স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব বর্ষ উপলক্ষে আজ শনিবার ঢাকায় ‘বিজয় শোভাযাত্রা’ কর্মসূচি পালন করছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান হয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে গিয়ে শোভাযাত্রা শেষ করেন। এতে রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও তীব্র যানজটের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নগরবাসীকে রাস্তায় কাটাতে হয়েছে। কোথাও কোথাও দুই থেকে তিন ঘণ্টা বাসের মধ্যে বসে থেকে একপর্যায়ে হাঁটা শুরু করতে হয়েছে কাউকে কাউকে।
এই শোভাযাত্রা উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের আয়োজন করেন আওয়ামী লীগের নেতারা। বেলা দুইটায় তাঁদের এই সমাবেশ শুরু হয়। এর কয়েক ঘণ্টা আগে থেকেই বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে নেতা-কর্মীরা সেখানে আসতে থাকেন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘুরেই তাঁরা চলেন যান ধানমন্ডির দিকে।
শোভাযাত্রায় অংশ নিতে অনেকেই নিজ নিজ এলাকা থেকে বাস, ট্রাক, পিকআপ, ব্যক্তিগত গাড়ি ও মাইক্রোবাসে করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকায় যান। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসংলগ্ন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের (আইইবি) সামনে সমাবেশের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিজয় শোভাযাত্রা শুরু করেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন প্রমুখ।
শোভাযাত্রায় আসা বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মীর ভিড় ও সঙ্গে আনা যানবাহনের কারণে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও রমনা পার্কের আশপাশের সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে শাহবাগ এলাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতাল, বারডেম হাসপাতাল এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়তে হয়।
সরেজমিন দেখা যায়, দুপুরের আগে থেকেই মৎস্য ভবন এলাকার সামনে থেকে শাহবাগ পর্যন্ত মাওলানা ভাসানী সড়ক, শাহবাগ থেকে সায়েন্স ল্যাব পর্যন্ত শাহবাগ সড়ক, কাকরাইল মসজিদ থেকে মৎস্য ভবন পর্যন্ত কাকরাইল সড়ক, শেরাটন হোটেলের মোড় থেকে শাহবাগ পর্যন্ত সড়ক ও সায়েন্স ল্যাব থেকে ধানমন্ডির দিকে মিরপুর সড়কে যানবাহনের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
দীর্ঘক্ষণ যানজটে আটকে থাকার পরে যাত্রীদের রিকশা, সিএনজি ও বাস থেকে নেমে হেঁটে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হতে দেখা যায়। শোভাযাত্রা করতে গিয়ে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলার জন্য অনেকেই বিরক্তি প্রকাশ করেন।
৭০ বছর বয়সী নুরুল আমিন সকালে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে গিয়েছিলেন বারডেম জেনারেল হাসপাতালে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে দুপুরের পর ফিরতে গিয়ে বাস-রিকশা কিছুই পাননি তিনি। পরে বাধ্য হয়েই স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে হাঁটা শুরু করেন নুরুল আমিন। বেলা আড়াইটার দিকে রমনা পার্কের সামনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফেনী থেকে এসেছি। ফিরে যেতে ফকিরাপুল এলাকায় যেতে হবে। সেখান থেকেই বাস। কিন্তু যাওয়ার মতো কিছু না পেয়ে হেঁটেই রওনা দিয়েছি।’
শাহবাগ এলাকার বিএসএমএমইউ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছিলেন কুমিল্লার বাসিন্দা মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পল্টন এলাকা এক ঘণ্টার মতো বাসে আটকে ছিলেন। সেখান থেকে হাঁটা শুরু করেন। রাস্তায় শুধু মিছিল আর মানুষ। যাওয়ার মতো কিছু পাচ্ছেন না। প্রায় ৩০ মিনিট ধরে তিনি হাঁটছেন।
সকাল ৯টায় গাবতলী থেকে বাসে ওঠেন একটি আবাসিক হোটেলের কর্মী গোলাম মোহাম্মদ। কিন্তু বেলা ১১টার দিকে সায়েন্স ল্যাব পর্যন্ত পৌঁছানোর পরই তাঁর বাস আটকে যায়। বেলা দুইটা পর্যন্ত টানা তিন ঘণ্টা সায়েন্স ল্যাব এলাকাতেই যানজটে পড়ে গাড়ির মধ্যে বসে থাকেন তিনি। এরপর হাঁটা শুরু করেন।
বেলা তিনটার দিকে ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউশনের সামনে গোলাম মোহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সায়েন্স ল্যাব থেকে হেঁটে এলাম। রাস্তা বন্ধ, রিকশা-বাস কিছুই নেই। সবদিকে শুধু মিছিল আর মানুষ।’
শোভাযাত্রায় অংশ নিতে আসা লোকজন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে দলে দলে মিছিল নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের দিকে এগোচ্ছেন। শোভাযাত্রাটি শাহবাগ, কাঁটাবন, বাটা সিগন্যাল, এলিফেন্ট রোড ও সায়েন্স ল্যাব হয়ে যাচ্ছে।