ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ক্যাম্পাসে ধর্মভিত্তিক কোনো সংগঠনের কার্যক্রম চালানোর সুযোগ নেই। কিন্তু ডাকসু (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে গত ২৩ জানুয়ারি মিছিল করেছে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন। ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিতে চায় তারা। জাতীয় রাজনীতিতে সক্রিয় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ছাত্রসংগঠন ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন।
স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে বিতর্কিত ভূমিকার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অলিখিতভাবে নিষিদ্ধ থাকা জাতীয় পার্টির ছাত্রসংগঠন জাতীয় ছাত্রসমাজও ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিতে চাচ্ছে। ডাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা চেয়ে ২৮ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর আবেদন জানিয়েছে তারা।
ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন এবং ছাত্রসমাজের নেতারা বলছেন, ডাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ না দেওয়া হলে তাঁরা উচ্চ আদালতে যাবেন।
তবে ধর্মভিত্তিক কোনো সংগঠন ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিতে চাইলে তাদের প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্রলীগ। ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী ও ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ক্যাম্পাসে কাউকে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না।
এককভাবে ও পূর্ণ প্যানেলে ডাকসু নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন জানিয়ে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান বলেন, তাঁরা আদর্শিক সংগঠন। ছাত্র আন্দোলন ধর্মভিত্তিক সংগঠন নয় বলেও দাবি করে তিনি বলেন, ‘যাঁরা আমাদের ধর্মভিত্তিক সংগঠন বলে মনে করেন, তাঁদের ভুল ধারণা আছে৷ ধর্মকে আমরা ব্যক্তিগত ব্যাপার মনে করি। আমাদের সংগঠনের সদস্য হওয়ার জন্য মুসলিম হওয়া বাধ্যতামূলক নয়।’
দলমত–নির্বিশেষে ডাকসু নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অধিকার সবার রয়েছে বলে উল্লেখ করেন ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তাঁরাও হলের বাইরে ভোটকেন্দ্র চান। একই সঙ্গে ক্যাম্পাসে সব ছাত্রসংগঠনের সহাবস্থান দাবি করেন তাঁরা।
ডাকসুতে ধর্মভিত্তিক সংগঠনের নির্বাচন করার কোনো সুযোগ নেই বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পরিবেশ পরিষদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে ক্যাম্পাসে ধর্মভিত্তিক সংগঠন নিষিদ্ধ বহু আগে থেকেই৷ ধর্মভিত্তিক সংগঠনের প্রসঙ্গ সর্বশেষ সিন্ডিকেট (২৯ জানুয়ারি) সভায় উঠেছিল৷ আলোচনায় সেই নিষেধাজ্ঞা বহালই রাখা হয়েছে৷ ধর্মভিত্তিক সংগঠনের ডাকসু নির্বাচন করা তো দূরের কথা, ক্যাম্পাসে কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রম চালানোর এখতিয়ারই নেই।
এদিকে ডাকসু নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে জাতীয় পার্টির ছাত্রসংগঠন ছাত্রসমাজও। সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আবদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘পার্টির জ্যেষ্ঠ নেতারা আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ে কথা বলবেন৷ ক্যাম্পাসে আমাদের নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে দালিলিক কোনো প্রমাণ নেই৷ তারপরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি আমাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের অনুমতি না দেয়, তাহলে আমরা আদালতের শরণাপন্ন হব৷ আমাদের প্রতি ছাত্রলীগ বা ছাত্রদলের কোনো বিরূপ মনোভাব আছে বলে কখনো মনে হয়নি। তবে বামপন্থী সংগঠনগুলো বরাবরই আমাদের বিরোধী।’
বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলো বলছে, ১৯৯০ সাল থেকেই ছাত্রসমাজ ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ। আর ছাত্রলীগ বলছে, ছাত্রসমাজ ক্যাম্পাসে নৈতিকভাবে নিষিদ্ধ এবং তাদের প্রতিহত করার প্রস্তুতি ছাত্রলীগের রয়েছে।
ছাত্রসমাজ ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ কি না, জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেছেন, ‘প্রশ্নটি আপত্তিকর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোনো ছাত্রসংগঠনের জন্ম দেয় না, কাউকে বাতিল বা অন্তর্ভুক্তও করে না৷’