ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার হয়ে কারাবন্দী অবস্থায় লেখক মুশতাক আহমেদ মারা যান। তিনি বারবার জামিন চেয়েও পাননি। নিজের জীবন দিয়েই তাঁকে জামিন নিতে হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কণ্ঠরোধের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে। আজ শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় বিশিষ্টজনদের আলোচনায় এসব বিষয় উঠে এসেছে।
লেখক মুশতাক আহমেদ স্মরণে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
২০২০ সালের মে মাসে লেখক মুশতাক আহমেদ, কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক কথাবার্তা ও গুজব ছড়ানোর অভিযোগে তাঁরা দুজনসহ মোট ১১ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তখন মামলা করেছিল র্যাব। সেই মামলায় মুশতাকের জামিন আবেদন ছয়বার নাকচ হয়। আর গত বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে মারা যান তিনি।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক সাইফুল হক বলেন, আইনের চোখে সবাই সমান হলেও মুশতাক ছয়বার জামিন চেয়েও পাননি। বিচার বিভাগ কাগজে–কলমে স্বাধীন হলেও সরকারের ইচ্ছার বিরুদ্ধে রায় দেওয়া সম্ভব হয় কি না, সে প্রশ্ন তোলেন তিনি। এ ছাড়া সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
মুশতাক আহমেদের মৃত্যু পুরো রাষ্ট্রকে ‘উদোম’ করে দিয়েছে উল্লেখ করে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, একজন ব্যবসায়ীকে নিয়ে কার্টুন ও ছড়া লেখার অভিযোগে মুশতাক ও কিশোরকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। এই ব্যবসায়ী কতটা ক্ষমতাবান যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যক্তিগত বাহিনীর মতো ব্যবহার করেছেন। মুশতাককে আদালত জামিন দেননি। নিজের জীবন দিয়ে জামিন নিতে হয়েছে।
বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয় বলেও আলোচনায় উল্লেখ করেন জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির কাছে যে ১০ জনের নামই দেওয়া হোক না কেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
পিলখানা হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে গণসংহতি আন্দোলনের এই নেতা বলেন, এত বছর পরেও এ ঘটনার কোনো সত্যিকারের ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। দেশি-বিদেশি অনেক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠেছে। রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব যে নাজুক অবস্থায় আছে, তা এ ঘটনা সামনে এনেছে।
মানুষের সমর্থন কোনো দলের সঙ্গেই খুব বেশি নেই বলে মনে করেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম। তিনি বলেন, ১৩ বছরেও মানুষ আন্দোলনে নামছে না। কিছু বিষয় মানুষের কাছে স্পষ্ট করতে হবে। মানুষ তখনই জীবন দিতে উদ্বুদ্ধ হবে, যখন মানুষকে একটি গ্রহণযোগ্য মুক্তির পথ দেখানো যাবে।
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ হাসিবউদ্দিন হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনায় আরও অংশ নেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক মহাসচিব নঈম জাহাঙ্গীর, জেএসডির কার্যকরী সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ, নাগরিক ঐক্যের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহিদুর রহমান প্রমুখ।