নাশকতার মামলার আসামিদের সম্মাননা বগুড়া আ.লীগ সভাপতি মমতাজের

আয়োজনটা ছিল বগুড়া জেলার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সংবর্ধনা। আয়োজক ‘সন্ত্রাসবিরোধী বগুড়া জেলা কমিটি’। সেখানে সন্ত্রাস-নাশকতা মামলার আসামি জামায়াত-বিএনপির নেতাদের ক্রেস্ট দিয়ে সম্মাননা জানালেন আওয়ামী লীগ ও সন্ত্রাসবিরোধী জেলা কমিটির সভাপতি মমতাজ উদ্দিন। সংবর্ধনার পাশাপাশি এ অনুষ্ঠানে আগামী ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় জেলা পরিষদ নির্বাচনে মমতাজ উদ্দিনের ভোটও চাওয়া হয়।
আজ বুধবার বগুড়া শহরের শহীদ খোকন পার্কে দলের দুজন সাংসদের উপস্থিতিতে এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠানে দলীয় জনপ্রতিনিধিদের মুজিব কোট আর নারীদের শাড়ি উপহার দেওয়া হয়। ছিল সবার জন্য মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন।
সন্ত্রাস-নাশকতাবিরোধী প্রচারণা ও জনমত গঠনের জন্য সম্প্রতি বগুড়া জেলা সন্ত্রাসবিরোধী কমিটি করা হয়েছিল। এই কমিটির অধিকাংশ সদস্যই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের।
আয়োজকদের সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন উপজেলায় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করে আগাম ভোট চাইছিলেন। আর এই সমর্থন আদায়ের জন্যই জেলার সব জনপ্রতিনিধিকে সম্মাননা জানানো এবং পোশাক উপহার দেওয়ার উদ্যোগ নেন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এ আয়োজন করা হলে অন্য দলের জনপ্রতিনিধিরা বিব্রত হতে পারেন, এ কারণে কৌশলে জেলা সন্ত্রাসবিরোধী কমিটির পক্ষ থেকেই এই সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জনপ্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলার ১০৮টি ইউনিয়ন পরিষদ, ১২টি উপজেলা পরিষদ এবং ১২টি পৌরসভার নির্বাচিত ১ হাজার ৬১২ জনপ্রতিনিধিকে সংবর্ধনার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। সবার জন্য ক্রেস্ট ছাড়াও উপহার হিসেবে নির্ধারিত পোশাক প্রস্তুত করা হয়। সকাল ১০টা থেকে শুরু হওয়া এই অনুষ্ঠানে বক্তারা ঘুরে ফিরে মমতাজ উদ্দিনের পক্ষে ভোট চাইতে থাকেন। বিএনপি-জামায়াতের জনপ্রতিনিধিরা মঞ্চে উঠে মমতাজ উদ্দিনকে সমর্থন জানিয়ে তাঁর পক্ষে ভোট চান।
অনুষ্ঠানে কাহালু উপজেলার পাইকর ইউপির চেয়ারম্যান মিঠু চৌধুরী বক্তব্য দিতে গিয়ে উপস্থিত জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশে বলেন, ‘জেলা পরিষদ নির্বাচনে মমতাজ উদ্দিনকে ভোট দেবেন, সেটা নিশ্চিত করতে আল্লাহকে সাক্ষী রেখে এখনই হাত তুলে দেখান।’ এ সময় অনেকেই হাত তোলেন।
মমতাজ উদ্দিনের পক্ষে ভোট চান শাজাহানপুর উপজেলার গোহাইল ইউপি চেয়ারম্যান আলী আতোয়ার, নন্দীগ্রামের মোরশেদুল বারী, ধুনটের গোপালনগরের গোলাম হোসেন এবং শেরপুরের গৌর দাস রায় চৌধুরী, দুপচাঁচিয়ার পৌর মেয়র বেলাল উদ্দিন, শেরপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান আবদুস সাত্তার, কাহালু পৌরসভার হেলাল উদ্দিন এবং নন্দীগ্রামের কামরুল হাসান।
কাহালু উপজেলা পরিষদের জামায়াত-সমর্থিত চেয়ারম্যান তায়েব আলী মণ্ডল মঞ্চে উঠে বলেন, ‘মমতাজ উদ্দিন ভাই জনপ্রতিনিধি হওয়ার অনেকবার চেষ্টা করেছেন। হতে পারেননি। তিনি আমাদের সহযোগিতা করেন। কিছুদিন আগেও উপজেলা পর্যায়ে গিয়ে জেলা পরিষদে প্রার্থী হতে চেয়ে সমর্থন চেয়েছিলেন তিনি, সমর্থন দিয়েছি। আজও বলছি, আপনাকে চেয়ারম্যান হিসেবে দেখতে চাই। ভবিষ্যতেও আপনার সহযোগিতা চাই।’
সাঈদীকে চাঁদে দেখার গুজব ছড়িয়ে বগুড়ায় তাণ্ডবের ঘটনা এবং নাশকতার চার মামলার আসামি জামিনে থাকা জেলা জামায়াতের সাবেক নায়েবে আমির এবং শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন সব দলের জনপ্রতিনিধিদের এই সমাবেশকে ‘মিলনমেলা’ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, পান দোকানিদেরও সমিতি আছে, রাজনীতিবিদদের সমিতি নেই। মমতাজ ভাই যদি সেই উদ্যোগ নেন, তবে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
সারিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদের বিএনপি-সমর্থিত চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান বলেন, কদিন আগেও এই খোকন পার্কে বিএনপির কর্মসূচি নিয়ে ঢুকতে পারিনি, রাস্তায় দাঁড়াতে পারিনি। এই পার্কে সব দলের এ রকম একটি মিলনমেলা দেখে ভালো লাগছে। মমতাজ উদ্দিন মহান, দলীয় মনোনয়ন পেলে সবাই তাঁর সঙ্গেই থাকবেন।
শাজাহানপুর উপজেলা পরিষদের বিএনপি-সমর্থিত চেয়ারম্যান সরকার বাদল বলেন, ‘মমতাজ উদ্দিনকে আগেই সমর্থন দিয়েছি। এখনো দিচ্ছি। তাঁকে আমরা ভোটে নির্বাচিত করব।’
নাশকতা মামলার আসামিদের সম্মাননা দেওয়ার বিষয়ে মমতাজ উদ্দিন আজ রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘যাঁরা মামলার আসামি, তাঁরা তো জনপ্রতিনিধি। সে জন্যই তাঁদের ডাকা হয়েছে।’ অনুষ্ঠানে ভোট চাওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি নিজে ভোট চাইনি। আমার হয়ে অন্যরা ভোট চেয়েছেন।’ আর উপহার দেওয়ার বিষয়ে মমতাজ উদ্দিনের বক্তব্য, ‘আমি রাজনীতি করি। এটা রাজনৈতিক কৌশলের অংশ।’