ঢাকা শহরের ১৫টি সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের হয়ে প্রথমবারের মতো দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন পাঁচজন। তবে একজন ছাড়া কারও প্রার্থিতাই এখনো চূড়ান্ত নয়। জোটের সমঝোতা ও আইনি জটিলতার কারণে বাকি চারজন নির্বাচনী দৌড় থেকে ছিটকে পড়তে পারেন বলে মনে করছেন দলীয় নেতা–কর্মীরা।
প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া এই পাঁচজন হলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাত, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের খান, যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী মনিরুল ইসলাম ও চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান ফারুক।
ঢাকা জেলার ২০টি সংসদীয় আসনের ৪ থেকে ১৮ নম্বর আসনগুলো পড়েছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায়। আসনগুলোর মধ্যে ৪ ও ৬ নম্বর আসনের বর্তমান সাংসদ জাতীয় পার্টির সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা ও কাজী ফিরোজ রশীদ। ঢাকা-৮ আসনের সাংসদ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। ১৭ নম্বর আসনের সাংসদ বিএনএফের এস এম আবুল কালাম আজাদ। এর আগে ২০০৮ সালের নির্বাচনে এই আসন থেকে বিজয়ী হয়েছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। আর ঢাকা–৭ আসন থেকে সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন হাজি মোহাম্মদ সেলিম। তিনি আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন। পরে আবার আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ১৫ আসনের মধ্যে বাকি ১০ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা সাংসদ নির্বাচিত হন। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে এই ১১ আসনের সাংসদদের মধ্যে জাহাঙ্গীর কবির নানক ছাড়া অন্যরা এবারও দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। জাহাঙ্গীর কবির নানকের আসনে এবার মনোনয়ন পেয়েছেন সাদেক খান। এই আসনে আওয়ামী লীগে বিকল্প কোনো প্রার্থী না থাকায় তাঁর মনোনয়ন অনেকটাই নিশ্চিত।
গত নির্বাচনের মতো এবারও ঢাকা-৪, ৬ ও ৮ নম্বর সংসদীয় আসনে দলীয় কোনো প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। তবে ঢাকা–১৭ আসনে এবার দুজনকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। দলীয় মনোনয়ন ফরম বিতরণের প্রথম দিনে ঢাকা-১৭ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান ফারুক। গত বুধবার তিনি রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র দাখিলও করেছেন। তবে এর আগে গত মঙ্গলবার এই আসনে আওয়ামী লীগ থেকে আবদুল কাদের খানকে প্রাথমিক মনোনয়ন দেওয়া হয়। তিনিও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, আসনটি থেকে আওয়ামী লীগের দুজনই চূড়ান্ত মনোনয়নবঞ্চিত হতে পারেন। কারণ, এই আসন থেকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদও মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টির সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করলে আসনটি এরশাদকে ছেড়ে দেওয়ার সম্ভাবনা আছে।
ঢাকা-৭ আসনে এবার আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন সাংসদ হাজি মোহাম্মদ সেলিম। অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে ২০০৮ সালে তাঁর ১৩ বছরের কারাদণ্ড হয়। হাইকোর্টে আপিলের পর ২০১১ সালে সাজা বাতিল হয়। দুদক রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বাতিল করে দেন ও পুনঃশুনানির আদেশ দেন। এখনো শুনানি চলছে। এ অবস্থায় তাঁর প্রার্থিতা বাতিল হতে পারে। এ শঙ্কা থেকে আসনটিতে আওয়ামী লীগের বিকল্প প্রার্থী হিসেবে রাখা হয়েছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাতকে। হাজি সেলিমের পাশাপাশি আবুল হাসনাতও মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
ঢাকা-৫ আসনের (যাত্রাবাড়ী ও ডেমরা) বর্তমান সাংসদ হচ্ছেন হাবিবুর রহমান মোল্লা। ২০০৮ ও ১৯৯৬ সালেও তিনি আওয়ামী লীগ থেকে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবারও তিনি দল থেকে প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছেন। তিনি রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র দাখিলও করেছেন। কিন্তু কৌশলগত কারণে এই আসন থেকে যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী মনিরুল ইসলামকেও মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। শেষ পর্যন্ত এই দুজনের মধ্যে একজন চূড়ান্ত দলীয় মনোনয়ন পাবেন।
প্রথমবারের মতো দলীয় মনোনয়ন পাওয়া সাদেক খান বলেন, ‘দল-মত নির্বিশেষে সবাই আমার জন্য কাজ করছেন। নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া সম্পর্কে আমি শতভাগ আশাবাদী।’