সমালোচিত রকিবউদ্দীন কমিশনের উত্তরসূরি হিসেবে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) কারা আসছে—এই আলোচনায় সরগরম ছিল বছরের প্রথম ৩৭ দিন। দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ আর অনুসন্ধান কমিটির মাধ্যমে ৭ ফেব্রুয়ারি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করেন রাষ্ট্রপতি।
একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে ১৬ জুলাই নিজেদের কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করে কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে নতুন কমিশন। এরপর থেকে আলোচনায় ছিল ইসির সংলাপ। নির্বাচন সামনে রেখে সুশীল সমাজ, গণমাধ্যমের প্রতিনিধি, নিবন্ধিত ৪০টি রাজনৈতিক দল, নারীনেত্রী ও নির্বাচন পরিচালনায় বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ করে ইসি। সংলাপে প্রধান হয়ে ওঠে আগামী নির্বাচনে সেনা মোতায়েন প্রসঙ্গ। সংলাপে ২৫টি দল জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করার পক্ষে মত দেয়। এর মধ্যে বিএনপিসহ ১১টি দল বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনা মোতায়েনের দাবি জানায়। ১৯টি দল নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। এ ছাড়া নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা না-করা, নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের বিষয়ও প্রাধান্য পায় সংলাপে।
প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মূল প্রস্তাবগুলো পরস্পরবিরোধী। বিশেষ করে সেনা মোতায়েন, নির্বাচনকালীন সরকার ও সংসদ বহাল রাখা না-রাখা নিয়ে আওয়ামী লীগ ইসিতে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব না দিলেও এ দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও তাদের অবস্থান বিএনপির বিপরীত।
অবশ্য ইসি বলেছে, সংসদ ভেঙে নিরপেক্ষ সরকার গঠনের মতো সাংবিধানিক বিষয়ে তাদের কিছু করার নেই। রাজনৈতিক সমঝোতাও তাদের কাজ নয়। বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনা মোতায়েন বা সেনাবাহিনীকে নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ক্ষমতা দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা ইসির নেই। ফলে শেষ পর্যন্ত এই সংলাপ রাজনৈতিক অঙ্গনে খুব একটা স্বস্তি এনে দিতে পারছে না।
বিএনপির সঙ্গে সংলাপে সিইসি কে এম নুরুল হুদা দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা বলে অভিহিত করেন। এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক তৈরি হয়।
দায়িত্ব নেওয়ার পর নতুন ইসি নির্বাচনী আইনবিধি সংস্কারেও হাত দেয়। তারা সংসদীয় আসনের সীমানায় ব্যাপক পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে নতুন আইন করার উদ্যোগ নিয়ে কিছুটা পিছিয়ে আসে। এখনো সে আইনের খসড়া চূড়ান্ত হয়নি। বিদ্যমান আইনেই সীমানা নির্ধারণের কাজ হচ্ছে। ফলে সীমানায় খুব একটা পরিবর্তন আসছে না।
এই কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর তাদের অধীনে প্রথম নির্বাচন ছিল কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন। সে নির্বাচনে কিছু কেন্দ্রে দখল, প্রকাশ্যে সিল দেওয়ার ঘটনা ঘটলেও নির্বাচন ছিল মোটামুটি সুষ্ঠু। সর্বশেষ রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন ছিল অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য।