বিকল্প ধারা বাংলাদেশের সভাপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেছেন, গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন চুক্তি ভঙ্গ করেছেন। চুক্তি ভঙ্গ করায় তিনি আঘাত পেয়েছেন। আজ শুক্রবার বিকেলে বিকল্প যুবধারার বিশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
বি চৌধুরী বলেন, ‘আমরা ১৩ অক্টোবর তাঁর দাওয়াতে বাসায় গিয়েছিলাম, কিন্তু তিনি বাসায় ছিলেন না। এমনকি তাঁর কোনো লোকও বাসায় ছিল না, তাঁর ঘরের দরজা বন্ধ ছিল। তিনি যেভাবে চুক্তি ভঙ্গ করলেন, তাতে আমরা আঘাত পেয়েছি। আমরা অসত্যে, ভ্রান্তির সঙ্গে কোনো চুক্তি করি না।’
প্রসঙ্গত, গত ১৩ অক্টোবর বিএনপি, গণফোরাম, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য মিলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়। এ ঐক্য গড়ার প্রক্রিয়ায় শুরু থেকেই বিকল্পধারা ছিল। একসঙ্গে তাঁরা একাধিক বৈঠকও করেছেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে গিয়ে বিকল্পধারা ছাড়াই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়।
বিএনপির সঙ্গে ঐক্য না হওয়ার কারণ জানিয়ে বি চৌধুরী বলেন, তিনি বিএনপিকে ১৭৫টি আসন নিয়ে বাকি সব দলের জন্য ১২৫টি আসন ছেড়ে দিতে বলেন। নিজের দলের জন্য ১২৫ আসন চাননি বলে দাবি করেন। এই ভারসাম্য যারা অস্বীকার করে তাঁদের সঙ্গে ঐক্য হবে না বলেও জানান তিনি।
ষড়যন্ত্র করেন না বলে অনেকেই জোট ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে উল্লেখ করে বি চৌধুরী বলেন, তাঁরা জিয়াউর রহমানের রাজনীতির পক্ষে লড়াই করবেন। তাঁর রাজনীতির উত্তরাধিকার তাঁদের হাতে।
গত ২৪ অক্টোবর সিলেটে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রথম সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশের কথা উল্লেখ করে বিকল্পধারা সভাপতি বলেন, ‘বিএনপি নেতারা সেদিন জিয়াউর রহমানের নাম না নিয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন। সিলেটের জনসভায় ৯৮ ভাগ মানুষ ছিল বিএনপির। বাকি দুই ভাগ অন্য দলের।’ তিনি বলেন, সেই সমাবেশে স্বাভাবিক কারণেই শ্রদ্ধার সঙ্গে অন্য দলের নেতারা বঙ্গবন্ধুর নাম স্মরণ করেছেন। এ জন্য তিনি ধন্যবাদও জানান। বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, ‘বিএনপির নেতারা জিয়ার নামটি নেননি। তারা কি আত্মসমর্পণ করেছেন। কার কাছে? কেন? এ দুটি প্রশ্ন জনগণের মনে থেকে যাবে।’ এ ছাড়া মাওলানা ভাসানী, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক ও জেনারেল ওসমানীর নাম নেওয়া হয়নি বলেও সমালোচনা করেন বি চৌধুরী।
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আলোচনার আহ্বান জানিয়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি বলেন, গ্রহণযোগ্য সংসদ নির্বাচনের স্বার্থে সব দলের সঙ্গে আলোচনা শুরু করুন। এ ছাড়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ বাতিলের আহ্বানও জানান।
অনুষ্ঠানে বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী, সাবেক প্রতিমন্ত্রী গোলাম সারোয়ার মিলন, বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের প্রতিমন্ত্রী নাজিম উদ্দিন আল আজাদ ও শিল্পপতি প্রকৌশলী শফিকুর রহমান বি চৌধুরীর হাতে ফুলে দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিকল্পধারায় যোগ দেন।
যোগদানের ব্যাপারে শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, ‘আমি যখন রাজনীতি থেকে অবসর নিই, একটা কথা তখন উল্লেখ করেছিলাম। শারীরিক সুস্থতার সাপেক্ষে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক মহান মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধকে সামনে রেখে যদি দেশ ও জাতির জন্য কোনো ধরনের অবদান রাখার সুযোগ আসে, ভূমিকা রাখার সুযোগ পাই, তাহলে নিজেকে আমি সেই কাজে সম্পৃক্ত করব। সেই প্রতিশ্রুতির ধারাবাহিকতায় আজকে বিকল্প ধারায় যোগ দিলাম।’
২০ দলীয় জোট ছেড়ে আসা ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গাণি বলেন, ‘বি চৌধুরী ভারসাম্যের রাজনীতি শুরু করেছে। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে একটি দল। যারা জিয়ার দলকেও ধ্বংস করতে চায়।’
অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন বিকল্পধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরী, সাবেক প্রতিমন্ত্রী গোলাম সারোয়ার মিলন, এনডিপি চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মোর্ত্তুজা, বিএলডিপি চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন আল আজাদ, লেবার পার্টি একাংশের মহাসচিব হামদুল্লাহ মেহেদি প্রমুখ।