দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ শুরু করছে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের পরামর্শ নেওয়ার জন্য এ সংলাপের আয়োজন করা হচ্ছে। ১৩ মার্চ শিক্ষাবিদদের সঙ্গে মতবিনিময়ের মধ্য দিয়ে এ কার্যক্রম শুরু হবে।
ইসি সূত্র বলছে, পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে সংলাপ আয়োজন করা হবে। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও সংলাপ করার চিন্তা আছে ইসির। তবে এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত কিছু ঠিক হয়নি।
এর আগেও বিগত তিনটি নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ করেছিল। তবে সর্বশেষ দুটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ছিল নানা বিতর্ক। কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশনের সময় সংলাপে যেসব সুপারিশ এসেছিল, তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বেশির ভাগ সুপারিশই আমলে নেওয়া হয়নি।
এই সংলাপ যেন লোকদেখানো বা প্রতারণামূলক না হয়।বদিউল আলম মজুমদার ,সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক
নূরুল হুদা কমিশনের বিদায়ের পর গত ২৭ ফেব্রুয়ারি নতুন কমিশন শপথ নেয়। কমিশন এখনো সে অর্থে কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করেনি। নির্বাচনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলে আসছেন, গত দুটি কমিশন দেশের নির্বাচনব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। ভোট এবং ইসির প্রতি মানুষের আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। এই সংকট দূর করে আস্থা অর্জন করাটা নতুন কমিশনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এ সংলাপ আস্থা অর্জনে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা নতুন দায়িত্ব নিয়েছেন। একটি সুন্দর, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কীভাবে করা যায়, এ বিষয়ে অংশীজনদের কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়ার উদ্দেশ্যে তাঁরা সংলাপে বসছেন। পর্যায়ক্রমে নাগরিক সমাজ, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, নির্বাচন বিষয়ে গবেষকসহ নানা শ্রেণি–পেশার মানুষের সঙ্গে তাঁরা আলোচনা করবেন।
একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত কমিশন সাতটি কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করেছিল। এগুলো হচ্ছে আইনি কাঠামো পর্যালোচনা ও সংস্কার, নির্বাচনপ্রক্রিয়া সহজ ও যুগোপযোগী করার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পরামর্শ গ্রহণ, সংসদীয় এলাকার সীমানা নির্ধারণ, নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও সরবরাহ, ভোটকেন্দ্র স্থাপন, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন ও নিবন্ধিত দলের নিরীক্ষা এবং নির্বাচনসংশ্লিষ্ট সবার সক্ষমতা বাড়ানো। মূলত এই বিষয়গুলোকে আলোচ্যসূচিতে রেখে সংলাপ হয়েছিল। তবে এর বাইরেও বিভিন্ন বিষয়ে সংলাপে সুপারিশ এসেছিল। এবারের সংলাপে এখন পর্যন্ত নির্ধারিত কোনো আলোচ্যসূচি ঠিক করা হয়নি।
ইসি সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ প্রথম আলোকে বলেন, প্রতি কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষের সঙ্গে বসে। এবার প্রথমে শিক্ষাবিদদের সঙ্গে এ সংলাপ শুরু করা হচ্ছে। ৩০ জনের মতো প্রথম দিনের সংলাপে অংশ নেবেন বলে তাঁরা আশা করছেন। নির্ধারিত কোনো আলোচ্যসূচি নেই, বিভিন্ন বিষয়ে তাঁদের পরামর্শ নেওয়া হবে।
প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা নতুন দায়িত্ব নিয়েছেন। একটি সুন্দর, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কীভাবে করা যায়, এ বিষয়ে অংশীজনদের কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়ার উদ্দেশ্যে তাঁরা সংলাপে বসছেন।মো. আলমগীর, নির্বাচন কমিশনার
এর আগে এ টি এম শামসুল হুদা, কাজী রকিব উদ্দীন ও নূরুল হুদা কমিশনও জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ করেছিল। নূরুল হুদা কমিশনের সংলাপে ৩৯টি রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধি, পর্যবেক্ষক সংস্থা, নারীনেত্রী ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা অংশ নিয়েছিলেন। সেই সংলাপে আসা সুপারিশগুলো তিন ভাগে ভাগ করেই মূলত দায়িত্ব শেষ করেছিল ইসি। জাতীয় নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন, ইভিএম ব্যবহার, ‘না’ ভোটের বিধান চালু করাসহ কয়েকটি বিষয়ে পক্ষে-বিপক্ষে সুপারিশ এসেছিল সংলাপে। গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়গুলো ‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল’ হিসেবে চিহ্নিত করেই দায়িত্ব শেষ করে ইসি।
আর সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল, কিছু মন্ত্রণালয়কে নির্বাচনের সময় ইসির অধীন নেওয়াসহ ছয়টি সুপারিশকে ‘সাংবিধানিক বিষয়’ হিসেবে চিহ্নিত করে। ইসি বলেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের কিছু করার নেই।
এ ছাড়া নির্বাচনী আইনের সংস্কার, সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করাসহ ৩৪টি প্রস্তাব ও সুপারিশকে ইসি নিজেদের এখতিয়ারভুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করেছিল নূরুল হুদা কমিশন। কিন্তু এসব বিষয়েও কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, সংলাপের উদ্যোগটি ইতিবাচক। এর মাধ্যমে অংশীজনদের মতামত শুনে আস্থা অর্জনে কাজে লাগাতে পারবে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ হলো যেসব সুপারিশ আসবে, সেগুলো বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেওয়া। এই সংলাপ যেন লোকদেখানো বা প্রতারণামূলক না হয়।