চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের বিএনপিদলীয় সাংসদ আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে বিচ্ছিন্নতার অভিযোগ স্থানীয় নেতাদের।
তিনি বিএনপির সাংসদ। কিন্তু দলীয় কার্যক্রমে তাঁর তেমন অংশগ্রহণ নেই। নির্বাচনী এলাকাতেও যান কম। তিন উপজেলায় তিন প্রতিনিধি সাংসদের কার্যক্রম দেখভাল করেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের সাংসদ আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তুলছেন দলের স্থানীয় নেতারা।
আমিনুল ইসলাম বিগত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে হারিয়ে বিজয়ী হন। তিনি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। গত নভেম্বরে জেলা কমিটি ভেঙে দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হলে আমিনুল ইসলাম পদ হারান।
সাংসদবিরোধীদের অভিযোগ, আমিনুল ইসলাম তাঁর ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। নাচোল, গোমস্তাপুর ও ভোলাহাট উপজেলায় দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ নেই বললেই চলে। তিনি সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন।
গোমস্তাপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি বাইরুল ইসলাম বলেন, সাংসদ আমিনুল ইসলাম রাজনৈতিক ব্যক্তি নন। আগামী নির্বাচনে দল মনোনয়ন দিলেও তিনি জয়ী হতে পারবেন না।
অবশ্য আমিনুল ইসলাম দাবি করেন, সাংসদ হওয়ার পর থেকে তিনি প্রতি মাসে দুবার নির্বাচনী এলাকায় যান। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি মানুষের চেহারা দেখার চেয়ে কাজ জরুরি। আমি আমার দায়িত্ব পালন করছি।’
সাংসদ আমিনুল ইসলাম রাজনৈতিক ব্যক্তি নন। আগামী নির্বাচনে দল মনোনয়ন দিলেও তিনি জয়ী হতে পারবেন না।বাইরুল ইসলাম, সাবেক সভাপতি, গোমস্তাপুর উপজেলা বিএনপি
নাচোল, গোমস্তাপুর ও ভোলাহাট উপজেলা নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসন। ভোলাহাট উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক বাবর আলী বিশ্বাস অভিযোগ করেন, ২০১০ সাল থেকে আমিনুল ইসলাম উপজেলা কমিটির সভাপতি ছিলেন। গত নভেম্বর পর্যন্ত এ পদে ছিলেন তিনি। সাংসদ হওয়ার পর উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি আনোয়ারুল ইসলামকে দিয়ে কার্যক্রম চালান। এর বাইরে উপজেলা যুবদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়া দলের কোনো নেতার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নেই।
তবে আনোয়ারুল ইসলামের দাবি, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন বিএনপির নেতা-কর্মীরা আমিনুল ইসলামের সঙ্গে আছেন। কিন্তু কিছু নেতা সুবিধা না পেয়ে তাঁর সমালোচনা করছেন। তিনি কোনো সুবিধা পান কিনা জানতে চাইলে আনোয়ারুল বলেন, সাংসদ যে বরাদ্দ পান তা ইউনিয়ন পর্যায়ে সুষ্ঠুভাবে বণ্টন করা তাঁর কাজ। এতে তাঁর কোনো কর্তৃত্ব নেই।
ভোলাহাটের মতো নাচোল ও গোমস্তাপুরে সাংসদের প্রতিনিধি হয়ে কাজ করেন মোসাদ্দেক হোসেন ও তারেক আহমেদ। মোসাদ্দেক নাচোল পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি। আর তারেক গোমস্তাপুরের সাবেক সাধারণ সম্পাদক।
রহনপুর (গোমস্তাপুরের অধীন) পৌর বিএনপির আহ্বায়ক এনায়েত করিম বলেন, সাংসদের তিন প্রতিনিধি টিআর-কাবিখার তালিকা থেকে শুরু করে সবকিছু করেন। এতে তাঁদের মধ্যে স্বেচ্ছাচারিতা তৈরি হয়েছে। এ কারণে অনেকে সাংসদের ওপর ক্ষুব্ধ।
তারেক আহমেদের ভাষ্য, অনেকে হিংসা থেকে এমন বক্তব্য দেন। তবে তিনি ঠিক করেছেন এসব কার্যক্রম আর দেখভাল করবেন না। কারণ, ‘দুর্নাম হয়’। মোসাদ্দেক হোসেন দাবি করেন, কেউ তাঁর বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলতে পারবে না। কারণ, তিনি দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সব বরাদ্দ বণ্টন করেন। এ বিষয়ে সাংসদ আমিনুল ইসলামের ভাষ্য, ‘তাঁর তিন প্রতিনিধিই যথেষ্ট ভালো দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁরা বরাদ্দ আত্মসাৎ করেন কি না অভিযোগকারীরা তা দেখতে পারে।’
আমি মনে করি, মানুষের চেহারা দেখার চেয়ে কাজ জরুরি। আমি আমার দায়িত্ব পালন করছি।আমিনুল ইসলাম, সাংসদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২
তিন উপজেলাতেই সাংসদের পক্ষ-বিপক্ষ রয়েছে। গত পৌর নির্বাচনে নাচোল ও রহনপুরে দুই পক্ষই মেয়র পদে বিদ্রোহী প্রার্থী দেয়। এ ছাড়া ইউপি নির্বাচনে বিএনপি দলীয়ভাবে অংশগ্রহণ না করলেও দুই পক্ষই স্থানীয়ভাবে তাদের অনুসারীদের চেয়ারম্যান পদে সমর্থন দেয়।
গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি নাচোল পৌরসভার ভোট হয়। মেয়র পদে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পান উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম মজিদুল হকের মেয়ে ও সাংসদ আমিনুল ইসলামের ছোট ভাইয়ের স্ত্রী মাসউদা আফরোজ হক।
মাসউদা আফরোজ অভিযোগ করেন, পৌর নির্বাচনে সাংসদ তাঁর বিরোধিতা করেছেন এবং সাংসদ পক্ষের নেতারা বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড় করিয়ে তাঁকে হারিয়ে দেন। তবে সাংসদের দাবি, তিনি বিরোধিতা করেননি, বরং চুপ ছিলেন।
সাংসদ পক্ষের নেতা নাচোল পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক দুরুল হুদা বলেন, মাসউদা আফরোজের বিএনপির সদস্যপদ পর্যন্ত ছিল না। তাই ক্ষুব্ধ হয়ে অনেক নেতা-কর্মী তাঁর পক্ষে কাজ করেননি।
দলীয় সূত্র জানায়, তিন উপজেলাতেই সাংসদ আমিনুল ইসলামবিরোধী নেতারা এককাট্টা হয়েছেন। তাঁরা হলেন গোমস্তাপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি বাইরুল ইসলাম, ভোলাহাট উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক বাবর আলী বিশ্বাস ও নাচোল উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম মজিদুল হক। সাংসদবিরোধীরাই নাচোল ও ভোলাহাটে আহ্বায়ক কমিটিতে পদ পেয়েছেন। তবে গোমস্তাপুরে এখনো আহ্বায়ক কমিটি হয়নি।
দলীয় সূত্র জানায়, আহ্বায়ক কমিটি গঠন নিয়ে তিন উপজেলার সাংসদপন্থী নেতারা কোণঠাসা হয়ে আছেন। অন্যদিকে আগামী নির্বাচনে আমিনুল ইসলামের বিপক্ষের নেতারা জোর তৎপরতা শুরু করেছেন। তাঁরা যেকোনোভাবে আমিনুল ইসলামের দলীয় মনোনয়ন ঠেকাতে চান।