কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ঘোষিত ফলের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক (সাক্কু)। তিনি বলেছেন, পরিকল্পিতভাবে তাঁকে এই নির্বাচনে হারানো হয়েছে।
আজ বুধবার রাতে কুমিল্লা জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে ভোটের ফল ঘোষণার শেষ পর্যায়ে এসে তুমুল হট্টগোল হয়। রিটার্নিং কর্মকর্তা ফল ঘোষণায় বিরতির কথা বললে প্রতিবাদ করেন বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত মনিরুল হকের সমর্থকেরা। ফল ঘোষণার দাবিতে ভোটের ফল ঘোষণা কেন্দ্রে অবস্থান নেন মনিরুল। পরে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আরফানুল হকের (রিফাত) একদল অনুসারী সেখানে গিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন। এতে ফল ঘোষণা কিছুক্ষণ বন্ধ রাখার পর আরফানুলকে বেসরকারিভাবে মেয়র নির্বাচিত ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী। মনিরুলের চেয়ে ৩৪৩ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী দেখানো হয়েছে আরফানুলকে।
এই নির্বাচনেও জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী মনিরুল হক প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘আমি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। আমার ফুফাতো ভাই কর্নেল (অব.) আকবর হোসেন বীর প্রতীক কুমিল্লা-৬ (সদর) আসনে পাঁচবার ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে জয়ী হন। আমি ওনার সব নির্বাচন করেছি। ১৯৭৯ সাল থেকে আমাদের পরিবার কোনো নির্বাচনে পরাজিত হয়নি।’
বিএনপির সঙ্গে দীর্ঘদিনের সংশ্লিষ্টতা থাকা মনিরুলকে এবার লড়তে হয়েছে দল ছাড়াই। নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় বিএনপি থেকে তাঁকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়। এমনকি নেতা–কর্মীদেরকে মনিরুল হকের সংস্রব এড়িয়ে চলারও পরামর্শ দেওয়া হয়।
এরপরে বিএনপি শিবির থেকেই আরেকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এই নির্বাচনে মেয়র পদে লড়েছেন। কুমিল্লা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মো. নিজামউদ্দিন কায়সার ঘোড়া প্রতীকে ২৯ হাজার ৯৯টি ভোট পেয়েছেন।
এই ফল ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মনিরুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন তার প্রথম পরীক্ষায় বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছে। ফলাফল ঘোষণা দেরি করে সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে পরিকল্পিতভাবে আমাকে হারানো হয়েছে। আমি এই ফলাফলের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেব।’
২০০৫ সাল থেকে কুমিল্লা নগরের উন্নয়নে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন মনিরুল হক। ওই বছর প্রথম কুমিল্লা পৌরসভা নির্বাচনে চেয়ারম্যান হন তিনি। এরপর কুমিল্লা সিটি করপোরেশন গঠিত হওয়ার ২০১২ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।
এবার বিএনপি স্থানীয় সরকার নির্বাচন বর্জন করায় মনিরুলের সামনে দল ও নির্বাচন—দুটির একটিকে বেছে নেওয়ার সুযোগ ছিল। নগরের উন্নয়নে কাজ করে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে মেয়র প্রার্থী হন তিনি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনিরুল লড়ছিলেন টেবিল ঘড়ি প্রতীক নিয়ে।