গত এপ্রিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে (এস এম হল) শিক্ষার্থী ফরিদ হাসান ও ডাকসুর ভিপি নুরুল হকসহ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের লাঞ্ছিত করার ঘটনায় এ মাসেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান গতকাল বুধবার এ কথা জানিয়েছেন।
গত ২ এপ্রিলের ওই ঘটনায় ৩ এপ্রিল তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল এস এম হল প্রশাসন। পরে ৯ এপ্রিল তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ করতে ভিপি নুরুলসহ আন্দোলনকারীদের কাছ থেকে আরও এক সপ্তাহ সময় চান উপাচার্য। আন্দোলনকারীরা তাতে রাজিও হন। সেই সময়সীমার প্রায় এক মাস পর ৭ মে কমিটি প্রতিবেদন দেয়।
উপাচার্য বলছেন, এস এম হলের সেই ঘটনায় হওয়া তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন হাতে পেয়েছেন তিনি। গতকাল তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ মাসেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা বোর্ডের (ডিবি) সভা আছে। সভায় তদন্ত প্রতিবেদনটি উঠবে। ডিবির সুপারিশের ভিত্তিতে পরে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট।’
এস এম হলের ঘটনায় হওয়া চার সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান অধ্যাপক সাব্বীর আহমেদ বলেন, তাঁরা ৭ মে উপাচার্যের হাতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। প্রতিবেদনে কী রয়েছে, তা বলার এখতিয়ার উপাচার্যের, তাঁর নয়।
এস এম হলের সেই ঘটনায় লাঞ্ছিত ডাকসুর ভিপি নুরুল হকের অভিযোগ, ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের অপরাধকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অপরাধই মনে করে না। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভেতরে অপরাধীদের আড়াল করার একটি অশুভ প্রবণতা রয়েছে। ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকার পরও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গড়িমসি করে থাকে। প্রশাসন আসলে ছাত্রলীগের হাতে জিম্মি।’ এস এম হলের ওই ঘটনায় যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়া হলে আসন্ন ঈদুল ফিতরের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে ফের আন্দোলন গড়ে তোলার হুমকি দিয়েছেন ভিপি নুরুল হক।
গত মার্চে অনুষ্ঠিত ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগের বাইরে গিয়ে প্রার্থী হন বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী ফরিদ হাসান। এর জের ধরে এস এম হল শাখা ছাত্রলীগ ও হল সংসদ নেতাদের নেতৃত্বে গত ১ এপ্রিল রাতে তাঁকে মারধর করা হয়। হল শাখা ছাত্রলীগ ও ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে নির্বাচিত হল সংসদের নেতারা ফরিদের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা ও সেবনের অভিযোগ তোলেন।
ফরিদকে মারধরের ঘটনার বিচার চেয়ে পরদিন বিকেলে হলের প্রাধ্যক্ষকে স্মারকলিপি দিতে যান ভিপি নুরুল হকসহ ডাকসু নির্বাচনে বিভিন্ন সংগঠন এবং জোট থেকে বিভিন্ন পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থকেরা। তাঁরা ওই হলে প্রবেশ করলে সেখানে হল শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাদের অবরুদ্ধ করে রাখেন।
এরপর সন্ধ্যায় ওই হল থেকে বের হতে গেলে নুরুল হক ও ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন, শামসুন নাহার হলের ভিপি শেখ তাসনীম আফরোজ, ছাত্র ফেডারেশন থেকে ডাকসুর জিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা উম্মে হাবিবা বেনজীর, স্বতন্ত্র জোট থেকে ডাকসুর ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা অরণি সেমন্তি খানসহ বেশ কয়েকজনকে মারধর ও লাঞ্ছিত করেন হল শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এ সময় তাঁদের লক্ষ্য করে ডিম নিক্ষেপও করেন তাঁরা। নিক্ষিপ্ত ডিম হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মাহবুবুল আলম জোয়ার্দারের গায়েও লাগে।
সেই ঘটনার বিচার চেয়ে ২ এপ্রিল রাত পৌনে আটটা থেকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। তাদের সঙ্গে যোগ দেন ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা-কর্মীরাও। আন্দোলনকারীদের পাশেই অবস্থান নেন এস এম হল সংসদ ও হল শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা নুরুলসহ আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে পাল্টা স্লোগান দেন।
৩ এপ্রিল সকাল নয়টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থানের পর আন্দোলনকারীরা উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে তাঁর কার্যালয়ে যান। উপাচার্য তাঁদের নাশতা করান ও বিচারের আশ্বাস দেন। পরে রাজু ভাস্কর্যে সংবাদ সম্মেলন করে ৮ এপ্রিলের মধ্যে বিচার না পেলে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করেন ভিপি নুরুল হক। ৯ এপ্রিল ফের উপাচার্যের কাছে গেলে উপাচার্য তদন্ত শেষ করতে আরও সাতদিন সময় চেয়ে নেন।