মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে জামায়াত নিয়ে প্রশ্ন করায় গতকাল শুক্রবার সাংবাদিকের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। এ ঘটনার পর এক বিবৃতিতে দুঃখ প্রকাশ করেছেন তিনি।
বিবৃতিতে ড. কামাল হোসেন বলেন, তিনি প্রতিবছরের মতো বুদ্ধিজীবী দিবসে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে মিরপুরের স্মৃতিসৌধে গিয়েছিলেন। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে তাঁর অনেক ঘনিষ্ঠ বন্ধুও ছিলেন। ১৯৭২-৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনায় স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য প্রণীত আইনগুলোর সঙ্গে জড়িত থাকতে পারা তাঁর কাছে সব সময়ই বিশেষ আবেগ ও অনুভূতির বিষয়।
ড. কামাল বলেন, গতকাল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের পর স্মৃতিসৌধের বেদিতে দাঁড়িয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘কত মেধাবী সন্তান হারিয়ে তবে স্বাধীনতা পেয়েছি।’ সে সময় হঠাৎ করেই তাঁর কাছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে জামায়াতের অবস্থান নিয়ে জানতে চাওয়া হয়। ড. কামাল বলেন, তিনি তাৎক্ষণিকভাবে সবিনয়ে জানান, বুদ্ধিজীবী দিবস গভীর অনুভূতির বিষয়। তিনি এই দিনে এখানে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চান না। সাংবাদিক আবারও একই প্রশ্ন করলে তিনি একই মনোভাব প্রকাশ করেন।
ড. কামাল বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে গতকালের পরিস্থিতির বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, ‘ওই মনোভাব প্রকাশ করার পর ‘তৃতীয়বার ভিড়ের মধ্যে থেকে অনবরত দুই থেকে তিনবার “জামায়াত জামায়াত” শব্দ শুনতে পাই। তখন আমার খুবই খারাপ লেগেছিল এবং আমি প্রশ্নকর্তাকে থামানোর চেষ্টা করেছিলাম। আমার বক্তব্য কোনোভাবে কাউকে আহত বা বিব্রত করে থাকলে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।’
ড. কামাল বলেন, ‘আমি সারা জীবন সংবাদক্ষেত্রের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে শামিল থেকেছি।’
ড. কামাল বলেন, ‘আশা করি, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানেরা তাঁদের জীবনের বিনিময়ে যে ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ নির্মাণের স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা আমরা সবাই মিলে গড়তে সক্ষম হব।’
শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে গতকাল ড. কামাল যখন বের হচ্ছিলেন, তখন সাংবাদিকেরা তাঁর কাছে বুদ্ধিজীবী দিবসের প্রতিক্রিয়া জানতে চান। ড. কামাল বলেন, ‘শোষণমুক্ত সুন্দর সমাজের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। স্বাধীনতার স্বপ্নকে বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে যারা কাজ করছে, লোভ-লালসা নিয়ে লুটপাট করছে, তাদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করবই।’
এরপর ড. কামাল বের হতে যাচ্ছিলেন। এ সময় টেলিভিশনের একাধিক সাংবাদিক স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামীর বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। জবাবে ড. কামাল বলেন, শহীদ মিনারে (স্মৃতিসৌধে) এসব বিষয়ে কোনো কথা তিনি বলবেন না।
এরপরও সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করতে থাকেন। একজন বলেন, জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। তারপরও তারা ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে নির্বাচন করছে। এ সময় রেগে গিয়ে ড. কামাল বলেন, ‘প্রশ্নই ওঠে না। বেহুদা কথা বলো। কত পয়সা পেয়েছ এই প্রশ্নগুলো করতে? কার কাছ থেকে পয়সা পেয়েছ? তোমার নাম কী? জেনে রাখব তোমাকে। চিনে রাখব। পয়সা পেয়ে শহীদ মিনারকে অশ্রদ্ধা করো তোমরা। আশ্চর্য!’
এ পর্যায়ে আরেকজন সাংবাদিক আবার প্রশ্ন করেন। তখন ড. কামাল ধমক দিয়ে বলেন, ‘শহীদদের কথা চিন্তা করো। হে হে হে হে করছ! শহীদদের কথা চিন্তা করো। চুপ করো। চুপ করো। খামোশ।’