উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে ছাত্রলীগ তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা গল্প ফেঁদেছে— জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের এমন দাবির জবাবে ছাত্রলীগের কণ্ঠ অনেকটা নমনীয়। তবে উপাচার্যকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেছেন, ‘তিনি যে বলেছেন আমরা তাঁর কাছে গিয়ে চার থেকে ছয় পার্সেন্ট দাবি করেছি, এটা তিনি প্রমাণ করুন।’
আজ শনিবার দুপুরে নিজের বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছাত্রলীগকে চ্যালেঞ্জ দেন। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রধানমন্ত্রীর কাছে লেখা খোলা চিঠিতে তাঁর সম্পর্কে যা লিখেছেন, তা ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’ বলেও দাবি করেন তিনি।
উপাচার্য ফারজানা ইসলাম আজ সাংবাদিকদের বলেন, ‘তাদের (ছাত্রলীগ) মূল উদ্দেশ্য ছিল যে তারা ঠিকাদারের কাছ থেকে কিছু কমিশন নেবে। তারা এ বিষয়ে আমাকে ইঙ্গিত দিয়েছে। কিন্তু আমার কাছে এসে তারা হতাশ হয়েছে। তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে যে খোলা চিঠি লিখেছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।’ তিনি বলেন, খোলা চিঠিতে তারা মিথ্যা গল্প ফেঁদেছে। আমি তাদের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলাম।
এর প্রতিক্রিয়ায় ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী আজ সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটি সত্য নয়। আমরা চ্যালেঞ্জ দিলাম, ম্যাম (উপাচার্য) এর প্রমাণ দিক যে আমরা পার্সেন্টেজ চেয়েছি।’
উপাচার্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগকে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন-—গতকাল এমন কথা বললেও আজ এ বিষয়ে সুর পাল্টেছেন রাব্বানী। আজ তিনি বলেন, ‘এটা শোনা কথার ভিত্তিতে বলেছিলাম।’
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফারজানা ইসলাম ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের প্রথম ধাপের ৪৫০ কোটি টাকার মধ্যে ২ কোটি টাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের মধ্যে ভাগাভাগি করে দেওয়া হয়—এমন খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এর পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেনের এই অভিযোগ তদন্তসহ তিন দফা দাবিতে ক্যাম্পাসে আন্দোলন শুরু হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন উপাচার্য। গত বৃহস্পতিবার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন তিনি। আলোচনায় আন্দোলনকারীদের দুই দফা দাবি মেনে নিলেও আর্থিক লেনদেনের অভিযোগের বিষয়ে আগামী বুধবার পর্যন্ত সময় নেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ঘটনার বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেছেন, কেন্দ্রীয় কমিটি নয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সঙ্গে উপাচার্যের ছেলে ও স্বামীর এই লেনদেন হয়েছে। উপাচার্যের স্বামী ও ছেলে এই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। এর জবাবে উপাচার্য বলেন, টাকা লেনদেনের বিষয়ে তাঁর কিংবা তাঁর পরিবারের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
গোলাম রাব্বানী গতকাল আরও বলেন, তাদের পার্সেন্টেজ চাওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়। উপাচার্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগকে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। আমাদের নলেজের বাইরে ছাত্রলীগকে এই টাকা দেওয়া হয়েছে। ছাত্রলীগের সব সাংগঠনিক ইউনিটকে দেখাশোনার দায়িত্ব নেত্রী আমাদের দিয়েছেন। এসব বিষয় নিয়ে নেতিবাচক খবর হলে তার দায়ভার আমাদের ওপরও বর্তায়। তখন আমি ও সভাপতি উপাচার্য ম্যামকে জিজ্ঞেস করি তিনি টাকা কেন দিলেন, নিশ্চয়ই আপনার বা আপনার ঘনিষ্ঠ কারও সংশ্লিষ্টতা আছে! এ কথাটিকে তিনি ব্যক্তিগতভাবে নিয়েছেন।
আজ সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভা বসেছে। এই সভায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি শীর্ষ নেতৃত্বের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিতে পারেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আরও পড়ুন:
‘ছাত্রলীগ মিথ্যা গল্প ফেঁদেছে, আমি চ্যালেঞ্জ দিলাম’
ছাত্রলীগের নেতৃত্ব: টাকার ভাগ নিয়ে যত ঝামেলা