বাকশাল নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে এই রাষ্ট্র আওয়ামী লীগের পরিচালনা করার কথা, কিন্তু আওয়ামী লীগ কি এই রাষ্ট্র পরিচালনা করছে? তারা করছে না।
আজ শুক্রবার ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কথা বলে। মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের প্রতিনিধি সভা উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, কিছু নেই এ দেশে, কিচ্ছু নেই এখন আর। এখন সম্পূর্ণভাবে মিথ্যার ওপরে, প্রতারণার ওপরে, রাষ্ট্রের সব স্তম্ভগুলোকে ভেঙে দিয়ে, প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভেঙে দিয়ে এরা তার ওপরে রাজত্ব করছে। তিনি বলেন, এরা টিকে আছে মানুষের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন করে। এরা টিকে আছে মানুষের পকেট খালি করে নিজেদের পকেট ভর্তি করার জন্য। আজকে যে মেগা প্রজেক্ট- এর অর্থ কোথায় থেকে আসছে? জনগণের পকেট থেকে।
আওয়ামী লীগের উদ্দেশে ফখরুল ইসলাম বলেন, ১৯৭৫ আর ২০১৯ বা ২০২০ সাল এক নয়। ফলে একদলীয় শাসনের যে স্বপ্ন আপনারা দেখছেন, রাজত্ব চিরস্থায়ী করবেন। কিন্তু এ দেশের জনগণ আর কোনো দিনই এ অবস্থা মেনে নেবে না। তিনি আরও বলেন, মহৎ উদ্দেশ্য নয়, ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে আবারও বাকশাল কায়েমের তোড়জোড় করছে সরকার। যখন নির্বাচন কমিশন স্বীকার করে নিয়েছে যে, নির্বাচন হচ্ছে না, তখন সরকার তাদের সব দুর্নীতি, অপকর্ম আড়াল করতে একদলীয় শাসনের আওয়াজ তুলতে শুরু করেছে।
মির্জা ফখরুল দাবি করেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের রাষ্ট্র পরিচালনা করার কথা থাকলেও প্রশাসন রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। তৎকালীন ১৯৭২-১৯৭৫ আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যর্থ হওয়ার ফলে দেশে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ হয়। তাদের দুর্নীতির কারণে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে ও রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণ করতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হলো, তখন জরুরি আইন চালুর মধ্য দিয়ে একদলীয় বাকশাল কায়েম করে। সেই বাকশালের পেছনে কোনো মহৎ উদ্দেশ্য ছিল না। সেই বাকশালের কারণ ছিল তাদের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করা।
খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবনতি হচ্ছে দাবি করে ফখরুল ইসলাম বলেন, পাকিস্তানের নওয়াজ শরিফ দোষী সাব্যস্ত হয়ে তিনি জামিনে আছেন। আওয়ামী লীগের যারা দোষী তারাও জামিনে। নাজমুল হুদা এক সময় বিএনপির সঙ্গে ছিলেন, তাঁর ১৯ বছর সাজা হলেও পাঁচ দিন পর বের হয়েছেন। সেখানে এক বছরের ওপরে হলো খালেদা জিয়াকে ‘বেআইনিভাবে’ আটকে রাখা হয়েছে। এর আগে একবার হাসপাতালে নিয়ে এসেছে কোনো চিকিৎসা ছাড়াই কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। এরপর সাড়ে তিন মাসে কোনো স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়নি।
নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির মহাসচিব ফখরুল বলেন, আমাদের আর পেছনে তাকানোর সময় নেই, আমাদের সামনের দিকে এগোতে হবে। আমরা পরাজিত হব না। দেশনেত্রীকে মুক্ত করে গণতন্ত্র মুক্ত করব। রাষ্ট্রকে গণতন্ত্র ব্যবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে আসা আমাদের দায়িত্ব। আমাদের রাষ্ট্রকে রক্ষা করতে হবে। গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে হবে, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করতে হবে। তিনি আরও বলেন, যুবক তরুণদের মধ্যে দেশপ্রেম ছড়িয়ে দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের। দেশে প্রেম ছড়িয়ে দিতে হলে আমাদের দেশে পথে-প্রান্তরে যেতে হবে। মানুষদের জাগিয়ে তুলতে হবে।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি সাদেক আহমেদ খানের সভাপতিত্বে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম প্রমুখ বক্তব্য দেন।