চট্টগ্রামে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আজ শনিবারের সভায় কেন্দ্রীয় নেতারা তফসিল ঘোষণার আগে তাঁদের সঙ্গে আলোচনার দাবি করেন। তাঁরা বিএনপির কারারুদ্ধ চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তিও দাবি করেন। বিভিন্ন বক্তার বক্তব্যে উঠে আসে গণস্বাস্থ্যকেন্দ্র ভাঙচুরের ঘটনা। জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে মামলার প্রসঙ্গ টেনে আনেন তাঁরা।
আজকের সভায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেছেন, ‘আমাদের সঙ্গে আলাপ করা ছাড়া যদি তফসিল ঘোষণা করেন, তাহলে মনে করব সংসদ নির্বাচন বানচাল করতে চান। এটা মানব না। জনগণ যখন ঐক্যবদ্ধ হয়েছে তখন পালাবার পথ পাবেন না।’
গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের জাফরুল্লাহর গণস্বাস্থ্যকেন্দ্র ভাঙচুরের প্রতিবাদ জানিয়ে আ স ম রব বলেন, ‘জাফরুল্লাহর বিরুদ্ধে মাছ চুরির মালা দেওয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে সিঁধেল চুরির মামলা দেওয়া হয়েছিল। মাওলানা ভাসানীর বিরুদ্ধে গরু চুরির মামলা দেওয়া হয়েছিল। তাই মামলায় ভয় নেই।’
খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে তিনি বলেন, এ লড়াই গণতন্ত্রের। এ লড়াই খালেদার মুক্তির। তিনি নেতা–কর্মীদের উসকানিতে ধৈর্য না হারানোর পরামর্শ দেন।
মহাসমাবেশটির মঞ্চ করা হয় নাসিমন ভবনের বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনের ফুটপাতের ওপর। একপর্যায়ে ফুটপাত ছাপিয়ে মানুষ চলে যায় রাস্তার ওপর। রাস্তার এক পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর পর মানুষ সড়ক বিভাজকের ওপরও দাঁড়িয়ে পড়েন। সড়কের অন্য পাশটি এ সময় পুলিশকে চালু রাখতে হিমশিম খেতে হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘নেতাদের গ্রেপ্তার করেও জনজোয়ার বন্ধ করা যায়নি। সাত দফার ভিত্তিতে জনগণ আজ ঐক্যবদ্ধ। গণতন্ত্র আওয়ামী লীগের বাক্সে বন্দী। শেখ হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। আমাদের বিদেশের বন্ধুরাও বলেছেন অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতে হবে।’
২১ অক্টোবর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানো হয়। এর পরদিন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান ও নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেমকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এরপর মিরসরাই বিএনপির আরও ১২ নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, ‘দেড় মাসে ৫ হাজার মামলা হয়েছে। ৫ লাখ নেতা–কর্মীকে আসামি করেছে। আমরা মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করি। আমাদের ঐক্য হয়েছে। এই ঐক্য স্বৈরাচারের পতন ঘটাবে।’
বিভিন্ন বক্তার বক্তব্যে উঠে আসে গণস্বাস্থ্যকেন্দ্র ভাঙচুরের ঘটনা। জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে মামলার প্রসঙ্গ টেনে আনেন তাঁরা।
গণফোরামের নেতা মোস্তফা মহসিন মন্টু বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযোদ্ধা জাফরুল্লাহকে ২৩ একর জমি দান করেছিলেন মানুষের সেবা করার জন্য। তিনি স্বাস্থ্যসেবায় অনন্য ভূমিকা রেখে চলেছিলেন। কিন্তু সেই গণস্বাস্থ্যকেন্দ্র ভাঙচুর করা হলো।
গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, ‘আর ১০ দিন অপেক্ষা করেন বদরুদ্দোজা চৌধুরী এবং বাম দলগুলোও আমাদের সঙ্গে যোগ দেবে। বিজয় আসন্ন। আগামী নির্বাচনে বিজয়ের পর আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে। তখন ওষুধের মূল্য অর্ধেকে নেমে আসবে। দেড় লাখ টাকায় কিডনি প্রতিস্থাপন হবে।’
জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ বিভিন্ন বক্তারা চট্টগ্রামকে বিপ্লবী সূর্য সেন, অনন্ত সিংহ, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, আজিজ জহুরের ৬ দফা আন্দোলনের বীর চট্টগ্রাম হিসেবে আখ্যায়িত করে বক্তব্য দেন।
সমাবেশটি নাসিমন ভবনের দক্ষিণে নেভাল মোড় পর্যন্ত এবং উত্তরে কাজীর দেউড়ি পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। সমাবেশের নিরাপত্তার জন্য শত শত পুলিশ এবং র্যাব তৎপর ছিল। নেতা–কর্মীদের হাতে হাতে ছিল ব্যানার ফেস্টুন। আর চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ বিভিন্ন নেতার মুক্তি দাবি করে ব্যানার ফেস্টুন শোভা পায়।
নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর মুক্তি চাই। স্বাধীনতাবিরোধী ছাড়া যত দল এবং মানুষ আছে তারা একসঙ্গে ঐক্যফ্রন্টে আছে। অনেক দল অনেক লোক। চিন্তা ভিন্ন হতে পারে লক্ষ্য একটা। সেটা সরকার পতন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, মানুষ সরকারের ওপর বিরক্ত। মানুষ এই দলটি থেকে মুক্তি চায়।
স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, দেশে এখন ক্রান্তিকাল চলছে। বৃহত্তর ঐক্যফ্রন্টের লক্ষ্য গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, বুলেটের চেয়ে ব্যালট শক্তিশালী।
কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম চট্টগ্রামের ভাষায় বলেন, ২০–দলীয় জোট ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আছে এবং থাকবে।
মুজিবকোট পরে সমাবেশে যোগ দেন ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু সম্বোধন করে তিনি বলেন, এই আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ নয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ চট্টগ্রাম থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন মেজর জিয়াউর রহমান।
নগর বিএনপির সভাপতি শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক, এলডিপির সাধারণ সম্পাদক রেদোয়ান আহমেদ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা ও মোহাম্মদ শাহজাহান, জেএসডির তানিয়া রব প্রমুখ।