ভারতের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আবারও আসছে বিজেপি। আনুষ্ঠানিকভাবে ফল ঘোষণা না হলেও বিপুল ব্যবধানে এগিয়ে আছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট। ভারতের এই জাতীয় নির্বাচনের ফল কীভাবে দেখছে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। দলটির নেতারা বলছেন, তাঁরা মনে করছেন দ্বিতীয় মেয়াদে বিজেপি ক্ষমতায় আসায় ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের কিছু অমীমাংসিত বিষয়ে সুরাহা হবে। দলটি বলছে, গত ৫ বছরে বিজেপি ও দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক ভালোই ছিল। এবারও সেই যাত্রা অব্যাহত থাকবে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, জনগণের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আওয়ামী লীগ। যে কারণে জনগণ যাকেই ভোট দিয়ে জয়ী করবে, আওয়ামী লীগ তাকে স্বাগত জানাবে। বাংলাদেশে গত ১০ বছর ধরে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ, ভারতেও গত পাঁচ বছর ধরে বিজেপি ক্ষমতায়-যে কারণে সম্পর্কের জায়গাটি অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। তবে ভারতের বিরোধী দল কংগ্রেসের সঙ্গেও আওয়ামী লীগের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় আছে এবং তা বজায় থাকবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ প্রথম আলোকে বলেন, আগামীকাল দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সভা আছে। সভা শেষে দলীয়ভাবে ভারতের নির্বাচন নিয়ে কথা বলবে আওয়ামী লীগ। তবে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাসী, জনগণের ক্ষমতায় বিশ্বাসী ও জনগণের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। যেখানেই হোক, জনগণের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আওয়ামী লীগ। জনগণের সরকারের সঙ্গে কাজ করবে আওয়ামী লীগ।
বিজেপির ক্ষমতায় আসার বিষয়ে আওয়ামী লীগের একজন সাংগঠনিক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আওয়ামী লীগ সব সময় প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে বিশ্বাস করে। গত পাঁচ বছর বিজেপি রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিল। এ কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের জায়গায় উন্নতি হয়েছে। এবার সম্পর্ক আরও উন্নতি হবে এবং কিছু অমীমাংসিত বিষয়ে সুরাহা বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
আওয়ামী লীগের একজন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, ভারতের কংগ্রেসের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্কটা ঐতিহাসিক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময় থেকে এই সম্পর্ক। বঙ্গবন্ধু পরিবারের সঙ্গেও কংগ্রেসের পারিবারিক সম্পর্ক আছে। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই আওয়ামী লীগের জন্য কংগ্রেসের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা অনেক সহজ। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের পরাজয়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায়ই ওই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত সরকারকে দায়ী করেন। আর ওই সময় ভারতে বিজেপি ক্ষমতাসীন ছিল। তবে এই নেতা বলেন, বিজেপি এখন রাজনীতির চেয়ে রাজনৈতিক অর্থনীতিকে গুরুত্ব দেয় বেশি। নরেন্দ্র মোদিও ব্যবসা-বান্ধব বলেই সবাই জানেন। গত ৫ বছরে বিজেপির সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও ভারতের বিজেপির রাজনীতিকদের সঙ্গে বোঝাপড়ার সম্পর্ক রয়েছে। ফলে বিজেপি আবার ক্ষমতায় আসায় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে এখন যে সম্পর্ক তাতে টানাপোড়েনের সম্ভাবনা নেই বলেই মনে করছি।
ইতিমধ্যে লোকসভার ৫৪২টি আসনের সব কটি আসনের গণনার চিত্র তুলে ধরে এনডিটিভি বলেছে, ৩৪০টি আসনে এগিয়ে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট। আর এখানে বিজেপি একাই ২৭৫টি আসনে এগিয়ে আছে। ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিজেপি ২৮২টি আসনে জয় পায়, এবং লোকসভার ৫৪৩টি আসনের মধ্যে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট ৩৩৬টি আসন পেয়েছিল।
এ ছাড়া এবারের নির্বাচনে বিরোধী কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোট ৯৩ আসনে এগিয়ে। অন্য বিরোধী দলগুলো এগিয়ে আছে ১০৯ আসনে। কংগ্রেস ভোট লড়াইয়ে পিছিয়ে থাকলেও আগেরবারের চেয়ে ৪১টি আসনে এগিয়ে আছে।
ভারতের লোকসভা নির্বাচনে কোন দল জিতবে, এটি নিয়ে এবার এক ধরনের ধোঁয়াশা ছিল। এর পেছনে কারণ ছিল বিজেপি সরকারের কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ও অঙ্গীকার পূরণে ব্যর্থতা।