বিশ্বমানের নির্বাচন করতে হলে জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্বাচনকালে নির্বাচন কমিশনের অধীন ন্যস্ত করতে হবে বলে মনে করেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও শীর্ষ নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘আমার মতে আগামী জাতীয় নির্বাচনের একটাই চ্যালেঞ্জ। তা হলো সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন করা। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।’
অন্যদিকে, আগামী জাতীয় নির্বাচন বিশ্বমানের হতে হবে। বিশ্বমানের নির্বাচন করতে হলে একটি নিরপেক্ষ সরকার দরকার। গ্রহণযোগ্য সরকারই কেবল গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের নিশ্চয়তা দিতে পারে বলেও মনে করেন সাবেক এই কমিশনার।
দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় জাতীয় নির্বাচনের প্রতিটি আসনে অধিষ্ঠিত সংসদ সদস্যদের পদে বহাল রেখে সুষ্ঠু নির্বাচনের ধারণা বাতুলতামাত্র উল্লেখ করে মাহবুব তালুকদার বলেন, নির্বাচনের আগে সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ না করলে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’, অর্থাৎ সবার জন্য সমসুযোগ নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। জাতীয় নির্বাচনে জেলা প্রশাসকদের তাঁদের নিজস্ব এলাকায় রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করা হয়ে থাকে।
মাহবুব তালুকদার বলেন, জেলা প্রশাসকের বদলে নির্বাচন কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তাঁদের স্থলাভিষিক্ত করা প্রয়োজন। যদি একান্তই জেলা প্রশাসকদের রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করতে হয়, তাহলে জাতীয় নির্বাচনের নির্দিষ্ট সময়ের আগে তাঁদের ভিন্ন জেলায় বদলি করা আবশ্যক।
বর্তমানে সংলাপের যে ধারা পরিলক্ষিত হচ্ছে, তা গতানুগতিক মনে করেন মাহবুব তালুকদার। তিনি বলেন, ‘বিগত কমিশনগুলোর সংলাপ পর্যালোচনা করলে দেখা যা, আমন্ত্রিত সুধীজন প্রায় একই ধরনের পরামর্শ দিয়েছেন। ইভিএম বা ভোটকেন্দ্রের পাহারা এই মুহূর্তের চ্যালেঞ্জ নয়। আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, বিশ্বমানের নির্বাচন করতে হলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্বাচনকালে নির্বাচন কমিশনের অধীন ন্যস্ত করতে হবে। পুলিশের কার্যক্রম কঠোরভাবে মনিটর ও নিয়ন্ত্রণ করা আবশ্যক।’
অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে হলে নির্বাচন কমিশন ও সরকারের সংলাপ প্রয়োজন বলেও মনে করেন মাহবুব তালুকদার। তিনি বলেন, ‘আমি যে রূপরেখা উপস্থাপন করলাম, তার বাস্তবায়ন করতে হলে সংবিধান সংশোধন করা অপরিহার্য।
দুই “এম পি”, অর্থাৎ মানি পাওয়ার ও মাসল পাওয়ারকে প্রতিহত করতে হবে। অন্যদিকে, নির্বাচনী আচরণবিধি ও অন্যান্য বিধিবিধান পরিপালনে শূন্য সহিষ্ণু নীতির কোনো বিকল্প নেই। সংবিধান সংশোধন না করা হলে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার পরিবর্তন করা যাবে না। নির্বাচনী প্রক্রিয়ার পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী।