দলে ও জোটে সন্দেহের চোখ বিএনপির

ব্যাংকক ও কাঠমান্ডুতে একাধিক বৈঠকে ৪০ নেতা। ঢাকায় হঠাৎ জমায়েত। দোয়া অনুষ্ঠান। সরকারের নির্লিপ্ততা ভাবাচ্ছে বিএনপিকে।

বিএনপির দলীয় পতাকা
ফাইল ছবি

নিজ দল ও জোটের কয়েকজন নেতাকে চোখে চোখে রাখছে বিএনপি। দলের উচ্চপর্যায়ের কাছে তথ্য আছে, বিএনপির মূল নেতৃত্বের বাইরে একটি বিকল্প জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক শক্তি সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। এর সঙ্গে বিএনপি ও ২০-দলীয় জোটের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা যুক্ত আছেন। দূর থেকে সরকার এবং সরকারসংশ্লিষ্ট কোনো গোষ্ঠীর সমর্থনও থাকতে পারে এর পেছনে।

দলীয় সূত্র বলছে, বিএনপি যাঁদেরকে সন্দেহ করছে, তাঁদের মধ্যে অন্যতম দলের দুই ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমদ ও শওকত মাহমুদ এবং ২০–দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা কল্যাণ পার্টির নেতা সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম ও এলডিপির নেতা অলি আহমদ।

বিভিন্ন সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপির বিকল্প একটি জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক শক্তি দাঁড় করানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ লক্ষ্যে ২০১৯ সালের এপ্রিল ও মে মাসে দেশে–বিদেশে একাধিক বৈঠক হয়।

বিএনপি, ২০-দলীয় জোট, জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট এবং ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হকের বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের অন্তত ৪০ জন নেতা ব্যাংকক ও কাঠমান্ডুতে ওই সব বৈঠকে অংশ নেন। হেফাজতে ইসলামের এক নেতাও বিদেশে এমন একটি বৈঠকে অংশ নেওয়ার কথা প্রথম আলোর কাছে স্বীকার করেছেন।

সম্প্রতি হাফিজ উদ্দিন আহমদ ও শওকত মাহমুদকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিল বিএনপি। তার নেপথ্য কারণও ছিল ওই সন্দেহ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুণ রায় ব্যাংককের একটি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। তবে নিপুণ রায় প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘আমি ঘুরতে গিয়েছিলাম। আমার সঙ্গে কারও বৈঠক হয়নি।’

আর সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘পৃথিবীতে অনেক বড় বড় ঘটনা, হত্যাকাণ্ডের রহস্য এখনো স্পষ্ট নয়। যেমন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি, বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু ও জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ড, এমনকি ২১ আগস্টের ঘটনা। এটিও তেমনই একটি ঘটনা। তবে আমার মনে হয়েছে, এটি কাঁচা হাতের রাজনীতিবহির্ভূত কাজ। সে জন্য আমি অংশগ্রহণ করিনি।’

শুরুতে সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের উদ্যোগে শামিল হলেও সন্দেহ হওয়ায় বিএনপির নেতাদের কল্যাণ পার্টির কর্মসূচি এড়িয়ে চলতে মৌখিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর আগে অলি আহমদের নেতৃত্বে গঠিত ‘জাতীয় মুক্তির মঞ্চ’ নিয়েও বিএনপি একই অবস্থান নিয়েছিল।

সূত্র জানায়, বিদেশে বৈঠকগুলো আয়োজনের নেপথ্যে ছিলেন মাসুদ করিম নামের এক ব্যক্তি; যিনি কোথাও মাসুদ চৌধুরী, কোথাও এনায়েত করিম নামে পরিচিত। এখন লন্ডনে থাকেন। ব্যাংকক ও কাঠমান্ডুর বৈঠকে মাসুদ করিমের সঙ্গে পশ্চিমা একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক সদস্যও ছিলেন বলে সূত্র জানায়।

ইবরাহিমের তৎপরতায় কৌতূহল

বিএনপির নেতারা মনে করছেন, বিএনপির মূল নেতৃত্বকে বাদ দিয়ে দলে এবং জাতীয়তাবাদী ঘরানায় বিভক্তি সৃষ্টির একটা উদ্যোগ চলছে। এ জন্য বিএনপির প্রতি ক্ষুব্ধ ও হতাশ হয়ে পড়া নেতাদের কাছে টানার কৌশল নিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। প্রক্রিয়াটি ২০২৩ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন অথবা তার আগে কোনো প্রেক্ষাপট তৈরির ছক থেকে করা হতে পারে বলে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের ধারণা।

কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম গত জানুয়ারিতে ঢাকায় একটি ‘দোয়া’ অনুষ্ঠান করেন। সেখানে বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন দলের বেশ কজন রাজনীতিক ও সাবেক সামরিক কর্মকর্তা একত্র হন। এরপর তিনি আরেকটি মতবিনিময় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন, যেখানে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ছাড়াও তিন বাহিনীর ৬৫ জন সাবেক কর্মকর্তার থাকার কথা ছিল বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন ইবরাহিম। কিন্তু সরকারি একটি সংস্থার হস্তক্ষেপে তিনি আর তা করতে পারেননি।

সৈয়দ ইবরাহিম মনে করছেন, দেশে সব ক্ষেত্রে নৈরাজ্য চলছে। এর পরিবর্তন দরকার। তিনি চাচ্ছেন একটা কিছু করতে। এ লক্ষ্যে তিনি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সমমনা সব পক্ষকে এক জায়গায় আনার উদ্যোগ নিয়েছেন। কিন্তু বিএনপিসহ বিভিন্ন মহলের সন্দেহ, তাঁর তৎপরতার পেছনে কারা আছে?

এ বিষয়ে সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটা কিছু তো অবশ্যই আছে। কিন্তু সেটা কী, তা তো বলা যাবে না।’

সৈয়দ ইবরাহিম এবং তাঁর একাধিক ঘনিষ্ঠজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত রাজনীতিতে ডানপন্থী ভাবধারার বড় একটি অংশকে সংগঠিত করতে চান ইবরাহিম। এ ক্ষেত্রে মূল লক্ষ্য বিএনপির রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় ও হতাশ নেতা-কর্মীদের অংশটি। পাশাপাশি নানা কারণে সরকারের ওপর বিরক্ত বিশিষ্ট ব্যক্তিরা, যাঁরা সরাসরি রাজনীতি করেন না, কিন্তু বিএনপির প্রতি দুর্বল; তাঁরাও লক্ষ্য।

সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের অনুষ্ঠানে গেছেন এমন একাধিক ব্যক্তি জানান, এই উদ্যোগের উৎস সম্পর্কে তাঁরা সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানেন না। তবে একজন অংশগ্রহণকারী বলেছেন, তাঁর ধারণা, এর পেছনে জামায়াতে ইসলামীর একটা যোগসূত্র থাকতে পারে।

তবে এমন সন্দেহকে নাকচ করে দিয়ে সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বলছি, নো, নো, নেভার (না, না, কখনো না)।’

সৈয়দ ইবরাহিমও মনে করছেন, তাঁর তৎপরতায় বিএনপি ও আওয়ামী লীগ—দুই পক্ষই অসন্তুষ্ট। তার অংশ হিসেবে বিএনপির উচ্চপর্যায় থেকে দলের নেতাদের তাঁর অনুষ্ঠানে যেতে মানা করা হয়েছে। আবার একটি গোয়েন্দা সংস্থা তাঁর একটি মতবিনিময় অনুষ্ঠান বাতিল করতে রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করেছে।

সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএনপি, আওয়ামী লীগ—কেউই চায় না তৃতীয় কেউ দাঁড়াক। এটি চরম বাস্তবতা। এরপরও বলব, বিএনপির প্রতি আমি সর্বাবস্থায় কৃতজ্ঞ। কারণ, তাদের হাত ধরেই আমার রাজনীতিতে হাতেখড়ি।’


সন্দেহ জামায়াতকে নিয়েও

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে আগের সম্পর্ক দৃশ্যমান নেই। জামায়াতের সঙ্গে জোটের সম্পর্ক ধরে রাখার রাজনৈতিক সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে ইতিমধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে আলোচনাও হয়েছে। দলের মাঠপর্যায়ের নেতাদেরও মতামত নেওয়া হয়েছে। যদিও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এই অবস্থায় জামায়াতেরও বসে থাকার কথা নয়। অলি আহমদের মুক্তির মঞ্চের সব কর্মসূচিতেই জামায়াতের নেতারা ছিলেন। সৈয়দ ইবরাহিমের সর্বশেষ অনুষ্ঠানে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরোয়ারসহ কয়েকজন নেতাকে সক্রিয় দেখা গেছে।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের কেউ কেউ মনে করছেন, এটি বিএনপিকে চাপে রাখতে জামায়াতের একটা কৌশল হতে পারে। শেষ পর্যন্ত দুই দলের পথ আলাদা হয়ে গেলে পৃথক নির্বাচনী জোট করার পরিকল্পনা থেকেও জামায়াত এই ভিন্ন রাজনৈতিক মঞ্চ গড়ার চেষ্টার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে।

