প্রায় এক যুগ রাষ্ট্রক্ষমতার বাইরে বিএনপি। ১০ বছর পর জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে দলটি। এবারের নির্বাচনে দলটি অংশ নিলেও দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ও বর্তমান চেয়ারম্যান খালেদা জিয়া পরিবারের কেউ নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেই। মামলা, কারাদণ্ড ও পলাতক থাকার সমস্যার কারণে এবার জিয়া পরিবারহীন নির্বাচনে যাচ্ছে বিএনপি।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর ১৯৯১ সালে প্রথমবারের মতো ভোটে অংশ নেয় বিএনপি। ওই নির্বাচনে খালেদা জিয়া ও তাঁর ভাই সাঈদ ইস্কান্দার ভোটে অংশ নেন। এরপর প্রতিটি নির্বাচনে খালেদা জিয়া ভোটে অংশ নিয়ে একাধিক আসনে জয়লাভ করেন। ভোটে প্রার্থী না হলেও বিভিন্ন সময় খালেদা জিয়া ও জিয়াউর রহমানের পরিবারের সদস্যরা ভোটে মাঠে ছিলেন। ২০০১–এর নির্বাচনে দলটির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্বাচন পরিচালনায় সরাসরি ভূমিকায় ছিলেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন যাচাই–বাছাইয়ের শেষ দিন ছিল গতকাল রোববার। তিনটি আসনে বিএনপির কারাবন্দী চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া হয়েছিল। সকালে ফেনী-১ আসন ও দুপুরে ‘জিয়া পরিবারের আসন’ হিসেবে পরিচিত বগুড়া-৬ (সদর) ও বগুড়া-৭ আসনে খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। দুটি মামলায় খালেদা জিয়ার সাজার কথা উল্লেখ করে ফেনীর রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদ উজ জামান ফেনী-১ আসনে খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিল করেন। মামলায় সাজার বিষয়টি উল্লেখ করে বগুড়া-৬ ও ৭ আসনে খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিল করেন বগুড়ার রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহাম্মদ।
বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত। তিনি এখন যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছেন। ভোটের আগে তাঁর দেশে ফেরার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। এর মধ্যেই তিনি তাঁর বাংলাদেশি পাসপোর্ট জমা দিয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন মামলায় সাজা বহাল থাকার কারণে তাঁর দেশে না ফেরার বিষয়টি একপ্রকার নিশ্চিত।
তারেক রহমানের সহধর্মিণী জোবায়দা রহমানও বর্তমানে লন্ডনে অবস্থান করছেন। তিনিও তাঁর বাংলাদেশি পাসপোর্ট সমর্পণ করেছেন, এ কারণে তিনিও দেশে ফিরছেন না বলে বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে। যদিও জোবায়দা রহমানের দেশে ফেরার বিষয়টি নিয়ে বিএনপির ভেতরে বিভিন্ন গুঞ্জন চলছিল, কিন্তু পাসপোর্ট না থাকার কারণে সে আশাও ফিকে হয়ে গেছে।
খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান। শর্মিলা তাঁর দুই মেয়ে নিয়ে বিদেশেই থাকেন। মালয়েশিয়া ও যুক্তরাজ্যেই তাঁর বাস। চলতি বছরের ৭ এপ্রিল খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) নেওয়া হয়। ওই দিন শর্মিলা রহমান তাঁর দুই মেয়েকে নিয়ে খালেদা জিয়াকে দেখতে যান। এবারের নির্বাচনে শর্মিলা রহমান কোনো আসন থেকে মনোনয়ন সংগ্রহ করেননি।
জানতে চাইলে গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির চোখ দিয়ে দেখলে মনে হবে এটি একটি বড় আঘাত। পরিবারকেন্দ্রিক দল, কারিশমা নিয়ে দলটির জন্য এটি একটি বড় আঘাত হবে। কিন্তু আরেক দিয়ে বলা যায় যে বিএনপি এর মধ্য দিয়ে অনেকটাই পরিবারতন্ত্র থেকে বেরিয়ে এসেছে। সত্যিকার অর্থে একটি গণতান্ত্রিক দল হিসেবে গড়ে তোলার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এই সুযোগ বিএনপি নিতে পারবে কি না, এটি বিএনপির ওপর নির্ভর করছে।
একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ফেনী থেকে খালেদা জিয়ার প্রয়াত ভাই সাঈদ ইস্কান্দারের স্ত্রী নাসরিন ইস্কান্দারের নির্বাচন করার কথা ছিল। শেষ সময়ে তিনিও নির্বাচনে অংশ নেননি। খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কাদারও ভোট করছেন না। অবশ্য তিনি রাজনীতিতে সক্রিয়ও নন।
নীলফামারী-১ আসন থেকে এবার ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করবেন রফিকুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি খালেদা জিয়ার ছোট বোন সেলিনা ইসলাম বিউটির স্বামী। আজ রফিকুল ইসলাম চৌধুরীর মনোনয়ন বৈধ বলে ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। এ ছাড়া রফিকুল ইসলামের ছেলে শাহরিন ইসলাম বর্তমানে পলাতক। খালেদা জিয়ার প্রয়াত বড় বোন খুরশিদ জাহান চকলেটের ছেলে শাহরিয়ার রহমান বর্তমানে রাজনীতিতে সক্রিয় নন।
গত বছরের ২৩ নভেম্বর জিয়াউর রহমানের ছোট ভাই আহমেদ কামাল মারা যান। জিয়াউর রহমানের পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে আহমেদ কামাল ছিলেন সবার ছোট। ভাইবোনদের মধ্যে তিনিই শুধু জীবিত ছিলেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জিয়াউর রহমানের পরিবারের কোনো সদস্য এবার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন না।