পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যতম আঞ্চলিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) ভেঙে আরও একটি নতুন দল গঠিত হয়েছে। আজ বুধবার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করা দলটির নাম ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক)। তারা দাবি করেছে, ইউপিডিএফ এখন আদর্শচ্যুত হয়ে পড়েছে।
নতুন দল গঠনের প্রতিবাদে ‘মাদক-সন্ত্রাস ও দুর্বৃত্ত প্রতিরোধ কমিটির’ ব্যানারে খাগড়াছড়িতে লাঠি মিছিল ও সমাবেশ করেছে ইউপিডিএফ। সমাবেশ থেকে আগামীকাল বৃহস্পতিবার খাগড়াছড়িতে সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধ ডাকা হয়েছে। ইউপিডিএফ বলেছে, নতুন দল যারা গঠন করেছে, তাদের আগেই দল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল।
১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। দুই দশকের সশস্ত্র লড়াই শেষে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস) এ চুক্তি করে সরকারের সঙ্গে। তবে মূলত এ চুক্তির বিরোধিতা করেই পিসিজেএসএসের ছাত্রসংগঠন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের বড় একটি অংশ ইউপিডিএফ সৃষ্টি করে ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বরে। এর নেতৃত্বে ছিলেন প্রসিত বিকাশ খীসা। দলটি গঠনের পরই জেএসএসএসের সঙ্গে তারা সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। ২০০৩ সালে ইউপিডিএফের প্রতিষ্ঠাতাদের দুজন কীর্তি শংকর চাকমা জাপানে এবং সঞ্চয় চাকমা সুইজারল্যান্ডে চলে যান। সে সময় দলটির আরও কয়েকজন নেতাও দলত্যাগ করেন।
আজ আবার পার্বত্য চুক্তিবিরোধী দলটি ভাঙনের মুখে পড়ল। আজ বেলা ১১টায় খাগড়াছড়ি জেলা সদরের খাগড়াপুর কমিউনিটি সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন গঠিত দলটি। এখানে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তপন জ্যোতি চাকমা।
সাংবাদিক সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, আন্দোলন পরিচালনার কৌশল সঠিক না হওয়ার কারণে ইউপিডিএফের অনেক নেতা-কর্মী দল ত্যাগ করেছেন। দল ত্যাগ করার অপরাধে অনেক নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। গঠনতন্ত্রে গণতান্ত্রিক উপায়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও এখন সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক, বলপ্রয়োগের রাজনীতি, চাঁদাবাজি, গুম, খুন, অপহরণ, স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের জাতীয় দিবস বর্জনের রাজনীতি করছে ইউপিডিএফ। ইউপিডিএফের এর এই অগণতান্ত্রিক কার্যকলাপগুলো বর্তমান সরকারের জানা থাকার পরও কোন স্বার্থের কারণে সরকার সহ্য করে যাচ্ছে।
সাংবাদিক সম্মেলনে বলা হয়, ‘ইউপিডিএফের অনেক নেতা এখন পকেট ভারী নেতা হিসেবে পরিচিত। মূল লক্ষ্য থেকে বিচ্যুতি হয়ে নীতিহীন, আদর্শহীন, লক্ষ্যভ্রষ্ট, দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। এসব অপকর্মের প্রতিবাদ করলে প্রতিবাদকারীদের আর্থিক দণ্ড ও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ইউপিডিএফের বর্তমান নেতৃত্ব জুম্ম (পাহাড়ি) জনগণ থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন।
সাংবাদিক সম্মেলন তপন কান্তি চাকমাকে আহ্বায়ক ও জলেয়া চাকমাকে সদস্যসচিব করে ১১ সদস্যের ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) নামে একটি নতুন দলের ঘোষণা দেওয়া হয়।
এদিকে নতুন গঠিত ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) কমিটিকে রাষ্ট্রীয় মদদে ‘নব্য মুখোশ-বোরকা বাহিনী’ আখ্যায়িত করে ‘মাদক-সন্ত্রাস ও দুর্বৃত্ত প্রতিরোধ কমিটি’ ব্যানারে খাগড়াছড়িতে লাঠি মিছিল ও সমাবেশ হয়। আজ সকাল ১০টায় শহরের স্বনির্ভর বাজার এলাকায় ইউপিডিএফের কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের আয়োজন করা। সমাবেশ বক্তব্য দেন ইউপিডিএফের খাগড়াছড়ি জেলা সংগঠক মাইকেল চাকমা, হিল উইমেন ফেডারেশনের জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক রেশমি মারমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কাজলী ত্রিপুরা প্রমুখ।
সমাবেশ শেষে লাঠি মিছিল বের হয়। মিছিলটি খাগড়াছড়ি স্বনির্ভর এলাকা বাজার থেকে বের করে শহরের চেঙ্গী স্কোয়ার গিয়ে আরেকটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সংক্ষিপ্ত সমাবেশে পিসিপি কেন্দ্রীয় সহসভাপতি বিপুল চাকমা জনগণকে ‘নব্য মুখোশ বাহিনীকে’ প্রতিহত করার আহ্বান জানান।
‘মাদক-সন্ত্রাস ও দুর্বৃত্ত প্রতিরোধ কমিটি’ খাগড়াছড়িতে সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধের ডাক দেওয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, এই কমিটির সদস্য ও ইউপিডিএফ-সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরা।
নতুন দল গঠন প্রসঙ্গে ইউপিডিএফের কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নিরন চাকমা বলেন, যাঁরা নতুন দল তৈরি করেছেন, মূলত তাঁদেরকে দুর্নীতি ও বিভিন্ন অপকর্ম করার জন্য দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অপকর্মের কারণে তাঁরা মূলত সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন ও গ্রামে যেতে পারেন না। এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে একটি বিশেষ বাহিনী তাদের নিয়ে নব্য মুখোশ বাহিনী তৈরি করে দিয়েছে। নিরন বলেন, এই নব্য মুখোশ বাহিনীকেও সাধারণ জনগণ প্রতিহত করবে। এরা চলে যাওয়ায় ইউপিডিএফের কোনো ক্ষতি হবে না। কারণ জনগণ তাদের সঙ্গে রয়েছে।