অলি আহমদ: হঠাৎ তৎপর, হঠাৎ চুপ

গত সংসদ নির্বাচনের পর ‘জাতীয় মুক্তির মঞ্চ’ গঠন করে হঠাৎ তৎপর হওয়া এলডিপির নেতা অলি আহমদ দেড় বছর ধরে চুপচাপ। এর কারণ খুঁজতে গিয়েই পাওয়া যায় বর্তমানে লন্ডনপ্রবাসী মাসুদ করিমের নাম এবং দেশের বাইরে একাধিক বৈঠকের তথ্য। এর আগে মাসুদ করিম যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে থাকতেন। তিনি অলি আহমদসহ বিএনপির একাধিক নেতাকে রাষ্ট্রক্ষমতায় পটপরিবর্তনের স্বপ্ন দেখান। মাসুদ করিম তাঁদের কাছে নিজেকে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রভাবশালী সংস্থার লোক বলে পরিচয় দেন।

লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ

অলি আহমদের একাধিক রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠজন জানান, মাসুদ করিমের নেপথ্য তৎপরতায় অলি আহমদ মুক্তির মঞ্চ গঠন করে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার হয়েছিলেন। তখন মাসুদ করিমের সঙ্গে ব্যাংকক ও নেপালে একাধিক বৈঠকও করেন তিনি। ওই সব বৈঠকে বিএনপি ও হেফাজতে ইসলামের একাধিক নেতা অংশ নেন।

সূত্র জানায়, একপর্যায়ে অলি আহমদ নিজ দল এলডিপির কেন্দ্রীয় এক নেতার সঙ্গে মাসুদ করিমের পরিচয় করিয়ে দেন। ওই নেতা তৈরি পোশাক ব্যবসায়ী। অলি আহমদ তাঁকে বলেন, মাসুদ করিম প্রভাবশালী ব্যক্তি। যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর একটি শাখার সঙ্গে তাঁর সখ্য আছে। মার্কিন সেনাবাহিনীর জন্য কিছু নির্দিষ্ট পোশাকের অর্ডার পেতে মাসুদ করিম তাঁকে সহায়তা করতে চান। কিন্তু এর জন্য আগে কারখানাকে তালিকাভুক্ত হতে হয়। জামানত হিসেবে জমা দিতে হয় এক লাখ মার্কিন ডলার। ওই ব্যবসায়ী এত টাকা দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানান। একপর্যায়ে মাসুদ করিম নিজে ৫০ হাজার ডলার দেবেন এবং বাকি ৫০ হাজার ডলার ওই ব্যবসায়ী থেকে নিয়ে তালিকাভুক্ত করানোর প্রস্তাব দেন।

ওই ব্যবসায়ী প্রথম আলোকে জানান, তিনি ২০১৯ সালের জুলাই মাসে অলি আহমদকে ৫০ হাজার ডলার সমপরিমাণ ৪৩ লাখ ১০ হাজার টাকা দেন। অলি আহমদ সেই টাকা মাসুদ করিমকে পাঠান। কিন্তু পোশাকের কোনো অর্ডার তিনি পাননি। পরে তিনি টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য অলি আহমদকে চাপ দেন। একপর্যায়ে তিন চেকে টাকা ফেরত দেন অলি আহমদ। এ নিয়ে তিক্ততায় ওই ব্যবসায়ী এলডিপি ছেড়ে দেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ওই ঘটনার পর অলি আহমদ চুপসে গেছেন।

কিন্তু অলি আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, মাসুদ করিম নামে কাউকে তিনি চেনেন না। এ ধরনের ব্যবসার কথাও তাঁর জানা নেই।

ওই ব্যবসায়ীর মাসুদ করিমের সঙ্গে যোগাযোগ, অলি আহমদের সঙ্গে এ–বিষয়ক কথাবার্তা, মোবাইলে খুদে বার্তা চালাচালি এবং চেকের কপি দেখেছে প্রথম আলো। তিনটি সূত্র থেকেই মাসুদ করিমের ব্যবহার করা একটি মুঠোফোন নম্বর পাওয়া যায়। ওই নম্বরে একাধিকবার চেষ্টা করেও তাঁর সঙ্গে কথা বলা যায়নি।

দেখা যায়, গত সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপি যখন রাজনীতিতে পর্যুদস্ত, তখন ২০১৯ সালের জুনে ‘জাতীয় মুক্তির মঞ্চ’ গঠন করে অলি আহমদ মধ্যবর্তী নির্বাচন ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি তোলেন। দুটি দাবিই বিএনপির নেতা-কর্মীদের কাছে জনপ্রিয়। কিন্তু বক্তৃতা-বিবৃতিতে অলি আহমদ বিএনপির নেতৃত্বের সমালোচনা শুরু করলে নেতারা সতর্ক হন। একপর্যায়ে দলের নেতা-কর্মীদের মুক্তির মঞ্চের কর্মসূচি এড়িয়ে চলতে বলা হয়।

অবশ্য বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ ধরনের সন্দেহের কথা স্বীকার করেননি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘অলি আহমদ, ইবরাহিম সাহেব—তাঁরা নিজেদের দলের পক্ষ থেকে জোটের কমন ইস্যুতে স্বতন্ত্র কর্মসূচি, রাজনৈতিক উদ্যোগ নিতে পারেন। এতে কোনো বাধা নেই, সন্দেহেরও কিছু নেই।’

হঠাৎ জমায়েত, লক্ষ্য পটপরিবর্তন

২০১৯ ও ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ঢাকায় আচমকা দুটি বড় জমায়েত করা হয়। দুটি কর্মসূচিতে হঠাৎ রাস্তা অবরোধ করে কয়েক হাজার লোক বিক্ষোভ শুরু করে। ২০১৯ সালের ৫ ডিসেম্বর হাইকোর্টের সামনের বিক্ষোভে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানানো হয়। গত ১৩ ডিসেম্বরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভের সুর ছিল সরকারের পতন।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, দুটি বিক্ষোভের সংগঠকেরা কর্মীদের ধারণা দিয়েছিলেন, এই বিক্ষোভে বিভিন্ন দিক থেকে লাখো মানুষ যুক্ত হবে। সেখান থেকেই রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সূচনা হবে।

অনুসন্ধানে এই দুই কর্মসূচির পেছনে বিএনপির একাধিক নেতার যুক্ত থাকার তথ্য পাওয়া যায়। এতে আর্থিক সহায়তা দেন বিএনপির সাবেক ধনাঢ্য এক নেতা। যিনি ২০১৯ সালের শেষ দিকে বিএনপি থেকে ইস্তফা দেন। এই দুই কর্মসূচির সঙ্গেও মাসুদ করিম এবং দেশের বাইরের একটি মহলের যুক্ততা ছিল বলে জানা যায়। এর রেশ ধরেই দলের ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমদ ও শওকত মাহমুদকে নোটিশ দেওয়া হয় বলে বিএনপির উচ্চপর্যায়ের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা জানান।

জানতে চাইলে শওকত মাহমুদ স্বীকার করেন, তিনি মাসুদ করিমকে চেনেন। মাসুদ করিম একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, তাঁর ভালো আন্তর্জাতিক যোগাযোগ আছে।
ঢাকায় বড় ধরনের বিক্ষোভ আয়োজনের লক্ষ্যে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে একটি বৈঠকে অংশ নেন হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মনির হোসেন কাসেমী। তিনি গত জাতীয় সংসদে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম থেকে ২০–দলীয় জোটের প্রার্থী ছিলেন।

মনির হোসেন কাসেমী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি হুজুরের (প্রয়াত নূর হোসাইন কাসেমী) নির্দেশনায় ব্যাংককে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর এটাকে আমার কাছে কার্যকরী কিছু মনে হয়নি।’

সার্বিক বিষয় বিশ্লেষণ করে বিএনপির নেতাদের সন্দেহের তির এখন সরকারের দিকেও। তাঁরা বলছেন, সরকার পতনের লক্ষ্যে দেশে-বিদেশে বৈঠকের খবর পাচ্ছিলেন তাঁরা, ঢাকায় বিক্ষোভের আয়োজনও হয়েছে। তবু সরকার নির্বিকার ছিল। সে কারণে তাঁদের সন্দেহ, বিএনপিকে বিভক্ত ও নেতা-কর্মীদের বিভ্রান্ত করতে সরকারি কোনো মহল হাত ঘুরিয়ে এ কাজ করছে কি না?