সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হয়েছে বলে জানিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, আজই সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দেওয়া উচিত। এ জন্য আদালতের কাছে স্বেচ্ছাপ্রণোদিত জামিন ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার আদেশও প্রত্যাশা করেছেন ডা. জাফরুল্লাহ। গতকাল মঙ্গলবার জাফরুল্লাহ চৌধুরী অসুস্থ খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ার হাসপাতালে যান। সেখানে তাঁকে দেখে এসে আজ বুধবার সংবাদ সম্মেলন করেন। ধানমন্ডিতে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের বীর উত্তম মেজর হায়দার মিলনায়তনে খালেদা জিয়ার জামিনে মুক্তি ও সুচিকিৎসা বিষয়ে নাগরিক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন জাফরুল্লাহ।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আমি গতকাল এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়ে খালেদা জিয়াকে দেখে এসেছি। যা দেখেছি, সাম্প্রতিককালে এত মর্মান্তিক ঘটনা আমি দেখিনি। খালেদা জিয়া কতক্ষণ, কয় দিন, কয় মিনিট বাজবেন, তা আমি বলতে পারব না। এটা বলতে পারি, তিনি ক্রান্তিকালে আছেন, তাঁকে হত্যা করা হচ্ছে।’
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া অত্যন্ত কঠিন অবস্থায় আছেন। যেকোনো মুহূর্তে যেকোনো দিনে চলে (মারা) যেতে পারেন। তাঁর অবস্থা অত্যন্ত ক্রিটিক্যাল। ছয়জন চিকিৎসক আমাকে বিস্তারিতভাবে বলেছেন। আমি তাঁদের ফাইলের প্রতিটি লেখা (প্রেসক্রিপশন) পড়ে দেখেছি।’
জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘বিলেতে এ ধরনের রোগের চিকিৎসা আমিও করেছি। আমাদের শরীরে দুটি বিশেষ রক্তনালি আছে। তাঁর রক্তপাত হয়েছে। ব্লাড প্রেশারও নামতে নামতে ১০০–এর নিচে নেমে গেছে। তাঁকে রক্ত দিতে হয়েছে, রক্ত দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। রাত তিনটা পর্যন্ত চিকিৎসকেরা চেষ্টা করেছেন। সরকারকে বলব, আপনারাই বলেন, খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা, তা পৃথিবীর কোন কোন হাসপাতালে হয়। সম্ভব হলে আজই তাঁর ফ্লাই করা প্রয়োজন। তা না হলে তাঁর যেকোনো মুহূর্তে যেকোনো কিছু ঘটে যেতে পারে।’
খালেদা জিয়ার অপরাধ কী প্রশ্ন—রেখে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, তিনি তো টাকা চুরি করেননি। এক জায়গার টাকা আরেক জায়গায় রেখেছেন। খালেদা জিয়া তো তাঁর পকেটে টাকা নেননি। প্ল্যান করে তাঁকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে জেলে দেওয়া হয়েছে, দুর্ভাগ্যজনকভাবে পরে তাঁর কারাদণ্ড বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
বিচার বিভাগের উদ্দেশে জাফরুল্লাহ বলেন, ‘সুয়োমোটো রুল বলতে একটা কথা আছে, আজকে কেন বিচারপতিরা খালেদা জিয়ার মতো একজন মুমূর্ষু রোগীকে জামিন দিতে পারেন না? কেন তাঁকে বিমানে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারছেন না? খালেদা জিয়ার প্রতি মিনিটে জীবনীশক্তি কমে যাচ্ছে। রাষ্ট্রপতিকে বলব, আপনি হস্তক্ষেপ করুন।’
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার মতো একজন মুমূর্ষু রোগীকে যদি পর্যাপ্ত চিকিৎসা দেওয়া না হয়, প্রধানমন্ত্রী আপনি দায়ী হবেন। আপনি খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন।’ আইনমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনি বলেছেন, সাজাপ্রাপ্ত আসামি আ স ম আবদুর রব মার্শাল ল সরকারের সময় বিদেশে চিকিৎসা নিয়েছেন। আপনার কাছে আমার প্রশ্ন, আপনাদের সরকার কি মার্শাল ল সরকারের চেয়েও নির্মম?’
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক বলেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে উন্নত চিকিৎসায় আইন কখনো বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। তাঁর ব্যাপারে সরকারের দিক থেকে যে আইনের কথা বলা হচ্ছে, তা কুতর্ক।
আদালতের উদ্দেশে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেশের একজন নাগরিক হিসেবে তিনি সব ধরনের চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার রাখেন। আমি আশা করব, আদালত স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন। চিকিৎসকেরা আমাদের বলেছেন, দেশে খালেদা জিয়ার আর চিকিৎসা সম্ভব নয়। এখন দ্রুত তাঁকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য অথবা জার্মানির কোনো হাসপাতালে নিতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সদস্য হাসনাত কাইয়ুম।