নির্বাচনে দ্বন্দ্ব-সংঘাত কমাতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) কারিগরি সহায়তা দিতে চায় জাতিসংঘ। পাশাপাশি ভোটারের বায়োমেট্রিক নিবন্ধন, তাঁদের ভোটকেন্দ্রে যেতে উৎসাহী করা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং নির্বাচন-সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণে ইসির সক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে কারিগরি সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে জাতিসংঘ।
জাতিসংঘের একটি নিডস অ্যাসেসমেন্ট মিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এই প্রস্তাব দেওয়া হয়।
ইসি সূত্র জানায়, ইসি কয়েকটি ক্ষেত্রে কারিগরি সহায়তা চেয়ে গত ১৪ জুন জাতিসংঘকে চিঠি দেয়। তাতে নির্বাচন-প্রক্রিয়ায় ইসির সক্ষমতা ও ভোটারদের সচেতনতা বাড়ানো, নির্বাচনী প্রশিক্ষণ, অটো মার্কিং সিল, ব্যালট পেপার মার্কিং কলম, ব্যালট বক্স লক, অটো অফিশিয়াল সিল, ভোটিং স্ক্রিন ও ল্যাপটপসহ নির্বাচনী সরঞ্জাম কেনা, সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের ক্ষেত্রে ভৌগোলিক তথ্যব্যবস্থা ব্যবহারসহ তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক নির্বাচন ব্যবস্থাপনা এবং ভোটার নিবন্ধনের ক্ষেত্রে কারিগরি সহায়তা চাওয়া হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘের একটি নিডস অ্যাসেসমেন্ট মিশন বাংলাদেশে আসে। মিশন গত ২৪ জুলাই থেকে ২ আগস্ট বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশন, কমিশনের কর্মকর্তা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে। পরে বাংলাদেশের আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে পাঁচটি বিষয়ে কারিগরি সহায়তা করার সুপারিশ করে। এর মধ্যে সংঘাতপ্রবণ নির্বাচনী এলাকার জনগণের মধ্যে নির্বাচনী সংঘাতবিরোধী পর্যবেক্ষণ, সামাজিক সংযোগ, সংঘাতপূর্ণ এলাকায় পর্যবেক্ষণ ও বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ইসির সক্ষমতা বৃদ্ধি করে সংঘাত প্রশমন কৌশল আরও উন্নত করতে সহায়তা দেওয়ার কথা বলা হয়।
ইসি জানায়, নিডস অ্যাসেসমেন্ট মিশনের এসব সুপারিশ ইতিমধ্যে জাতিসংঘ অনুমোদন করেছে বলে ইসিকে জানানো হয়েছে। গত ১৯ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের রাজনীতিবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ও নির্বাচনী সহায়তার ফোকাল পয়েন্ট জেফরি ফেল্টম্যান জানান, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি ও সক্ষমতা উন্নয়নে সহায়তা দিতে জাতিসংঘ প্রস্তুত। বিষয়টি নিয়ে গত মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের সভায় আলোচনা হয়।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনে জাতিসংঘের সহায়তার বিষয়টি নিয়ে ইসির কারিগরি দলের সঙ্গে জাতিসংঘের আলোচনা হবে। এরপর এ বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।
ইসি সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সাল থেকে জাতিসংঘ নির্বাচন কমিশনকে বিভিন্ন ধরনের সহায়তা দিয়ে আসছে। এরই অংশ হিসেবে এই কারিগরি সহায়তা নিয়ে আলোচনা চলছে। সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছর থেকে শুরু করে ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত প্রকল্পভিত্তিক কাজ করবে জাতিসংঘ।
জানতে চাইলে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) দীর্ঘদিন থেকে নির্বাচন কমিশনকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহায়তা করে আসছে। তারা এবার যে বিষয়গুলোতে কারিগরি সহায়তা দেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে, সেগুলো নিতে তেমন কোনো অসুবিধা নেই। তবে দেখার বিষয় হলো, নির্বাচন কমিশন কতটুকু নিতে পারে, নেওয়ার ক্ষমতা কতটুকু আছে বা ইসির দিক থেকে প্রাধান্য কী।