জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন, গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার চেষ্টা করে কেউ পার পাবে না। তিনি বলেন, জাতীয় চার নেতার স্মৃতি ধরে রেখে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা হবে।
রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে আজ শনিবার বিকেলে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ আয়োজিত জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. কামাল এ কথা বলেন।
ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরও গণতন্ত্র উপেক্ষিত। গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু কেউ পারে নাই। যারা চেষ্টা করেছে, তাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, কেউ পারে নাই। পারবে না।’ তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্র হয়েছে। এরপরও আমরা মাথা উঁচু করে আছি। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব আমাদের মাঝে আছে। আজকের এই স্মরণসভা আমাদের প্রেরণা জাগানোর এক সভা।’
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে চার জাতীয় নেতাকে স্মরণ করে ড. কামাল বলেন, বঙ্গবন্ধু ও চার নেতার স্মৃতি ধরে রেখে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা হবে। বঙ্গবন্ধুর কথা স্মরণ করে তরুণ সমাজের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘মন্ত্রী হওয়া বা প্রধানমন্ত্রী হওয়া বড় কিছু না। মানুষকে তার শক্তি ও আত্মবিশ্বাসের জন্ম দেওয়াই স্বাধীনতার মূল দিক। বাঙালি জাতিকে কোনো সময়ই কেউ পরাজিত করতে পারবে না।’
এ আলোচনা সভার আয়োজক কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকীর এ অনুষ্ঠানে তিনি (কাদের সিদ্দিকী) জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেবেন কি না, সে বিষয়ে নিজের অবস্থান জানানোর কথা ছিল। তবে সভায় কাদের সিদ্দিকী জানান, আরও এক দিন সময় নিয়ে আগামী ৫ তারিখ সোমবার নিজের অবস্থান জানাবেন।
সভাপতির বক্তব্যে কাদের সিদ্দিকী বলেন, বেসরকারিভাবে কামাল হোসেন সমগ্র জাতির নেতা। কামাল হোসেন বাংলাদেশের যেখান থেকে নির্বাচন করবেন, সেখান থেকেই জিতবেন। এ ছাড়া যেদিন সংলাপ হয়েছে সেদিনই ঐক্যফ্রন্টের বিজয় হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
গবেষক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ জাতীয় চার নেতাকে স্মরণ করে বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো দলীয় পরিচয় নেই। কামাল হোসেনকে বঙ্গবন্ধুর স্নেহভাজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, কামাল হোসেনকে কটূক্তি করা বেদনাদায়ক।
ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র ও জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, নির্বাচন না হলে এবং জাতি কোনো সংকটের মুখে পড়লে তাঁর দায়ভার এই সরকারকে নিতে হবে।
গত বৃহস্পতিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের সংলাপে বসে খাওয়ার কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন নাগরিক ঐক্যের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, ‘রুদ্ধদ্বার বৈঠকের ছবি কীভাবে বাইরে এল? রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ জায়গার ছবি এভাবে প্রকাশিত হলেও এখন ডিজিটাল আইনের প্রয়োগ নাই।’ মান্না আরও বলেন, জনগণ যখন জেগে উঠেছে তখন মানুষের মনে নিরাশার পানি ছিটানোর জন্য তারা এই সংলাপ ডেকেছে। আরও একবার সংলাপে যাওয়ার কথা বলেন তিনি। ৭ তারিখের পর সংলাপ হবে না—আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মান্না বলেন, সংলাপ আরও হতে পারে।
এ আলোচনা সভায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সব দলের নেতারা উপস্থিত থাকলেও বিএনপির কেউ ছিলেন না। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, মোস্তাফা মহসিন মন্টু, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের ইকবাল সিদ্দিকী, নাসরিন সিদ্দিকী ও হাবিবুর রহমান।