ছাত্রলীগের স্লোগান-তালিতে মধুর ক্যানটিনে কোণঠাসা ছাত্রদল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে ছাত্রদলের অবস্থান, ঢাকা, ১৭ অক্টোবর
ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসার প্রেক্ষাপটে দীর্ঘ দেড় বছর পর আজ রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে এসেছিল ছাত্রদল। ক্যানটিনের ভেতরে ও বাইরে ছাত্রলীগের মুহুর্মুহু স্লোগান ও তালিতে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল তারা। তবে এ ঘটনায় কোনো অভিযোগ না করে ছাত্রদলের নেতারা ছাত্রলীগের কাছে ‘আরও সহনশীলতা’ প্রত্যাশা করেছেন৷

আজ সকাল ১০টায় কিছু নেতা-কর্মী নিয়ে মধুর ক্যানটিনের সামনে আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম। কিছুক্ষণ পরে আসেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্যসচিব আমানউল্লাহ আমান। এরপর ছাত্রদল নেতা-কর্মীরা বিচ্ছিন্নভাবে ক্যানটিনের সামনে আসতে থাকেন। তাঁরা ক্যানটিনের পশ্চিম পাশের দরজার সামনের রাস্তায় অবস্থান নেন।

ছাত্রদলের আসার খবর পেয়ে সকাল সাড়ে আটটা থেকেই মধুর ক্যানটিনে জমায়েত হয়েছিল ছাত্রলীগ। ক্যানটিনের ভেতরে ও বাইরে ছাত্রলীগের বিভিন্ন হল শাখার বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী অবস্থান করছিলেন। তাঁরা ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের লক্ষ্য করে নানা স্লোগান দিচ্ছিলেন। সকাল ১০টা ২০ মিনিটে মোটরসাইকেলে করে মধুর ক্যানটিনের সামনে আসেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ফজলুর রহমান। তিনিও অন্যদের সঙ্গে ক্যানটিনের পশ্চিম পাশের দরজার সামনের রাস্তায় অবস্থান নেন।

সাড়ে ১০টায় ছাত্রদলের তিন শীর্ষ নেতার (ফজলুর, রাকিবুল ও আমানউল্লাহ) নেতৃত্বে মধুর ক্যানটিনে ঢোকেন ছাত্রদলের ৪০ থেকে ৫০ জন নেতা-কর্মী। নেতা-কর্মীদের আরেকটি অংশ ক্যানটিনের বাইরে অবস্থান করেন। ক্যানটিনে ছাত্রদল নেতা-কর্মীরা ঢোকামাত্র ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আরও জোরে স্লোগান দেওয়া শুরু করেন, সঙ্গে চলতে থাকে বিরতিহীন হাততালি। ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের ঘিরে ধরে তাঁরা ‘মৌলবাদের আস্তানা, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ প্রভৃতি বলে স্লোগান দেন৷ ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকেন৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে ছাত্রলীগের অবস্থান, ঢাকা, ১৭ অক্টোবর

বেলা সাড়ে ১১টায় ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা মধুর ক্যানটিন থেকে বেরিয়ে যান। এ সময় তাঁদের লক্ষ্য করে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের অনেকে স্লোগান দেন। ছাত্রদল নেতা-কর্মীরা ক্যানটিন এলাকা থেকে চলে গেলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাও মধুর ক্যানটিন ত্যাগ করেন। ক্যানটিন থেকে বেরিয়ে ছাত্রদলে নেতা-কর্মীরা যান ক্যাম্পাসের টিএসসির ডাস ক্যাফেটেরিয়ায়। সেখানে সংগঠনের সভাপতি ফজলুর রহমানের সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের পর তাঁরা ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন।

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ফজলুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আমাদের নিয়মিত রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করব। এখন থেকে মধুর ক্যানটিনে আমরা আবারও নিয়মিত হব। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমাদের আহ্বান থাকবে, ক্যাম্পাসে সব ছাত্রসংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত করতে তারা যেন সচেষ্ট হয়।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘ দেড় বছর আমরা সংগঠিতভাবে মধুর ক্যানটিনে আসিনি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় আজ এলাম। আজকের ঘটনার বিষয়ে বলব, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে আমরা আরও সহনশীল আচরণ প্রত্যাশা করি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেন এসব বিষয়ে সচেষ্ট হয়।’

মধুর ক্যানটিনে আজ সকালে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের কেউ উপস্থিত ছিলেন না। কেন্দ্রীয় সাহিত্য সম্পাদক ও শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল শাখার সাধারণ সম্পাদক আসিফ তালুকদারের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল শাখার নেতা-কর্মীরা ক্যানটিনে অবস্থান নিয়েছিলেন। জানতে চাইলে আসিফ তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘মধুর ক্যানটিনে আমরা আমাদের নিয়মিত কর্মসূচি পালন করেছি। ছাত্রদলের কাউকে আমরা কোনো বাধা দিইনি। আমাদের যে সংখ্যক নেতা-কর্মী মধুর ক্যানটিনে ছিলেন, আমরা চাইলে পুরো ক্যানটিন কানায় কানায় পূর্ণ রাখতে পারতাম। সেটি হলে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা ক্যানটিনে ঢুকতেই পারতেন না। কিন্তু আমরা তা করিনি। আমাদেক পক্ষ থেকে সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব আগেও ছিল, সামনেও থাকবে। ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের কাছ থেকেও আমরা দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করি।’

দীর্ঘ নয় বছর ক্যাম্পাসছাড়া থাকার পর ২০১৯ সালে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নির্বিঘ্নে আসার সুযোগ পায় ছাত্রদল। এর মধ্যে কয়েকবার ছাত্রলীগের মারধরের শিকার হলেও তাঁরা ক্যাম্পাসে অবস্থান অব্যাহত রেখেছেন। করোনা পরিস্থিতিতে ছাত্রদল নেতা-কর্মীরা টিএসসি এলাকায় নিয়মিত জড়ো হলেও মধুর ক্যানটিনে যাননি৷ দেড় বছর পর আজ তাঁরা ক্যানটিনে গেলেন।