করোনাভাইরাসের সংক্রমণের পরিস্থিতির মধ্যে পোশাক কারখানা (গার্মেন্টস) খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় কারখানার মালিকদের 'স্বার্থান্বেষী' বলেছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন। সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতারা বলেছেন, গার্মেন্টসগুলোর মালিকপক্ষ সরকারের 'ভ্রান্ত নীতির' সুযোগ নিয়ে শ্রমিকদের জীবন ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি সাখাওয়াত ফাহাদ ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মেঘমল্লার বসু গণমাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে এসব কথা বলেন৷ বর্তমান পরিস্থিতিতে গার্মেন্টস খোলার সিদ্ধান্তকে 'হঠকারিতা' আখ্যা দিয়ে তাঁরা গার্মেন্টস বন্ধ রাখার দাবি জানান৷
বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়, যেখানে বারবার সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার কথা বলা হচ্ছে, সেখানে সরকার গার্মেন্টসগুলোকে সাধারণ ছুটির আওতার বাইরে রেখে এই খাতের অসংখ্য শ্রমিকের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে৷ অথচ শ্রমিকদের বেতন দিতে যাতে অসুবিধা না হয়, সেই জন্য সরকার এই দুর্যোগের শুরুতেই রপ্তানিমুখী এই শিল্পগুলোর জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ ঘোষণা করেছে৷ কিন্তু পরজীবী মালিকপক্ষের লোভের কোনো অন্ত নেই৷ বিজিএমইএ ও সরকার কেউই নাকি তাদের বাধ্য করতে পারেন না, স্রেফ অনুরোধ করতে পারেন! বরাবরের মতো সেই সুযোগই কাজে লাগাচ্ছেন তাঁরা। চাকরি বাঁচাতে শ্রমিকদের ময়মনসিংহের মতো দূরবর্তী অঞ্চল থেকে পায়ে হেঁটে রাজধানীর দিকে আসতে দেখা গেছে৷ এ যেন জীবনের মৃত্যমুখী পদযাত্রা!
শ্রমিকদের জীবনঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে বাধ্য করার নীতিকে গণহত্যার সামিল উল্লেখ করে ছাত্র ইউনিয়নের নেতারা বিবৃতিতে আরও বলেন, বাংলাদেশের গার্মেন্টস কারখানাগুলোতে পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করার কোনো ব্যবস্থা নেই৷ এমন পরিস্থিতিতে যদি শ্রমিকদের মধ্যে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়, তাহলে তা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া ঠেকানো অসম্ভব হয়ে পড়বে৷ প্রত্যেক নাগরিকের সুস্বাস্থ্যের নিশ্চয়তা দেওয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব৷ রাষ্ট্রের ভুলে জনসংখ্যার এই বিপুল উৎপাদনশীল অংশকে মৃত্যুঝুঁকিতে ঠেলে দেওয়া হলো, এটি রাষ্ট্রের গণহত্যা হিসেবেই গণ্য হবে। আমরা এই ধরনের হঠকারিতা অবিলম্বে বন্ধ করার দাবি জানাচ্ছি৷
বিবৃতিতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে বলা হয়, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে উদ্ভূত বর্তমান পরিস্থিতিতে সমস্ত কলকারখানা বন্ধ রাখতে হবে৷ কারখানা বন্ধ থাকাকালীন শ্রমিকদের নিয়মিত বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে হবে৷ যেসব রপ্তানিমুখী ব্যবসা এই সময় শ্রমিক ছাঁটাইয়ের চেষ্টা করবে, জনগণের করের টাকা থেকে তারা যেন এক পয়সাও প্রণোদনা না পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে৷ রাষ্ট্রের দায়িত্বে শ্রমিক পরিবারগুলোর জন্য দৈনন্দিন খাদ্য রেশন নিশ্চিত করতে হবে৷