ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে চলছে তুমুল আলোচনা। হলে ভোটকেন্দ্রের পক্ষে থাকা ছাত্রলীগ বলছে, হলে নির্বাচনের পরিবেশ আছে এবং এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য। আর বিপক্ষে থাকা ছাত্রদল ও বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলো বলছে, হলে ভোটকেন্দ্র করা হলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোট দিতে পারবেন না। তবে অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের মাধ্যম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসগুলোর কমিটির নেতারা ছাত্রলীগের বক্তব্যের সঙ্গেই কণ্ঠ মিলিয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে সংবাদ সম্মেলন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস কমিটির নেতাদের সংগঠন ‘সম্মিলিত বাস রুট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’। সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়, নির্ভয়ে-নিঃশঙ্কচিত্তে ও আনন্দময়ভাবে ভোটদানের সার্বিক পরিবেশ হলগুলোতে রয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান ফাল্গুনী বাস কমিটির সভাপতি নূর মোহাম্মদ বাপ্পী।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘ডাকসু নির্বাচনকে ঘিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ও অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে কৃত্রিম বিভেদ সৃষ্টির অপচেষ্টা করা হচ্ছে। অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা হলের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে সম্পৃক্ত। হলে আমাদের যাতায়াত অবাধ। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কর্মকাণ্ড হলের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের হলে ভোটদানের সার্বিক পরিবেশ আছে। ডাকসু নির্বাচন নিয়ে আর কোনো জল ঘোলা হোক, তা আমরা চাই না।’
বাসে যাতায়াতকারী অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে সাত দফা দাবি তুলে ধরা হয়। ডাকসু নির্বাচনে বিভিন্ন সংগঠন ও জোটের ইশতেহারে এসব দাবির অন্তর্ভুক্তি চান তাঁরা। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রত্যেক রুটে বাস বৃদ্ধি, নতুন ডাবল ডেকার বাস, বাসের রুট বৃদ্ধি, বিআরটিসির পক্ষ থেকে দক্ষ চালক ও হেলপার নিয়োগ ইত্যাদি।
জানতে চাইলে সম্মিলিত বাস রুটের সমন্বয়ক রাকিব হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য কোনো সংগঠন বা জোটের পক্ষ থেকে তাঁদের এখনো ডাকা হয়নি। ছাত্রলীগের নেতারা তাঁদের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনায় বসেছেন। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের যেকোনো সংগঠন বা জোটের সঙ্গে ডাকসু নির্বাচনে যেতে তাঁরা প্রস্তুত রয়েছেন। তবে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন হওয়ায় শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া আদায়ে ছাত্রলীগ অন্য যেকোনো ছাত্রসংগঠনের চেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে পারবে বলে মনে করেন তাঁরা।
চৈতালী, ফাল্গুনী ও বৈশাখী বাসে যাতায়াতকারী কয়েকজন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সংবাদ সম্মেলনের ব্যাপারে বাস কমিটির শীর্ষ নেতারা তাঁদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করেননি। এ বিষয়ে সম্মিলিত বাস রুটের অন্যতম নেতা ও ক্ষণিকা বাসের সভাপতি মো. রায়হান বলেন, বাসের শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি সাধারণ জরিপের ভিত্তিতে পাওয়া বক্তব্যই তাঁরা সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বৈশাখী বাসের সভাপতি মো. শামীম, আনন্দ বাসের সভাপতি মাহমুদুল হাসান, হেমন্ত বাসের সভাপতি মোবারক হোসেন, উল্লাস বাসের সাধারণ সম্পাদক সজল মজুমদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য সিঙ্গেল ও ডাবল ডেকার মিলিয়ে প্রায় ৬০টি বাস রয়েছে।
এর আগে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র-ভিত্তিক (টিএসসি) সংগঠনগুলোর নেতারাও ছাত্রলীগের সঙ্গে একমত হয়ে জানান, ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র ঐতিহ্য মেনে তাঁরা হলেই যান। (https://www.prothomalo.com/bangladesh/article/1578969)