৭ ফেব্রুয়ারি ১৬ ইউপি নির্বাচনে অন্তত ৬টি ইউনিয়নে ব্যাপক অস্ত্রবাজি ও সংঘর্ষ হয়। নিহত হন দুজন।
চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে অস্ত্রবাজির ঘটনার দুই মাসেও চিহ্নিত চার অস্ত্রধারী গ্রেপ্তার হয়নি। তাঁরা হলেন কামরুল আলম আজাদ ওরফে সুমন, শওকত হোসেন ওরফে শাখাওয়াত, মো. এজাহার ও মো. আবছার।
এর মধ্যে প্রথম তিনজন খাগরিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মো. আকতার হোসেনের ও অপরজন স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. জসিম উদ্দিনের সমর্থক। তাঁদের মধ্যে এজাহারের বাড়ি চন্দনাইশের দোহাজারীতে। বাকিরা সাতকানিয়ার খাগরিয়ার বাসিন্দা।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি সাতকানিয়ার ১৬ ইউপি নির্বাচনে খাগরিয়াসহ অন্তত ৬টি ইউনিয়নে ব্যাপক অস্ত্রবাজি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় নলুয়া ইউনিয়নে সহিংসতায় স্কুলছাত্র মো. তাসিব ও বাজালিয়া ইউনিয়নে আবদুস শুক্কুর নামের এক বহিরাগত নিহত হন। তবে সবচেয়ে বেশি অস্ত্রের মহড়া চলে খাগরিয়া ইউপির দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে। এ–সংক্রান্ত ছবি প্রথম আলোতে তখন প্রকাশিত হয়েছিল।
‘গণমাধ্যমে ছবি চলে আসায় সন্ত্রাসীদের অনেকে পালিয়েছে। আমাদের গ্রেপ্তার ও অস্ত্র উদ্ধারের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। অস্ত্র উদ্ধারও করা হচ্ছে।’এস এম রাশিদুল হক, চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার
এর মধ্যে আট অস্ত্রধারীকে চিহ্নিত করে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। চিহ্নিত আট অস্ত্রধারীর সাতজনই ছিলেন নৌকার প্রার্থী আকতার হোসেনের পক্ষে। অস্ত্রধারীদের মধ্যে চারজন ধরা পড়ে।
জানা গেছে, অস্ত্রসহ ছবি প্রকাশের পর ১৪ ও ১৫ ফেব্রুয়ারি পৃথক অভিযানে আকতারের প্রতিষ্ঠানের কর্মী নাছির উদ্দিন ও তাঁর সৎ ভাই মোহাম্মদ কায়েসকে র্যাব একটি বন্দুকসহ গ্রেপ্তার করে। এ ছাড়া ১৩ ফেব্রুয়ারি পুলিশ অভিযান চালিয়ে সামশুদ্দিন নিশান ও জয়নাল আবেদিনকে দুটি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করে। তাঁরা এখন কারাগারে। কিন্তু যে পরিমাণ অস্ত্র নির্বাচনের দিন প্রদর্শিত হয়েছিল, তা পুরোপুরি উদ্ধার করা যায়নি।
অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তার ও অস্ত্র উদ্ধার সম্পর্কে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এস এম রাশিদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘গণমাধ্যমে ছবি চলে আসায় সন্ত্রাসীদের অনেকে পালিয়েছে। আমাদের গ্রেপ্তার ও অস্ত্র উদ্ধারের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। অস্ত্র উদ্ধারও করা হচ্ছে।’
সাতকানিয়ার নির্বাচনে ব্যাপক সহিংসতা ও গোলাগুলির ঘটনার পর ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলিশ সুপার তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি সাতকানিয়ার নির্বাচনের আগে এবং পরে মোট ২৩টি মামলা হয় বলে উল্লেখ করেন। এর মধ্যে ১৬টি মামলা হয় ভোট গ্রহণের দিনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে। এসব মামলায় নির্বাচনের পরপর ৫১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
নির্বাচনের দিন খাগরিয়া গনিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র ও ৭ নম্বর ইউনিয়ন পরিষদ কেন্দ্র ঘিরে দুই পক্ষের মধ্যে প্রায় দুই ঘণ্টা গোলাগুলি চলে। এ ঘটনায় কেন্দ্র দুটিতে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়।
পরে গত ২১ মার্চ এই কেন্দ্র দুটিতে আবার ভোট গ্রহণ হয়। গণনা শেষে সব কেন্দ্র মিলে চেয়ারম্যান পদে আকতার হোসেনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়। আকতার বর্তমানে উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক।
স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. জসিম উদ্দিনও নির্বাচন–সংক্রান্ত দুটি মামলার আসামি। এর মধ্যে দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পার্থ সারথি চৌধুরীর ওপর ৬ ফেব্রুয়ারি রাতে হামলার ঘটনায় তিনি প্রধান আসামি। বর্তমানে তিনি পলাতক রয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ কাজে অবহেলা করছে, যার জন্য চিহ্নিত চারজনসহ আরও অনেক অস্ত্রধারী এখনো বাইরে রয়ে গেছে। এটা হতাশার। এই দায় তাঁরা এড়াতে পারেন না। আশা করব দ্রুত অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তার করা হবে।’আখতার কবির চৌধুরী, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রাম জেলার সম্পাদক
তবে অভিযানের নামে নিরীহ লোকজনকে হয়রানির অভিযোগও উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। নাম প্রকাশ না করে খাগরিয়ার কয়েকজন বাসিন্দা প্রথম আলোকে বলেন, অস্ত্র উদ্ধার ও অভিযানের নামে এলাকার নিরীহ লোকজনকে হয়রানি করা হচ্ছে। অথচ চিহ্নিত অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তারে কোনো উদ্যোগ নেই।
নিরীহ লোকজনকে হয়রানির বিষয়টি অস্বীকার করেছেন সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তারেক মো. আবদুল হান্নান। তিনি বলেন, চিহ্নিত অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তার ও অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চলছে।
দুই মাসেও চিহ্নিত অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তার করতে না পারায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রাম জেলার সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ কাজে অবহেলা করছে, যার জন্য চিহ্নিত চারজনসহ আরও অনেক অস্ত্রধারী এখনো বাইরে রয়ে গেছে। এটা হতাশার। এই দায় তাঁরা এড়াতে পারেন না। আশা করব দ্রুত অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তার করা হবে।’