ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের প্রতিবাদে ছাত্র, যুব শ্রমিক অধিকার পরিষদের বিক্ষোভ
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের প্রতিবাদে ছাত্র, যুব শ্রমিক অধিকার পরিষদের বিক্ষোভ

নুরুলের সংগঠনের ৩ মামলা

তদন্ত শেষ হয়নি, অপেক্ষা ‘উচ্চপর্যায়ের নির্দেশের’

মোদির সফরবিরোধী বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে তিন মামলায় ছাত্র, যুব শ্রমিক অধিকার পরিষদের ৬৫ জন গ্রেপ্তার। জামিনে ৫৯ জন।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের প্রতিবাদে ছাত্র, যুব শ্রমিক অধিকার পরিষদের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় তিনটি মামলা করেছিল পুলিশ। ৯ মাস আগে করা এসব মামলার তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, তদন্ত শেষ করতে ‘উচ্চপর্যায়ের’ নির্দেশের অপেক্ষায় আছেন তাঁরা।

দীর্ঘদিন ধরে সরকারের দুঃশাসন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে নেতা-কর্মীদের জেলে রাখার জন্য মামলাগুলো দেওয়া হয়। গ্রেপ্তারের পর নেতা-কর্মীদের রিমান্ডে নিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়েছে তাঁরা যেন রাজনীতি না করেন।
নুরুল হক

পুলিশ জানায়, এ সব মামলায় ছাত্র, যুব শ্রমিক অধিকার পরিষদের ৯১ জনকে আসামি করা হয়। তাঁদের মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন ৬৫ জন, জামিনে মুক্তি পেয়েছেন ৫৯ জন।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গত ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশে আসেন। এর আগের দিন তাঁর সফর বাতিলের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি নুরুল হকের নেতৃত্বে রাজধানীর মতিঝিল শাপলা চত্বরে ছাত্র, যুব শ্রমিক অধিকার পরিষদ মিছিল বের করে। এতে বাধা দিলে পুলিশের সঙ্গে সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। সে সময় পুলিশ পরিষদের এক কর্মীকে আটক করে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। পুলিশ বলছে, পরে সংগঠনটির কর্মীরা আটক ব্যক্তিকে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেন। এসব ঘটনায় শাহবাগ থানায় দুটি ও মতিঝিল থানায় একটি মামলা করে পুলিশ। পরে মামলাগুলোর তদন্তের দায়িত্ব পায় ডিবি।

মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২৫ মার্চ মতিঝিল ও শাহবাগ থানায় এবং ২৭ মার্চ শাহবাগ থানায় হওয়া মামলায় নুরুল হকের সংগঠনের নেতা-কর্মীদের আসামি করা হয়। মতিঝিল থানার মামলায় হত্যাচেষ্টা, ‘মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র’ নিয়ে দাঙ্গা ঘটানো, বেআইনি সমাবেশ ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে মামলা করা হয় ৫১ জনের বিরুদ্ধে। মামলার এজাহারে বলা হয়, মিছিলে নুরুল হক নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু আসামির কলামে তাঁর নাম ছিল না। ওই মামলায় ৩৭ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে ৩৫ জন কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। এর বাইরে শাহবাগ থানায় ‘আসামি’ ছিনতাইয়ের অভিযোগে করা মামলায় ২০ জনকে আসামি করা হয়। পুলিশ ওই মামলায় ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করে। তাঁদের মধ্যে ১০ জন জামিন পেয়েছেন। শাহবাগ থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় আসামি করা হয় ২০ জনকে। ওই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘বাসে আগুন দিতে উদ্যত হওয়ার’ অভিযোগ আনা হয়। এ মামলায় ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁরা জামিনে মুক্তি পান।

ভিপি নুরুল হক ছাত্র, যুব শ্রমিক অধিকার পরিষদের সমন্বয়ক ছিলেন। তিনি সম্প্রতি গঠিত গণ অধিকার পরিষদের সদস্যসচিব। মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে নুরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সরকারের দুঃশাসন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে নেতা-কর্মীদের জেলে রাখার জন্য মামলাগুলো দেওয়া হয়। গ্রেপ্তারের পর নেতা-কর্মীদের রিমান্ডে নিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়েছে তাঁরা যেন রাজনীতি না করেন।

ছাত্র, যুব শ্রমিক অধিকার পরিষদের নেতারা বলেন, ঢাকার মামলা ছাড়া চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে হেফাজতের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে করা মামলায় তাঁদের সংগঠনের এক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তা ছাড়া কক্সবাজারে হেফাজতের বিরুদ্ধে করা মামলায়ও তাঁদের এক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। যদিও তাঁরা ওই সব ঘটনায় জড়িত ছিলেন না।

মামলার অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তদন্ত তত্ত্বাবধানকারী কর্মকর্তা ডিবির যুগ্ম কমিশনার মো. মাহবুব আলম প্রথম আলোকে বলেন, এসব মামলার তদন্ত এখনো শেষ হয়নি।