গত বৃহস্পতিবার সিলেট নগরের কোর্ট পয়েন্টে বিএনপি-ছাত্রদলের বিক্ষোভে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছে। সেই মামলায় আসামি করা হয়েছে সিলেট জেলা যুবদলের আহ্বায়ক সিদ্দিকুর রহমানকে। অথচ ঘটনাস্থলে থাকা তো দূরের কথা, ঘটনার এক সপ্তাহ আগেই যুক্তরাজ্যে গেছেন বিএনপির এই নেতা!
সিলেট জেলা বিএনপির অভিযোগ, শুধু সিদ্দিকুর নন, ওই দিন ঘটনাস্থলে ছিলেন না এমন অনেক নেতাকর্মীকেই আসামি করা হয়েছে পুলিশের সেই মামলায়। মামলার এই আসামি তালিকাকে ‘গায়েবি’ তালিকাও বলছেন জেলা বিএনপির নেতারা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজ হওয়ার খবর পেয়ে গত বৃহস্পতিবার বেলা দুইটার দিকে সিলেট নগরের কোর্ট পয়েন্ট ও তালতলা এলাকায় বিক্ষোভ করে বিএনপি। এ সময় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের জেলা সভাপতি আলতাফ হোসেনের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল বের করার চেষ্টা করা হলে সেখানে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। ঘটনাস্থলে অবস্থানরত দুই পুলিশ সদস্য তখন আলতাফকে ধরার চেষ্টা করেন। কিন্তু পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করে পালিয়ে যান আলতাফ।
ঘটনার পরদিন শুক্রবার পুলিশের উপপরিদর্শক অঞ্জন কুমার দাশ ‘বিস্ফোরণ ঘটিয়ে জননিরাপত্তা বিঘ্ন ঘটানোর’ অভিযোগ এনে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। মামলায় ২৯ নম্বর আসামি করা হয়েছে ঘটনার এক সপ্তাহ আগেই যুক্তরাজ্যে চলে যাওয়া যুবদল নেতা সিদ্দিকুরকে। বিএনপির দাবি, এজাহারে নাম উল্লেখ করা ৩৮ জনের মধ্যে ১৭ জন সেদিন ঘটনাস্থলেই ছিলেন না।
বিক্ষোভে উপস্থিত না থাকা অন্তত সাতজন নেতার সঙ্গে কথা হলে তাঁরা বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে ওই কর্মসূচি পালিত হওয়ায় অনেকেই যোগ দিতে পারেননি। কিন্তু মামলায় পুলিশ তাঁদের নাম দিয়েছে।
যুক্তরাজ্যে থাকা নেতাকে আসামি করে মামলা করার বিষয়টিকে হাস্যকর বলেছেন জেলার সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আলী আহমদ। তিনি বলেন, শুধু যে হয়রানির জন্যই মামলা করে পুলিশ, এটা তারই প্রমাণ।
এদিকে পুলিশের করা মামলাটিকে ‘ষড়যন্ত্রমূলক’ আখ্যা দিয়ে অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে মহানগর বিএনপি। শুক্রবার রাতে এক বিবৃতিতে মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শামীম সিদ্দিকী বলেন, এটি একটি ষড়যন্ত্রমূলক মামলা। এই মামলা প্রমাণ করে, পুলিশ সরকারের লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে বিরোধী নেতাকর্মীদের দমন পীড়নে মেতে উঠেছে।
শনিবার বিকেলে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম মিঞা প্রথম আলোকে বলেন, প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য নিয়ে ঘটনাস্থলে থাকা ব্যক্তিদের নামে মামলা করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত আসামি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এই নামটি আমরা প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে পেয়েছি, তাই আসামির তালিকায় রাখা হয়েছে। তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেলে নাম বাদ দেওয়া হবে।’