ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জার বক্তব্য প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দলীয় সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কেউ দলে অপরিহার্য নয়। কোনো বিশেষ ক্ষেত্রে কাউকে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। দলের শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে যেকোনো সিদ্ধান্ত দলীয় সভাপতি নিতে পারবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের টানা এক যুগ পূর্তি উপলক্ষে আজ বুধবার সকালে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। দলের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটি আয়োজিত শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণের ওই অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের তাঁর সরকারি বাসভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন।
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌরসভায় ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আবদুল কাদের মির্জা। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটির সহসভাপতিও। গত বৃহস্পতিবার থেকে হঠাৎ স্থানীয় বিভিন্ন সভায় তাঁর বক্তব্য দেশের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জার বক্তব্য প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, শেখ হাসিনার ঊর্ধ্বে কেউ নয়, দল করলে সবাইকে দলের শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের ধারাবাহিকতায় গত ১২ বছরে বাংলাদেশ উন্নয়ন-অগ্রগতির সব সূচকে যুগান্তকারী মাইলফলক স্পর্শ করেছে বলে মন্তব্য করেন সড়ক পরিবহনমন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশ আজ বিশ্বসভায় উন্নয়নের রোল মডেল। অর্থনীতি-আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশকে ছাড়িয়ে অগ্রগতির অভূতপূর্ব স্মারক বহন করছে বাংলাদেশ।
সেতুমন্ত্রী বলেন, দেশের গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে ও গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপায়ণে অর্জিত হয়েছে দৃশ্যমান সফলতা। স্বাধীনভাবে কাজ করছে দুর্নীতি দমন কমিশন, নির্বাচন কমিশনসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান।
করোনার মতো বৈশ্বিক মহামারি নিয়ন্ত্রণ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশ বিশ্বে অনুকরণীয় রাষ্ট্রের মর্যাদা পেয়েছে বলে উল্লেখ করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার প্রজ্ঞা, দৃঢ়তা, সাহসিকতা, সততা ও কর্মনিষ্ঠা আজ বিশ্বনন্দিত। একসময়ে তলাবিহীন ঝুড়ির বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বিস্ময়। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এখন ফিরে পেয়েছে ঐতিহ্য।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, পাট রপ্তানিতে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে প্রথম। ইলিশে প্রথম, তৈরি পোশাক রপ্তানিতে দ্বিতীয়। চাল উৎপাদনে চতুর্থ স্থানে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ পুলিশ বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় অনবদ্য অবদান রেখে চলছে বলে উল্লেখ করেন ওবায়দুল কাদের।
সেতুমন্ত্রী বলেন, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে অতীতের অবিশ্বাসের কৃত্রিম দেয়াল ভেঙে নির্মিত হয়েছে সম্পর্কের নতুন সেতুবন্ধ। সমাধান হয়েছে দীর্ঘদিনের ছিটমহল বিনিময় কার্যক্রম।
সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বলেন, সামাজিক ও যোগাযোগ অবকাঠামো নির্মাণের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের যোগাযোগ খাতে রীতিমতো বিপ্লব সাধিত হয়েছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, শতভাগ বিদ্যুৎ, পায়রা বন্দর, মাতারবাড়ী প্রকল্প, গভীর সমুদ্রবন্দর, বছরের প্রথম দিনে পাঠ্যপুস্তক উৎসব প্রধানমন্ত্রীর অবদান। শেখ হাসিনার হাত ধরেই মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণাধীন। স্বপ্নের পদ্মা সেতু এখন দৃশ্যমান।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মনে করেন, সরকারের পরিবর্তন হতে পারে। কিন্তু সরকারের গৃহীত নীতি ও পরিকল্পনা চলমান থাকবে। ভিন্ন ভিন্ন দল সরকারে আসতে পারে, তবে রাষ্ট্রের লক্ষ্য ও অর্জনের ধারাবাহিকতা গতিশীল থাকবে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, উন্নয়নে প্রতিহিংসা থাকবে না। উন্নয়ন প্রবহমান জলধারার মতো। জনমানুষের পাশে যতক্ষণ শেখ হাসিনা আছেন, ততক্ষণ কোনো অপশক্তিই দেশকে পিছিয়ে দিতে পারবে না।
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা আর শেখ হাসিনার ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নির্মাণে দলমত-নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান সেতুমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী প্রমুখ।