এরশাদ আর নেই

এইচ এম এরশাদ।
এইচ এম এরশাদ।

সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ রোববার সকাল পৌনে আটটায় এরশাদ মারা যান।

এরশাদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন তাঁর আত্মীয় ও জাতীয় পার্টির (জাপা) সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য খালেদ আখতার। এ ছাড়া আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকেও এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করা হয়েছে। আইএসপিআরের সহকারী পরিচালক রাশেদুল আলম খান প্রথম আলোকে বলেন, আজ সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে এইচ এম এরশাদ মারা যান।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ মারা যাওয়ার পরে দলীয় কার্যালয়ে কালো পতাকা ও দলের পতাকা উত্তোলন করা হয়। বনানী, ঢাকা, ১৪ জুলাই। ছবি: সাইফুল ইসলাম

গত ২৭ জুন সকালে এরশাদ (৮৯) অসুস্থবোধ করলে তাঁকে সিএমএইচে ভর্তি করা হয়। তিনি রক্তে হিমোগ্লোবিন-স্বল্পতা, ফুসফুসে সংক্রমণ ও কিডনির জটিলতায় ভুগছিলেন। তিনি লাইফ সাপোর্ট ছিলেন।

১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অবিভক্ত ভারতের কোচবিহার জেলায় জন্মগ্রহণ করেন এরশাদ। পরে তাঁর পরিবার রংপুরে চলে আসে। রংপুরেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করেন এরশাদ। ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করে ১৯৫২ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৬৯ সালে তিনি লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে পদোন্নতি পেয়ে ১৯৭১-৭২ সালে সপ্তম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধের পর পাকিস্তান থেকে প্রত্যাবর্তন করেন।

১৯৭৩ সালে এরশাদকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল নিয়োগ করা হয়। ১৯৭৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি ব্রিগেডিয়ার পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ওই বছরই আগস্ট মাসে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি দিয়ে তাঁকে সেনাবাহিনীর উপপ্রধান হিসেবে নিয়োগ করা হয়। ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বর মাসে এরশাদকে সেনাবাহিনীপ্রধান পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৯৭৯ সালে তিনি লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে পদোন্নতি লাভ করেন।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের মৃত্যুর খবরে দলীয় কার্যালয়ে কান্নায় ভেঙে পরেন এক কর্মী। বনানী, ঢাকা, ১৪ জুলাই। ছবি: সাইফুল ইসলাম

১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডের অব্যবহিত পর ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তারের নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন এরশাদ। ১৯৮৩ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত তিনি প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক (সিএমএলএ) হিসেবে দেশ শাসন করেন। এরপর রাষ্ট্রপতি আহসানউদ্দিন চৌধুরীকে অপসারণ করে ১৯৮৩ সালের ১১ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন এরশাদ। স্বৈরাচারবিরোধী প্রবল গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

১৯৯১ সালে জেনারেল এরশাদ গ্রেপ্তার হন। তাঁকে কারাবন্দী করে রাখা হয়। ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে জেলে অন্তরীণ থাকা অবস্থায় এরশাদ রংপুরের পাঁচটি আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হন। ১৯৯৬ সালের সাধারণ নির্বাচনেও এরশাদ সংসদে পাঁচটি আসনে বিজয়ী হন। ছয় বছর জেলে থাকার পর ১৯৯৭ সালের ৯ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের আমলে তিনি জামিনে মুক্ত হন।

২০০১ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এরশাদের জাতীয় পার্টি ১৪টি আসনে জয়ী হয়। এরপর ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের সঙ্গে মহাজোট গঠন করেন তিনি। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাঁর দল ২৭টি আসনে বিজয়ী হয়। এরপর দশম ও সবশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি সাংসদ হন। তিনি চলতি জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের নেতা ছিলেন।

আরও পড়ুন:
এরশাদের মৃত্যুতে বিদিশার আবেগঘন স্ট্যাটাস
রংপুরে এরশাদকে দাফনের দাবি
এরশাদের মরদেহ মঙ্গলবার রংপুরে নেওয়া হবে
এরশাদের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক
সাফল্য-ব্যর্থতায় এরশাদ বর্ণিল জীবনের অধিকারী: বি চৌধুরী 
এরশাদের মৃত্যুতে ফখরুলের শোক 
এরশাদের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত