রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের সড়ক বন্ধ করে সমাবেশ করছে বিএনপি। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে তাঁকে বিদেশে পাঠানোর পাশাপাশি তাঁর নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে বিএনপির নেতা-কর্মীরা এ সমাবেশ করছেন।
আজ রোববার সকাল ১০টা থেকে এ সমাবেশ করার পূর্বঘোষণা ছিল। তবে ঘোষিত সময়ের আগেই সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশের আয়োজক বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর শাখা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল নয়টা থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে প্রেসক্লাবের সামনে আসতে থাকেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা।
সকাল পৌনে ১০টার দিকে প্রেসক্লাবের সামনের সড়ক বিএনপির নেতা-কর্মীতে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। একপর্যায়ে প্রেসক্লাবের সামনের এক পাশের সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে এ সড়ক দিয়ে চলাচলকারী যানবাহন অন্য পথ হয়ে চলাচল করছে।
বেলা পৌনে ১১টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে নির্মিত অস্থায়ী মঞ্চে বিএনপির নেতারা বক্তৃতা করছেন। রাজধানীর বিভিন্ন ইউনিট থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে এখনো প্রেসক্লাবের সামনে আসছেন।
বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর শাখার উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে ছাত্রদল, যুবদলসহ দলটির অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও অংশ নিচ্ছেন।
বিএনপির এ সমাবেশকে কেন্দ্র করে সমাবেশস্থলের আশপাশে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
জাতীয় প্রেসক্লাবে প্রবেশের সব কটি ফটক বন্ধ করে রাখা হয়েছে। সাংবাদিক ছাড়া আর কাউকে প্রেসক্লাবের ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।
সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এখন দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা বক্তৃতা রাখছেন।
সমাবেশ থেকে খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে তাঁকে দেশের বাইরে পাঠানোর দাবি জানাচ্ছেন দলটির নেতারা।
খালেদা জিয়া গত শুক্রবার গভীর রাতে অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাতেই তাঁকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে এনজিওগ্রামের পর তাঁর আর্টারিতে একটি স্টেন্ট (রিং) স্থাপন করা হয়েছে।
গতকাল শনিবার বিকেলে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়ার ‘মাইল্ড হার্ট অ্যাটাক’ হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তির পর এনজিওগ্রাম করতে গিয়ে দেখা গেছে, খালেদা জিয়ার হৃৎপিণ্ডের মূল রক্তনালিতে ৯৯ শতাংশ ব্লক রয়েছে। পরে সফলভাবে সেখানে রিং বসানো হয়েছে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, রিং পরানোর কারণে আপাতত হার্টের সমস্যা থেকে সাময়িকভাবে খালেদা জিয়া প্রতিকার পেয়েছেন। তিনি খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে সরকারের কাছে অনুরোধ জানান।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গতকাল বলেছেন, খালেদা জিয়াকে যদি বিদেশে যেতে হয়, আবার তাঁকে আইনি প্রক্রিয়া ও আদালতের কাছে যেতে হবে।
গত বছরের এপ্রিলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর এ নিয়ে খালেদা জিয়াকে পাঁচ দফা বেসরকারি হাসপাতাল এভারকেয়ারে ভর্তি করা হলো। এর আগে গত ৬ এপ্রিল নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তাঁকে একই হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল।
দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানো হয়। দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্ত সাপেক্ষে সাজা স্থগিত করে সাময়িকভাবে মুক্তি দেওয়া হয় খালেদা জিয়াকে। এর পর থেকে গুলশানের বাসায় থাকছেন তিনি।
২০২১ সালে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করার পর খালেদা জিয়ার পরিপাকতন্ত্রে রক্তক্ষরণ ও লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। এ ছাড়া খালেদা জিয়া অনেক দিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিসসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন।