তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানকে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামীকালের মধ্যে তাঁকে পদত্যাগ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আজ সোমবার রাতে জানিয়েছেন।
খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মুরাদ হাসানের বক্তব্যসংবলিত একটি ভিডিও সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে খালেদা জিয়ার নাতনি জাইমা রহমান সম্পর্কে ‘অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ’ মন্তব্য করতে শোনা যায়। তাঁর ওই বক্তব্যের সমালোচনায় সোচ্চার হয়েছিলেন নারী অধিকারকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ। প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে মুরাদ হাসানকে অব্যাহতি দেওয়ার দাবিও উঠেছিল।
এর মধ্যে এক চিত্রনায়িকার সঙ্গে প্রতিমন্ত্রী মুরাদের টেলিফোন কথোপকথনের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে ওই চিত্রনায়িকার উদ্দেশে তাঁকে ‘কুরুচিপূর্ণ’ কথা বলতে শোনা গেছে। এই কথোপকথন নিয়েও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা চলছিল।
এদিকে জাইমা রহমানকে নিয়ে বক্তব্যের জন্য মুরাদ হাসানের পদত্যাগ দাবি করে বিভিন্ন দল ও সংগঠনের পক্ষ থেকে বিবৃতি দেওয়া হচ্ছিল। দুপুরে এক কর্মসূচিতে বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রতিমন্ত্রীর এই বক্তব্যের বিষয়ে সরকারের অবস্থান কী, তা জানতে চেয়েছিলেন।
এই পরিস্থিতিতে রাতে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রতিমন্ত্রী মুরাদকে পদত্যাগ করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা জানালেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘আজ সন্ধ্যায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়েছে এবং আমি আজ রাত ৮টায় প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানকে বার্তাটি পৌঁছে দিই।’
চিকিৎসাশাস্ত্রের ডিগ্রিধারী মুরাদ হাসান ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী, মেস্টা ও তিতপল্যা) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়ে প্রথমবার সংসদে যান। এরপর ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই আসন থেকে দ্বিতীয়বার জয়ী হন তিনি। এই দফায় সরকারে মুরাদ হাসানকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
একটি বিষয় নিয়ে চিকিৎসকদের আপত্তির মুখে সরকার গঠনের পাঁচ মাসের মাথায় ২০১৯ সালের মে মাসে মুরাদ হাসানকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে তথ্য প্রতিমন্ত্রী করা হয়।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া জীবনবৃত্তান্ত অনুযায়ী, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় ২০০০ সালে ছাত্রলীগের কলেজ শাখার সভাপতি হন মুরাদ হাসান। তিন বছর পর যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরী সদস্য হন নির্বাচিত হন।
মুরাদ হাসান ২০১৫ সালে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের ‘স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক’ নির্বাচিত হন। তাঁর বাবা মতিয়র রহমান তালুকদার জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন।