নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি জানিয়ে বিকল্পধারা বলেছে, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি না করা পর্যন্ত বিকল্পধারা নির্বাচনে অংশগ্রহণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে না। আজ রোববার দুপুরে বিকল্পধারার পুনর্গঠিত প্রথম প্রেসিডিয়াম বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠক শেষে বিকল্পধারার প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহী বি চৌধুরী প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এসব সিদ্ধান্তের কথা জানান।
প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট ও সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ কিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর (বি চৌধুরী)সভাপতিত্বে রোববার দুপুর পৌনে একটায় বি চৌধুরীর বারিধারার বাসভবনে প্রেসিডিয়াম বৈঠক শুরু হয়। বেলা আড়াইটা পর্যন্ত এই বৈঠক চলে। বৈঠকে প্রেসিডিয়াম সদস্য মেজর (অব.) আবদুল মান্নান, শমসের মবিন চৌধুরী, গোলাম সারোয়ার মিলন, মাহী বি চৌধুরী, আবদুর রউফ মান্নান ও অধ্যাপক আনোয়ারা বেগম উপস্থিত ছিলেন।
মাহী বি. চৌধুরী সাংবাদিকেদের জানান, বৈঠকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ও জামায়াতের জোটের প্রতিহিংসার রাজনীতির সমালোচনা করা হয়েছে। বৈঠকে বলা হয়েছে, গত ২৮ বছর ধরে এই জোট দুটি সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার উদার গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রত্যাশা পূরণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। সেখানে বিকল্পধারা মনে করে, এ দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটানোর জন্য সেই রাজনীতিকে সামনের দিকে নিয়ে আসতে হবে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে মাহী বি চৌধুরী বলেন, ‘আমরা স্পষ্টভাবে বলেছি, বিকল্পধারা নারী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য রাজনীতি করবে এবং একটি আধুনিক অগ্রগামী নান্দনিক ধারার রাজনীতির জন্ম দেবে। বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মকে সঙ্গে নিয়ে এটাই বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।’
মাহী জানান, বৈঠকে ৩টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাবেক মন্ত্রী ও বিকল্পধারার প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম সারোয়ার মিলনের নেতৃত্বে প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রউফ মান্নান ও দলের সহসভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মুহম্মদ ইউসুফ, সহসভাপতি মাহবুব আলী ও সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার ওমর ফারুককে নিয়ে রাজনৈতিক সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে যুক্তফ্রন্ট সম্প্রসারণের কাজ চূড়ান্ত করবে।
মাহী আরও জানান, একটি গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রেসিডিয়াম বৈঠকে দ্ব্যর্থহীনভাবে বলা হয়েছে যে, একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা যাবে না। নির্বাচনে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। রাজনৈতিক মামলায় যেসব রাজনৈতিক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁদের মুক্তি দিতে হবে। একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি না করা পর্যন্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণের চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত বিকল্পধারা নেবে না।
প্রেস ব্রিফিংয়ে মাহী বলেন, ‘তবে বিকল্পধারা একটি নির্বাচনমুখী দল। তাই নির্বাচনের সব প্রস্তুতিও আমরা গ্রহণ করব। আগামী ২ নভেম্বর শুক্রবার, বিকল্পধারার বাড্ডার নির্বাচনী কার্যালয়ে যুক্তফ্রন্টের উদ্যোগে একটি জনসভা অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ ওই জনসভায় আরও কিছু রাজনৈতিক নেতা বিকল্পধারায় যোগদান করবেন বলে সাংবাদিকদের জানান মাহী।
বৈঠকের শুরুতে বিকল্পধারার প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক রাষ্ট্রদূত মরহুম আবদুর রহিম, প্রয়াত নেত্রী সাবেরা বেগম ও বিকল্পধারার নেতা মেজর জেনারেল (অব.) আবদুল হালিমের প্রয়াত স্ত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে শোকপ্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।
রোববারের বৈঠকে বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট বি চৌধুরীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে প্রেসিডিয়াম সদস্য শমসের মবিন চৌধুরীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য কার্তিক ঠাকুরকে প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে মনোনীত করা হয়। এ ছাড়া বৈঠকে ৩০০ আসনে নির্বাচনী সমন্বয়ের দায়িত্ব পালনের জন্য বিকল্পধারার সহযোগী সংগঠন প্রজন্ম বাংলাদেশকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।