জোটভুক্ত হওয়ার আট মাসের মাথায় এসে বিএনপির প্রতি ক্ষোভ ও ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বের সমালোচনা করে ঐক্যফ্রন্টের এখন কোনো অস্তিত্ব নেই জানালেন কাদের সিদ্দিকী। তাঁর দল কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ঐক্যফ্রন্টের চিন্তা বাদ দিয়ে নতুন উদ্যমে পথচলার ঘোষণা দিয়েছে।
আজ সোমবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে দুপুর ১২টায় এক সংবাদ সম্মেলন করে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। দলটির সভাপতি কাদের সিদ্দিকী বলেন, নির্বাচনের পরে এই সাত মাস ঐক্যফ্রন্টকে খুব একটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। জাতীয় কোনো সমস্যাতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারছে না।
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল সিদ্দিকী লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। সেখানে বলা হয়, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অস্তিত্ব বা ঠিকানা খোঁজার চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে জনগণের সব সমস্যায় তাদের পাশে থাকার অঙ্গীকারে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ নতুন উদ্যমে পথচলা শুরু করছে।’ তাদের বক্তব্যে আরও বলা হয়, নির্বাচন–পরবর্তী সাত মাসে ঐক্যফ্রন্টের অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মতিঝিলে ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে অসমাপ্ত বৈঠক ছাড়া কোনো নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা হয়নি। এতে তাদের মনে হয়েছে, বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক জোট বা ফ্রন্ট গঠনই হয়নি।
ঐক্যফ্রন্ট ছেড়ে দিচ্ছেন কি না প্রশ্নের জবাবে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ঐক্যফ্রন্ট খুঁজে পাওয়া যায় না। তার কোনো কর্মকাণ্ড নেই। তবে জানান, তাদের লিখিত বক্তব্য সেটাই বোঝায়। ঐক্যফ্রন্টের বর্তমান অবস্থার দায় নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কাদের সিদ্দিকী বলেন, দায় কমবেশি সবার।
ঐক্যফ্রন্টের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। জোটের আহ্বায়ক ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের সমালোচনা করে বলা হয়, কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জোট গঠন হলেও তাঁকে তেমন সক্রিয় দেখা যায়নি। জোট গঠন হলেও মূলত জোটের অন্যতম শরিক বিএনপিকেন্দ্রিক সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে অভিযোগ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন জোটের অফিস থেকে হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অফিস থেকে বিএনপির নেতৃত্বে তা হয়েছে, যা ঐক্যফ্রন্ট গঠনের নীতিমালার পরিপন্থী বলে জানায় কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। এ ছাড়া জামায়াতকে একই প্রতীকে মনোনয়ন দেওয়ারও সমালোচনা করে তারা।
৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনকে জালিয়াতির নির্বাচন বলে মন্তব্য করে সংবাদ সম্মেলনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ বলে, নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে পুনর্নির্বাচনের দাবি সঠিক ছিল। তবে সে পথ থেকে সরে এসে গণফোরাম ও বিএনপির নির্বাচিতদের শপথ নেওয়ারও সমালোচনা করা হয়। এ ছাড়া মির্জা ফখরুলের শপথ না নেওয়াকে দ্বিচারিতা উল্লেখ করে বলা হয়, ‘জনগণ কোনো রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে এ রকম প্রতারণা প্রত্যাশা করে না।’
ফেনীর নুসরাত হত্যা, বরগুনার রিফাত হত্যা, কৃষকের ধানের ন্যায্য দাম না পাওয়াসহ জাতীয় কোনো ইস্যুতে ঐক্যফ্রন্ট দাঁড়ায়নি বলে অভিযোগ করে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ।
গত ৯ মে সংবাদ সম্মেলন করে কাদের সিদ্দিকী ঐক্যফ্রন্ট ছাড়ার আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন। তখনো তিনি ঐক্যফ্রন্টের নানান অসংগতি তুলে ধরেন। আজ সংবাদ সম্মেলনে সে বিষয়ে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ৯ মে তিনি জোটের সব শরিকদের চিঠি দেন। কিন্তু ৪ জুনের আগ পর্যন্ত কেউ তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। ৪ জুন ড. কামাল হোসেন তাঁকে ডাকেন। এরপর ১০ জুন জেএসডি সভাপতি আ স ম রবের বাসায় কামাল হোসেন বৈঠক ডাকেন। কিন্তু সে বৈঠকে কামাল হোসেন উপস্থিত ছিলেন না। তিনি না আসায় নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাও সেদিন উপস্থিত হননি বলে জানান কাদের সিদ্দিকী। এ ছাড়া তিনি বলেন, সেদিন আনুষ্ঠানিক সভা হয়নি, অপ্রয়োজনীয় আলোচনা হয়েছে। এরপরে প্রায় এক মাস হতে চললেও ঐক্যফ্রন্টে কোনো সাড়া শব্দ নেই বলে জানান তিনি।
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ জানায়, সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে তারা ঐকমত্যের ভিত্তিতে গণ-আন্দোলন করবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার, তাসনিম সিদ্দিকী প্রমুখ।