বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেছেন, কয়েক দিন ধরে গণমাধ্যমে সূত্রবিহীন একটি খবর ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্যারোলে দেশের বাইরে চলে যাচ্ছেন, এমনকি তারা তারিখও বলে দিচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বিএনপির কোনো সূত্র এমন কিছুই জানে না। তিনি বলেছেন, ‘আইনি প্রক্রিয়ায় স্বাভাবিক পথে জামিনে মুক্তি চান খালেদা জিয়া। প্রধানমন্ত্রীকে বলব, খালেদা জিয়াকে নিয়ে মাইনাস ফর্মুলা বন্ধ করুন।’
আজ বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী এসব কথা বলেন। তিনি অভিযোগ করেন, সরকারপন্থী কয়েকটি গণমাধ্যম প্রতিদিন মনগড়া প্রোপাগান্ডা চালিয়ে যাচ্ছে। এই প্রোপাগান্ডাগুলোর সঙ্গে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও জড়িত বলে ব্যাপক গুঞ্জন আছে।
খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে রুহুল কবির রিজভী বলেন, খালেদা জিয়া প্রচণ্ড অসুস্থ, তা নিয়ে এই গণমাধ্যমগুলো নীরব। প্যারোল নিয়ে সরকারি মিশন সফল করার জন্য ক্ষমতাসীনেরা চতুর রাজনীতিতে লিপ্ত রয়েছে। তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়া শারীরিকভাবে খুবই বিপর্যস্ত। হাত-পা নাড়তে পারছেন না। আর্থ্রাইটিসের কারণে পা নাড়াতে পারছেন না। তাঁকে সুচিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না। গতকালও চিকিৎসকেরা বলেছেন, তাঁর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসছে না। এই অবস্থায় দেশনেত্রী চাইছেন তাঁর পছন্দমতো বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে। কিন্তু এই ‘অবৈধ’ সরকার তাঁর জীবন হুমকির মুখে ফেলে সুদূরপ্রসারী স্বার্থ সিদ্ধির ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে।
রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেন, ‘মধ্যরাতে ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতার মসনদ দখলে রাখা অবৈধ সরকার দেশ পরিচালনায় ব্যর্থ হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণতন্ত্রের লাশের ওপর দেশ চালাচ্ছেন। তাই কোনো কিছুই এখন যেন তাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। দেশে চলছে এক চরম নৈরাজ্য এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতিতে। দেশে কোনো সরকার আছে বলে অনুমিত হচ্ছে না। খুন-ধর্ষণ-লুটপাটে মত্ত হয়ে পড়েছে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা। পুলিশ প্রশাসনের যেসব কর্মকর্তা রাতের ভোটে ব্যালট বাক্স ভরে দিয়ে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় বসিয়েছে, তারাও বেপরোয়া হয়ে গেছে। সরকারকে পরোয়া করছে না। নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে তারা।’
ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহানের বিষয়ে বিএনপি নেতা রিজভী বলেন, যৌন নির্যাতনের প্রতিবাদ করায় ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা। সেখানকার ‘অন্ধকারের’ ভোটের এমপি থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ এবং পুলিশের সহযোগিতায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ওলামা লীগ নেতা সিরাজ উদদৌলা অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছিলেন দিনের পর দিন। তিনি আরও বলেন, যে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই পুলিশ বাহিনীর কর্মকর্তাদের দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। সরকার পুলিশ প্রশাসনের কাছে পুরোপুরি আত্মসমর্পণ করেছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সৎ সাহস হারিয়ে ফেলেছে সরকার। কারণ, ‘মিডনাইট’ নির্বাচনে পুলিশ প্রশাসন সহযোগিতা করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসিয়ে এখন ‘রক্ষার’ দায়িত্ব নিয়েছে। এই সরকারের কর্মকাণ্ডে স্পষ্ট হচ্ছে, এই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। তারা জনরোষ থেকে বাঁচার জন্য দোষী ব্যক্তিদের সাজা দেওয়া হবে বলে অভিনয় করছে।