১৯৯২ সালে কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে ছাত্রদলের কমিটি গঠিত হয়। এতে সভাপতি হন রুহুল কবির রিজভী এবং সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন এম ইলিয়াস আলী। প্রথম নির্বাচিত এই কমিটি গঠনের কয়েক মাসের মধ্যে ভেঙে দেওয়া হয়। এর ২৭ বছর পর আবার সরাসরি ভোটে ছাত্রদলের কমিটি হয় ২০১৯ সালে। সরাসরি ভোটে ছাত্রদলের সভাপতি হন ফজলুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক হন ইকবাল হোসেন। এই কমিটি কাজ করছে এক বছরেরও বেশি সময়।
অন্যতম বৃহৎ এই ছাত্র সংগঠনটির নেতারা বলছেন, ভোটে নির্বাচিত নতুন কমিটি সংগঠনের কাজে গতি ফিরিয়েছেন। সংগঠনকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে পেরেছেন। কিন্তু ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ ‘উপদলীয় কোন্দল’ এবং ছাত্রদল নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের একই ধরনের কোন্দলের কারণে ধুঁকছে সংগঠনটি৷ ফলে সাংগঠনিক কাজ পরিচালনা যেমন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি শিক্ষার্থীদের পক্ষে ছাত্রদলের ভূমিকা তেমন জোরালো হচ্ছে না।
নতুন কমিটি গঠনের দুই মাসের মাথায় ঘোষণা করা হয় সংগঠনের ৬০ সদস্যের আংশিক কমিটি৷ এই কমিটিতে পদ দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রাধান্য পেয়েছে আঞ্চলিক বলয়, পদ পেয়েছেন চাঁদাবাজ ও নিষ্ক্রিয়রাও৷ এই অভিযোগ সংগঠনের অনেক নেতা–কর্মীর। সংগঠনে নির্ধারিত পদ দেওয়ার ক্ষেত্রে ন্যূনতম যোগ্যতা ভঙ্গেরও অভিযোগ রয়েছে। আংশিক কমিটিতে পদবঞ্চিত নেতারা ২০১৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করে তাঁদের কুশপুত্তলিকা দাহ করেন৷ একটি অংশ ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তালাও ঝুলিয়ে দেয়৷
এই পরিস্থিতির মধ্যে আজ ১ জানুয়ারি ছাত্রদলের ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হবে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৭৯ সালের এই দিনে ছাত্রদল প্রতিষ্ঠা করেন।
সূত্রমতে, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলে এখন পাঁচটি পক্ষ (গ্রুপ) রয়েছে৷ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়া অন্য তিনটি পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক আমিনুর রহমান ও সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফ মাহমুদ৷ বিভিন্ন ইউনিট কমিটিতে ‘পদ ভাগাভাগির’ ক্ষেত্রে এই ‘গ্রুপিং’ সক্রিয় হয়ে ওঠে৷ প্রতিটি পক্ষ আবার সাবেক ছাত্রদল নেতাদের আশীর্বাদপুষ্ট৷ এই নেতাদের মধ্যে আছেন সংগঠনের সাবেক সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন, হাবীব–উন–নবী খান, আবদুল কাদির ভূঁইয়া, আজিজুল বারী ও আকরামুল হাসান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম (ফিরোজ)৷ অন্যদিকে সংগঠনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট হিসেবে বিবেচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখায় এখন মোট ছয়টি ‘গ্রুপ’ আছে।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন একে কোন্দল বলতে নারাজ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাত্রদলে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা আছে, দৃশ্যমান গ্রুপিংয়ে জড়ানোর সুযোগ নেই। প্রতিযোগিতা না থাকলে সংগঠন ঝিমিয়ে পড়বে।’
গ্রুপিংয়ের বিষয়টি স্বীকার করেছেন ছাত্রদলের সবচেয়ে শক্তিশালী পক্ষের নেতা হিসেবে পরিচিত কাজী রওনকুল ইসলাম৷ তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্রুপিং বিষয়টিকে আমি সমর্থন করি না৷ কাউকে যখন সংগঠনে কাজ করার স্পেস দেওয়া হয় না, তখনই গ্রুপিং হয়। আবার বিশেষ কিছু লোক ভালো কাজকে সহ্য করতে না পেরে গ্রুপিং করেন।’
ছাত্রসংগঠন হিসেবে শিক্ষার্থীদের অধিকার ও দাবিদাওয়ার পক্ষে সোচ্চার থাকার কথা থাকলেও এ ক্ষেত্রে ছাত্রদলের ভূমিকা জোরালো নয়। সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের ভরাডুবি হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আবাসিক হল বন্ধ রেখে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে সব ছাত্রসংগঠন এর বিরুদ্ধে শুরু থেকেই সরব হয়। কিন্তু তখন ছাত্রদলের কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ঘ ও চ ইউনিট বাতিলের প্রস্তাব নিয়েও ছাত্রদল নীরব ছিল। ছাত্রদলের প্রধান প্রতিপক্ষ ছাত্রলীগ করোনাকালে ছাত্রদের কাছ থেকে ‘উন্নয়ন ফি’ প্রত্যাহারের আহ্বান জানালেও ছাত্রদলের এ ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা ছিল না।
সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেনের দাবি, ভাবনা থাকলেও প্রতিকূল রাজনৈতিক আবহে সংগঠন পরিচালনা ও করোনা মহামারির কারণে তাঁরা অনেক কর্মসূচি করতে পারেননি।
সংগঠনের বিভিন্ন কমিটি গঠনের দিকেই এখন নজর ছাত্রদলের। সাধারণ সম্পাদক ইকবাল বললেন, ‘যুদ্ধের প্রাক্কালে’ সাংগঠনিক কাঠামো জরুরি। ছাত্রদলে এটি দুর্বল হয়ে গিয়েছিল। তিনি জানান, উপজেলা, কলেজ ও পৌরসভা মিলিয়ে ১ হাজার ৪০০–এর বেশি ইউনিট কমিটির কাজ প্রায় চূড়ান্ত। ঢাকা মহানগরের ১৫৭টি ওয়ার্ড কমিটির বেশির ভাগ করা হয়ে গেছে, বাকিগুলোর কাজও শেষ দিকে।