চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আজ বুধবার রাতে প্রথম আলোকে এ তথ্য জানিয়েছেন উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী।
উপাচার্য প্রথম আলোকে বলেন, আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাধ্যক্ষ কমিটির সভা ছিল। সে সভায় চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের নীতিমালা সংগ্রহ করা হবে। সেগুলো পর্যালোচনা করে চাকসুর নীতিমালা নতুন করে প্রণয়ন করা হবে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও কথা বলা হবে। সহাবস্থান ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গেও আলাপ-আলোচনা করা হবে। এরপর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হলের প্রাধ্যক্ষ মোহাম্মদ বশির আহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, প্রাধ্যক্ষেরা উপাচার্যের নির্দেশমতে কাজ শুরু করবেন। পর্যায়ক্রমে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কাজ এগিয়ে নেওয়া হবে।
সর্বশেষ চাকসু নির্বাচন হয় প্রায় ২৯ বছর আগে। ১৯৯০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। এই নির্বাচনের দাবিতে ছাত্রলীগসহ অন্যান্য ছাত্রসংগঠনগুলো দীর্ঘদিন ধরে কর্মসূচি পালন করে আসছে।
চাকসুর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি শিক্ষাবর্ষে একবার এই নির্বাচন হবে। মেয়াদ হবে এক বছর। ১৯ সদস্যের চাকসুর কমিটিতে উপাচার্য পদাধিকারবলে সভাপতি। কোষাধ্যক্ষ পদটি শিক্ষকদের মধ্য থেকে একজন মনোনীত করবেন উপাচার্য। বাকি ১৭টি পদ ছাত্রদের। তাঁরা ছাত্রদের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হবেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ-১৯৭৩-এর ২২ ধারা অনুযায়ী, সিনেটের ১০১ সদস্যের ৫ জন হবেন ছাত্র প্রতিনিধি। কিন্তু চাকসু না থাকায় সিনেটে কোনো ছাত্র প্রতিনিধি নেই। ফলে ছাত্র প্রতিনিধি ছাড়াই প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হচ্ছে সিনেট সভা।
১৯৬৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর প্রথম চাকসু নির্বাচন হয় ১৯৭০ সালে। ওই নির্বাচনে সহসভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন যথাক্রমে মো. ইব্রাহিম ও মো. আবদুর রব। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন আবদুর রব। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সরকারের আমলে ১৯৭১-৭২ এবং ১৯৭২-৭৩ সালে চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর জিয়াউর রহমানের আমলে দুবার এবং এরশাদের আমলে একবার নির্বাচন হয়। এরশাদের পতনের পর থেকে আর নির্বাচন হয়নি।
ছাত্রসংগঠনগুলোর বক্তব্য
চাকসু নির্বাচন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ দিলেও অন্যান্য সংগঠনগুলো আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।
ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক এইচ এম ফজলে রাব্বী প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার্থীদের কথা শোনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ। তবে শুধু সিদ্ধান্ত নিলেই হবে না। এখন শিক্ষার্থী ও ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে এবং দ্রুত তফসিল ঘোষণা করতে হবে।
ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ধীষণ প্রদীপ চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। এখন নির্বাচনের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। ডাকসু নির্বাচনে যেসব অনিয়ম দেখেছি, সেসব যেন চাকসু নির্বাচনে না ঘটে—সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। পাশাপাশি ছাত্র সংগঠনগুলো রাজনৈতিক শিষ্টাচার বজায় রেখে আচরণ করতে হবে।
প্রায় একই কথা বলেন ছাত্রদলের সভাপতি কে আলম। তিনি প্রথম আলোকে ‘গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণপূর্বক নির্বাচনের যে পরিবেশ তা ক্যাম্পাসে এখন নেই। কোনো কর্মসূচি পালন করতে গেলেই ছাত্রলীগের আঘাতের সম্মুখীন হচ্ছি আমরা। প্রশাসনও দলীয় লেজুড়ভিত্তিক। তাই সব ক্রিয়াশীল সংগঠনের জন্য পরিবেশ সৃষ্টি না করে নির্বাচন দিলে তা ডাকসু আর জাতীয় নির্বাচনের মতোই প্রহসনের নির্বাচন হবে।’