কাদের মির্জার অনুসারী দুই অস্ত্রধারী শনাক্ত

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খিজির হায়াত খানের চর কাঁকড়া ইউনিয়নের গ্রামের বাড়িতে হামলা চলাকালে অস্ত্র হাতে এক দুর্বৃত্ত। শনিবার রাত পৌনে আটটার দিকে এই হামলা হয়
ছবি: সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে নেওয়া।

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খিজির হায়াত খানের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর ও গুলির ঘটনায় জড়িত দুই অস্ত্রধারীর পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁদের একজন মো. মানিক (৩০) ও অপরজন মো. মাসুদ ওরফে পিচ্চি মাসুদ (২৬)। তাঁরা দুজনই বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জার অনুসারী হিসেবে পরিচিত। কাদের মির্জা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই।

আজ রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশ দুই অস্ত্রধারীর কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। মানিকের বাড়ি বসুরহাট পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে এবং মাসুদ কোম্পানীগঞ্জের মুছাপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। তবে হামলার ঘটনার পর কাদের মির্জার অনুসারী চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

অস্ত্রধারী মাসুদ এর আগে গত ১৩ মে বসুরহাটের করালিয়া এলাকায় আরেক সহযোগী সহিদ উল্যাহ ওরফে কেচ্ছা রাসেলের সঙ্গে অস্ত্র হাতে প্রকাশ্যে কাদের মির্জার প্রতিপক্ষ মিজানুর রহমানের অনুসারীদের ওপর গুলি চালিয়েছিলেন। ওই ঘটনার চার মাস পর গত ৭ সেপ্টেম্বর রাসেল জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে ধরা পড়েন। পুলিশের দাবি, প্রদর্শিত অস্ত্রটিও উদ্ধার করা হয়েছে। তবে মাসুদকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

গত শনিবার রাতে উপজেলার চরকাঁকড়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে খিজির হায়াত খানের বাড়িতে হামলার ঘটনার সিসি ক্যামেরার ফুটেজে মানিককে বন্দুক উঁচিয়ে বেশ কয়েকটি গুলি ছুড়তে আর পিচ্চি মাসুদকে পিস্তল হাতে মহড়া দিতে দেখা যায়। শনিবার দুপুরে নোয়াখালী জেলা স্কুল মাঠে জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সভায় কাদের মির্জার গত ১০ মাসের কর্মকাণ্ড নিয়ে বক্তব্য দেন খিজির হায়াত খান। এর জের ধরে রাতে হামলার ঘটনা ঘটে।

কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি মো. সাইফুদ্দিন আনোয়ার গতকাল বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ভিডিও ফুটেজ দেখে অস্ত্রধারী মানিককে শনাক্ত করেছেন। এ ছাড়া একই সময় আরেক অস্ত্রধারী পিচ্চি মাসুদও অস্ত্র হাতে সেখানে ছিলেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। দুজনকে গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান চলছে।

অনুসারীরা অস্ত্র নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে হামলার ব্যাপারে বক্তব্য জানতে গতকাল সন্ধ্যা ছয়টায় বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জার মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ধরেননি। একই বিষয়ে জানার জন্য সন্ধ্যায় কাদের মির্জাঘোষিত উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ইউনুছকে ফোন করা হলে তিনি বিষয়টি জানেন না বলে মুঠোফোনের কল কেটে দেন।
শনিবার রাতের হামলা-গুলির ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা খিজির হায়াত খান বাদী হয়ে গতকাল কোম্পানীগঞ্জ থানায় মামলা করেছেন। মামলায় মানিক, মাসুদসহ ১৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এজাহারের বর্ণনায় আসামিদের কাদের মির্জার অনুসারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এর আগে খিজির হায়াত খানের ওপর একবার ও তাঁর বাড়িতে দুবার হামলা চালানো হয়।

আওয়ামী লীগ নেতা খিজির হায়াত খান বলেন, তিনি ইচ্ছা করে আসামির তালিকায় কাদের মির্জার নাম দেননি। কারণ, কাদের মির্জার নাম উল্লেখ করে থানায় অভিযোগ করা হলে সেটি মামলা হিসেবে নেওয়া হয় না।

মামলার এজাহারের বর্ণনায় কাদের মির্জার নাম না থাকায় তিনি আসামি হবেন কি না জানতে চাইলে ওসি মো. সাইফুদ্দিন আনোয়ার বলেন, তা তদন্ত শেষ হওয়ার আগে বলা যাবে না। কাদের মির্জার নাম থাকলে মামলা না নেওয়ার ব্যাপারে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

দ্বন্দ্ব-সংঘাতে ৫০ মামলা, দুই খুন

গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পৌরসভা নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণাকালে জাতীয় নির্বাচন, বৃহত্তর নোয়াখালীতে দলের সাংসদদের বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলে কথিত ‘সত্যবচনে’ আলোচিত হন কাদের মির্জা। এরপর গত প্রায় ১১ মাসে দুই পক্ষে পাল্টাপাল্টি হামলা-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে ২৫-৩০টি। প্রাণ হারান স্থানীয় সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন ও শ্রমিক লীগ নেতা আলাউদ্দিন। এসব ঘটনায় উভয় পক্ষে এবং পুলিশ বাদী হয়ে থানায় মামলা করে ৫০টি।

খিজির হায়াত খানের বাড়িতে হামলার ঘটনাকে ন্যক্কারজনক উল্লেখ করে জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক এ এইচ এম খাইরুল আনম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, এই হামলার আগেই কোম্পানীগঞ্জের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি প্রতিবেদন দিলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।