জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা ড. কামাল হোসেন সাংবাদিকদের সঙ্গে অশোভন ও ক্ষুব্ধ আচরণ করেছেন। সাংবাদিকদের হুমকি-ধমকি দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
আজ শনিবার দুপুরে ঢাকার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের পক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক এ কথা বলেন।
নানক বলেন, রাজনীতিতে ড. কামাল হোসেনকে কখনো জাতির সংকট মুহূর্তে পাওয়া যায়নি। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় এবং ১৯৭৫ সালে ড. কামাল হোসেনের ‘রহস্যাবৃত’, ‘বিতর্কিত’ ভূমিকার কথা দেশবাসী জানে। দেশ ও জাতির প্রয়োজনে তাঁকে কখনো পাওয়া যায়নি। নানক আরও বলেন, ‘ড. কামাল হোসেন বিভিন্ন সময় দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন, ড. কামাল হোসেনের ষড়যন্ত্র-রাজনৈতিক ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতারই অংশ।’
বিএনপি মিথ্যাচার করে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশকে বাধাগ্রস্ত করছে অভিযোগ করে নানক বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শুরু হওয়ার পর থেকে দেশবাসী ও ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ–উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। অত্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে প্রচার-প্রচারণা চলছে। কিন্তু নির্বাচন সামনে রেখে সকাল থেকে সারা দিন বিএনপির নেতারা গণমাধ্যমের সামনে লাগাতার ‘অপপ্রচার’ ও ‘বিভ্রান্তি’ ছড়াচ্ছেন।
বিএনপির বিরুদ্ধে অভিযোগ করে নানক বলেন, মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দিয়ে উসকানি সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে বিএনপি। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অপপ্রচার ও মিথ্যাচারের মাধ্যমে রাজনৈতিক পরিবেশ উত্তপ্ত করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। অপপ্রচার ও মিথ্যাচার ছেড়ে একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করতে বিএনপির প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সমালোচনা করে নানক বলেন, ‘রিজভীর অসংলগ্ন কথাবার্তা ও নির্লজ্জ মিথ্যাচার এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে যা শুনলে স্বয়ং ইবলিস শয়তানও লজ্জা পেতে পারে। মিথ্যা বলাকে উদ্দেশ্যবিহীন অভ্যাসে পরিণত করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রিজভী প্রলাপবচন শুরু করেছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে কীভাবে “লজ্জাকর” মন্তব্য করেছেন রিজভী। যদিও যাদের “অস্থিমজ্জায়” মিথ্যাচার থাকে এবং মিথ্যা বলা যাদের উদ্দেশ্যবিহীন অভ্যাসে পরিণত হয়, তাদের পক্ষে সত্যের পথে ফিরে আসা অত্যন্ত দুরূহ। তারপরও আমরা বিএনপি নেতৃবৃন্দকে আহ্বান জানাই, মিথ্যাচারের পথ পরিহার করে সত্য ও সঠিক পথে ফিরে আসুন।’
৩০০ আসনেই বিএনপির প্রার্থী প্রচারণায় নামতে পারছেন না, তাঁদের বাধা দেওয়া হচ্ছে—রুহুল কবির রিজভীর এমন অভিযোগের জবাবে নানক বলেন, বিএনপির পুরোনো অভ্যাস। তারা এই মিথ্যাচার নির্বাচনের দিন বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত করবে। এমন বক্তব্যে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করার কোনো সুযোগ নেই।
দলের বিদ্রোহী প্রার্থী প্রসঙ্গে সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে নানক বলেন, ‘আওয়ামী লীগে কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী নেই। কিছু প্রার্থী আছেন, যাঁদের ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে হবে এবং আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের প্রার্থীর পক্ষে মাঠে কাজ করতে হবে। না হলে আমরা কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক আবদুস সবুর, তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক আফজাল হোসেন প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
আজ শনিবার নির্বাচনী প্রচারণার এক সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ড. কামালের সমালোচনা করে বলেছেন, তাঁর বক্তব্যে দেশের মানুষ ব্যথিত হয়েছে। ড. কামালের মতো মানুষের মুখে এ ধরনের বক্তব্য শোভা পায় না।