রীর (আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা) ইচ্ছার বাইরে আসলে কিছু হয় না। নেত্রী দলের সাধারণ সম্পাদক পদে যাঁকেই পছন্দ করেন, আওয়ামী লীগের কর্মী-কাউন্সিলররা তাঁর প্রতি ঝুঁকে পড়েন।
ওবায়দুল কাদের আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সমসাময়িক ইস্যুতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নেত্রীর ইচ্ছার বাইরে আসলে কিছু হয় না। নেত্রী জেনারেল সেক্রেটারি হিসেবে যাকেই চয়েজ করেন, আওয়ামী লীগের কর্মী-কাউন্সিলররা সবাই তার প্রতি ঝুঁকে পড়ে। আরেকবার আমি থাকব কি না, এটা নির্ভর করে নেত্রীর ওপর। তিনি নতুন কিছুও ভাবতে পারেন। নতুন মুখও চাইতে পারেন। তিনি যদি বলেন থাকতে, থাকব। তিনি যদি বলেন দায়িত্বের পরিবর্তন হবে, আমার কোনো আপত্তি নেই।’
আগামী ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আপনিসহ আরও কয়েকজনের নামও আসছে—এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের পার্টির সভাপতি শেখ হাসিনা। আমাদের পার্টিতে বারবার যেটা হয়, দলের কাউন্সিলররা সব সময় নেতৃত্ব নির্বাচনে নেত্রীর মাইন্ড সেটের ওপর সবকিছু ছেড়ে দেয়। জেনারেল সেক্রেটারি পদটি পার্টিপ্রধানের নির্দেশনায় চলে। এখানে প্রার্থী হওয়ার অধিকার সবার আছে।’
দুর্নীতি ও অপকর্ম প্রতিরোধে প্রয়োজনে দলের ভেতরে শুদ্ধি অভিযান চালানো হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেছেন, ‘ছাত্রলীগের বিষয়টা একটি নজিরবিহীন ঘটনা ঘটল, ইতিহাসে যা ঘটেনি। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে বলা হয়েছে রিপোর্ট নেওয়ার জন্য, কোথাও কোনো অপকর্ম হলে যথাযথ তথ্য দিতে। ভবিষ্যতে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রয়োজনে দলের ভেতরে শুদ্ধি অভিযান চালানো হবে। কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে। সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। আমাদের দলের কেউ যদি অন্যায় করে, তাহলে তাকেও ছাড় দেওয়া হবে না। অপকর্ম করলে সবাইকে শাস্তি পেতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে এই প্রথম শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলো। তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং বাধ্যতামূলক পদত্যাগ করানো হয়েছে। বাংলাদেশের অন্য কোনো ছাত্রসংগঠনে এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার নজির নেই।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ভিসির পদত্যাগ কী কারণে, নৈতিক স্খলন। তিনি যদি কোনো অন্যায় করে থাকেন, এখানে যদি তাঁর কোনো অপকর্মে সংশ্লিষ্টতা থাকে, তদন্তে যদি এটা প্রমাণিত হয়, তাহলে অবশ্যই তাঁর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনিও তো আইনের ঊর্ধ্বে নন।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জাবি ভিসির পদত্যাগ দাবির বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, মির্জা ফখরুল তো সবার পদত্যাগ দাবি করছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগও দাবি করেছেন। তিনি নিজেই নিজের পদত্যাগ দাবি করেছেন। তিনি নির্বাচনে জিতেও পদত্যাগ করেছেন। আবার কথা রাখতে পারেননি, ওই শূন্য জায়গায় নিজেই আরেকজনকে মনোনয়ন দিয়ে নির্বাচিত করে সংসদে পাঠিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এই দ্বিচারিতায় তাদের যে ভালো ভালো কথার দাম নেই। তারা নিজেরা বলে একটা, করে আরেকটা। তারা নিজেরাই গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। নিজের দলের যখন গণতন্ত্রের সংকট, তারা দেশের গণতন্ত্র নিয়ে যখন কথা বলে, তখন সাধারণ মানুষ বিষয়টিকে হাস্যকরই মনে করবে।’