খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় প্রার্থী জেতার পাশাপাশি বেশিসংখ্যক কাউন্সিলর পদেও জিতেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ফল ঘোষিত সাধারণ ও সংরক্ষিত ৩৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে আওয়ামী লীগ–সমর্থিত ১৮ জন অন্যদিকে বিএনপি সমর্থিত ৯ জন জিতেছেন।
ঘোষিত ৩০টি সাধারণ ওয়ার্ডের মধ্যে ১২টিতে আওয়ামী লীগ–সমর্থিত এবং ৯টি বিএনপি–সমর্থিত প্রার্থী কাউন্সিলর হিসেবে জয়লাভ করেছেন। আর সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরের মধ্যে ছয়জন আওয়ামী লীগের রয়েছেন। বিএনপির কেউ সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে জিততে পারেননি।
গতকাল মঙ্গলবার খুলনা সিটি করপোরেশনে ভোট গ্রহণ হয়। ৩১টি সাধারণ ওয়ার্ডের মধ্যে ৩০টির ফল ঘোষণা করা হয়েছে। অনিয়মের কারণে কেন্দ্র বাতিল হওয়ায় একটি ওয়ার্ডের ফল ঘোষিত হয়নি। আর ১০টি সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের মধ্যে দুটির ফল স্থগিত আছে।
ভোটের দিন ৩১ নম্বর ওয়ার্ড এবং ৯ ও ১০ নম্বর সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের তিনটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন।
সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে বিজয়ীদের মধ্যে ১২ জন আওয়ামী লীগের, ৯ জন বিএনপির, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ৪ জন এবং স্বতন্ত্র হিসেবে ৪ জন জয় পেয়েছেন। এ ছাড়া সমর্থন দেওয়ার পর বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত একজন কাউন্সিলর প্রার্থীও জয় পেয়েছেন।
আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে নির্বাচিত কাউন্সিলররা হলেন ৩ নম্বর ওয়ার্ডে আবদুস সালাম, ১১ নম্বর ওয়ার্ডে মুন্সী আবদুল ওয়াদুদ, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে এস এম খুরশিদ আহমেদ টোনা, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে মোশাররফ হোসেন, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে আমিনুল ইসলাম মুন্না, ২১ নম্বর ওয়ার্ডে শেখ শামসুজ্জামান মিয়া স্বপন, ২২ নম্বর ওয়ার্ডে কাজী আবুল কালাম আজাদ বিকু, ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে আলী আকবর টিপু, ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে জেড এ মাহমুদ ডন, ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে আজমল আহমেদ তপন, ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে ফকির সাইফুল ইসলাম, ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে এস এম মোজাফ্ফর রশিদী রেজা।
বিএনপি থেকে নির্বাচিত কাউন্সিলররা হলেন ২ নম্বর ওয়ার্ডে সাইফুল ইসলাম, ৬ নম্বর ওয়ার্ডে শামসুদ্দিন আহমেদ প্রিন্স, ৭ নম্বর ওয়ার্ডে সুলতান মাহমুদ পিন্টু, ৮ নম্বর ওয়ার্ডে মো. ডালিম হাওলাদার, ১২ নম্বর ওয়ার্ডে মো. মনিরুজ্জামান মনি, ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে হাফিজুর রহমান মনি, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে আশফাকুর রহমান কাঁকন, ২০ নম্বর ওয়ার্ডে গাউসুল আজম ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে শমসের আলী মিন্টু ।
স্বতন্ত্র হিসেবে ৪ নম্বর ওয়ার্ডে কবির হোসেন কবু মোল্লা, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে আনিসুর রহমান বিশ্বাষ, ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে ইমাম হাসান চৌধুরী ময়না ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে গোলাম মওলা শানু।
এ ছাড়া দলের সমর্থন না পেয়ে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহ হিসেবে জয় পেয়েছেন ১ নম্বর ওয়ার্ডে শেখ আবদুর রাজ্জাক, ৫ নম্বর ওয়ার্ডে মোহাম্মদ আলী, ৯ নম্বর ওয়ার্ডে মাহফুজুর রহমান লিটন, ১০ নম্বর ওয়ার্ডে কাজী তালাত হোসেন। আর বিএনপির সমর্থন পেয়ে পরে বহিষ্কার হয়ে ১৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জিতেছেন হাফিজুর রহমান হাফিজ।
সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর
ঘোষিত আটটি ওয়ার্ডের মধ্য ছয়টিতে আওয়ামী লীগ–সমর্থিত প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন। দুটিতে জয় পেয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী।
বিজয়ী আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা হলেন ২ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডে সাহিদা বেগম, ৪ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডে পারভীন আক্তার, ৫ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডে মেমোরী সুফিয়া রহমান শুনু, ৬ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডে আমেনা হালিম বেবী, ৭ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডে মাহমুদা বেগম ও ৮ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কনিকা সাহা।
সংরক্ষিত ১ নম্বর ওয়ার্ডে স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরা আক্তার ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডে রহিমা আক্তার হেনা জয় পেয়েছেন।
বর্তমান ১১ কাউন্সিলর পরাজিত
এবারের নির্বাচনে অংশ নেন বর্তমান ৩০ কাউন্সিলর। এর মধ্যে ১১ জনই পরাজিত হয়েছেন। তাঁরা হলেন ১ নম্বর ওয়ার্ডের শাহাদাত মিনা, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের এস এম হুমায়ুন কবির, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাহিদুর রহমান, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের শেখ জাহিদুল ইসলাম, ১০ নম্বর ওয়ার্ডের ফারুক হিল্টন, ১১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউনুস আলী সরদার, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের এস এম আবুল কালাম আজাদ, ২২ নম্বর ওয়ার্ডের মাহবুব কায়সার, ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের ওয়াহেদুর রহমান দিপু, ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের গিয়াসউদ্দিন বনি এবং ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের আমানউল্লাহ আমান। ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের দুটি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত থাকায় ফলাফল ঘোষণা হয়নি।
তিন মেয়র প্রার্থীর জামানত বাতিল
খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ছাড়া অন্য তিনটি দলের মেয়র প্রার্থীদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। তাঁরা হলেন চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী মাওলানা মুজ্জাম্মিল হক, জাতীয় পার্টির প্রার্থী এস এম শফিকুর রহমান মুশফিক ও সিপিবির মিজানুর রহমান বাবু।
এর মধ্যে মুজ্জাম্মিল হক ১৪ হাজার ৩৬৩ ভোট, শফিকুর রহমান মুশফিক ১ হাজার ৭২ এবং মিজানুর রহমান বাবু ৫৩৪ ভোট পেয়েছেন।