তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানকে ক্ষমা চাইতে বলেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের। তথ্য প্রতিমন্ত্রীর নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, সরকারের একজন প্রতিমন্ত্রী পল্লিবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে কটূক্তি করে এবং রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম পরিবর্তন করার ঘোষণা দিয়ে গর্হিত কাজ করেছেন। এ জন্য তাঁকে ক্ষমা চাইতে হবে।
আজ শনিবার দুপুরে জাপার চেয়ারম্যানের বনানীর কার্যালয়ে গাজীপুর মহানগর এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় জি এম কাদের এ কথা বলেন।
সম্প্রতি তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের সাক্ষাৎকারের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ওই ভিডিওর দিকে ইঙ্গিত করে জি এম কাদের বলেন, ওই প্রতিমন্ত্রী সংবিধান সংরক্ষণের শপথ ভঙ্গ করেছেন। জননন্দিত ও সফল রাষ্ট্রপতি পল্লিবন্ধু এরশাদ এবং দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে নিয়ে কটূক্তি করেছেন।
তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানকে ওই ভিডিওতে বলতে দেখা যায়, ‘ইসলাম আমাদের রাষ্ট্রীয় ধর্ম না। এটা বিশ্বাস করি না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে সংবিধান লিখে গেছেন, সেই সংবিধানই থাকবে। এটার কোনো পরিবর্তন ওই এরশাদ, জিয়াউর রহমান, ওই সব মার্শাল ল অ্যাডমিনিস্ট্রেটর...এসব স্বৈরাচারের শাসনামল ইতিহাস থেকে মুছে দেওয়া হয়েছে আদালতের রায়ে। ওগুলো চলবে না। এই বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। বাহাত্তরের সংবিধানেই আমরা ফিরে যাব।’
সভায় তথ্য প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে জাপার চেয়ারম্যান বলেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনী করেছে। তাতেও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সমুন্নত আছে। তাই কটূক্তি করে ওই প্রতিমন্ত্রী আওয়ামী লীগের দলীয় শৃঙ্খলাও ভঙ্গ করেছেন। তাঁকে অবশ্যই ক্ষমা চাইতে হবে। তা না হলে দেশের মানুষ একদিন এর বিচার করবে। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম পরিবর্তন করার সাহস এবং ক্ষমতা কারও নেই।
জি এম কাদের আরও বলেন, বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী গণতান্ত্রিক চর্চা সম্ভব নয় এবং বর্তমান সংবিধান গণতান্ত্রিক চর্চার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। গণতন্ত্র চর্চা করতে হলে সংবিধানের অনেক ধারা সংশোধন করতে হবে। সংবিধানের ৭০ ধারার কারণে সরকারদলীয় কোনো সংসদ সদস্য সরকারের কোনো সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করতে পারে না। এতে এক ব্যক্তির হাতে সব ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয়েছে। দেশের নির্বাহী বিভাগ, আইনসভা ও রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে বিচার বিভাগের প্রায় ৯০ ভাগই সরকারপ্রধানের নিয়ন্ত্রণে। তাই সরকারপ্রধান যা চাইবেন, তার বাইরে কিছুই সম্ভব নয়।
জাপার চেয়ারম্যান বলেন, অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে সংবিধান অনুযায়ী আইন করতে হবে। আইন না করে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হচ্ছে ফুটবল খেলায় একটি দলের পক্ষ থেকে রেফারি নিয়োগ দেওয়ার মতো। আইন করে, উপযুক্ত ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করে সংবিধান অনুযায়ী সব ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনকে দিতে হবে।
জি এম কাদের বলেন, নিবন্ধিত প্রায় ৪০টি দলের মধ্যে মাত্র আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টি সক্রিয় আছে। বাকি দলগুলো সাইনবোর্ড বা নেতাসর্বস্ব রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। বিএনপির নেত্রী মুচলেকা দিয়ে জেল থেকে বের হয়ে রাজনীতির মাঠে নেই। তাদের আরেক নেতা দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে বিদেশে অবস্থান করছেন। বাকি নেতাদের মধ্যে বিভেদ ও বিভাজনের অভাব নেই। আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালনা ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত। রাজনীতির মাঠে আওয়ামী লীগ নেই বললেই চলে। কিন্তু গণমানুষের দাবি আদায়ে রাজনীতিতে সোচ্চার আছে শুধু জাতীয় পার্টি। নানা অপবাদ ও ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে জাতীয় পার্টি এগিয়ে চলছে।
এ সময় জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক বলেন, বিএনপি হাওয়া ভবন আর ‘খাওয়া ভবন’ করে রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়েছে। আর আওয়ামী লীগের উন্নয়নের ধাক্কায় মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত। উত্তরাঞ্চলের অনেক জেলার রাস্তাঘাট দেখলেই বোঝা যায় উন্নয়নের হাল। দেশ ও দেশের মানুষের কথা মাথায় রেখেই জাতীয় পার্টির রাজনীতি।
আগামী নভেম্বর থেকে তিনি সারা দেশের জেলা সফর শুরু করবেন বলে জানান।
জাপা চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা এম এম নিয়াজ উদ্দিনের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য দেন জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহিদুর রহমান, শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, মীর আবদুস সবুর, রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া প্রমুখ।